সরাইল নামটা কেমন না? একটা এ-কার লাগাইলে হয় সরাইলে। কি সরাইলে? সরাইলে আমার বন্ধুর বাড়ি। ট্রিপিক্যাল ভ্রমন বলতে যা বুঝায় তা নয়- সেই বন্ধুর বিয়েতে গেসিলাম কয়েকদিন আগে। সরাইল হলো ঢাকা-সিলেট রোডের মাঝামাঝি ব্রাহ্মবাড়িয়া জেলার একটা উপজেলা।
যে বন্ধুর বিয়েতে গেসিলাম তার নাম নাজিম, বউ আদর করে ডাকে জিম। (গোপন কথা ফাঁস করে দিলাম।) তার একটা অসাধারণ গুন হলো- যেকোন কথা দিয়া জোকস বানাইয়া ফেলে। বেশির ভাগ জোকসের শুরু এইভাবে- ‘এক লোক অনেকদিন পর বিদেশ থেকে আসল…’। মজার বিষয় হলো সরাইল গিয়া আমি প্রায় সবার কথায় মজা পাচ্ছিলাম। তখন মনে হলো- একেকটা অঞ্চলের একেক টোন আছে। নাজিমের এই মজার করার ভেতর তার গল্প বলা অবশ্যই বড়ো গুন তার সাথে আঞ্চলিক টোন বড়ো সাপোর্ট দেয়। হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
নতুন আরেকটা অভিজ্ঞতা হলো- ঢাকা থেকে ব্রাহ্মবাড়িয়া ট্রেনে দাড়িয়ে গেসি। চারদিনের ছুটি অথবা পরের দিন ছুটি- যেকোন কারণে মুড়ির টিনের মতো অবস্থা। পা ফেলাই মুশকিল। এর মধ্যে সারাক্ষণ দেখলাম লোকজন পোটলা-পুটলি নিয়ে এদিক থেকে সেদিক আসা-যাওয়া করছে। মনে হচ্ছে সারাটা সময় ট্রেন দাড়িয়ে আছে। দুই ঘন্টা পরেও শুনি অনেকে নাকি কম্পাটমেন্ট খুজে পায় নাই। গাড়ীর সমস্যায় চিটাগং থেকে মোস্ট এক্সপেকটেট দুজন আসতে পারে নাই। ট্রেন থেকে স্ট্রেশনে নেমে টের পেলাম হাটুতে বিজাতীয় ব্যথা। এই অবস্থায় শহরে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি আরাম পেলাম। খুব ক্লান্ত থাকলে আমার আবার ঘুম আসে না। যথারীতি সেদিন রাতে ঘুম আসে নাই- গল্প করে কাটাইছি। বিয়া বাড়িতে প্রজেকটরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলা দেখে সবার মন বেশ আদ্র ছিলো।
সরাইলে ভয়াবহ পানির সমস্যা। শ্যালো পাম্প দিয়ে সেচ দেয়ার কারণে পানির স্থর নেমে গেছে। বাড়ির গভীর নলকূপে পানি উঠে না। সবার গোসল আর দরকারী কাজের পানির যোগান এই সেচ পাম্প। এই অবস্থা দুই মাস থাকবে। মানে পুরো গ্রীষ্ম কাল পানির ক্রাইসিস চলবে। একদিন গোসল করে আসলাম ভোর পাচটায়। যদি দিনে বিদ্যুত না থাকে। সারাদিন হাত-মুখ না ধোয়ার কারণে অন্য আরামগুলো হারাম হইছে কিঞ্চিৎ। দুনিয়ার অন্যান্য দেশ যেখানে প্রাকৃতিক পানির ভান্ডার পারত পক্ষে খরচ করে না- সেখানে আমরা যত্রতত্র সেই পানি তুলে নিচ্ছি। অন্যদিকে উপরের পানি দুষিত করছি। আবার বাধ দিয়ে পানি নিয়ে যাচ্ছে পাশের দেশ। এখনো আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলতেছেন- ক্ষতি হলে টিপাইমুখ বাধ দিতে দিবেন না। ক্যয়া বাত!
সরাইল বললে লোকে একবাক্যে সরাইলে কুকুরের কথা বলে। শুনেছি এই কুকুর RAB’র কুকুর হচ্ছে। এগুলোকে সরাইলের গ্রে-হাউন্ড বলে। এই সম্পর্কিত একটি লিংক নিচে দেয়া হলো। আর্থার কোনান ডয়েল’র উপন্যাস হাউন্ড অব বাস্কারভিলেন কথা মনে আছে কি। রাস্তা ঘাটে অনেক কুকুর দেখেছি। তবে এইগুলো সেই বিখ্যাত কুকুর না। তবে লড়াইয়ের মোরগ দেখেছি। এগুলির নাম হাসলি মোরগ। মোরগ লড়াইয়ে ব্রাহ্মবাড়িয়ার বেশ খ্যাতি আছে। মোরগ লড়াইকে এখানে সৌখিন কাজ হিসেবে দেখা হয়। এখানে রাস্তা ঘাটে ভেড়া দেখলাম অনেক। মনে হলো এদিকে ভেড়ার চাষ ভালোই হয়।
পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে কিনা না জানি প্রচুর মাছি দেখলাম। দোকান-পাট বিয়ে বাড়ী সব জায়গায়। বিশেষ করে মিষ্টির দোকানে মাছির মচ্ছব দেখে মিষ্টি খাবার ইচ্ছে উবে গেছে। দোকানিরা মাছিকে কিছু বলে না- যখন ইচ্ছে আসছে আর যাচ্ছে। যাকে বলে হরিলুট থুক্কো মধুলুট।
কনের বাড়িতে যেতে মাইক্রোবাসে প্রায় চল্লিশ মিনিট লাগলো। এই চল্লিশ মিনিট দুইপাশের দৃশ্য দেখে ভালোই কাটল। বিশেষ করে বিশাল বিল দেখে। বর্ষায় এই জায়গাকে নাকি কক্সবাজার বলে- মাঝখানে রাস্তাটা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। এক বন্ধুর ভাষায় রাস্তাটা বেকুবের মতো পড়ে আছে। সে দৃশ্য নিশ্চয় খুবই অপূর্ব। কিছু খাল দেখলাম। পানি কম। নৌকা পড়ে আছে শুকনো ডাঙ্গায়। আদিগন্ত ফসলের মাঠ। এমনিতেই এতো সুন্দর। ফটোগ্রাফির দারুন সাবজেক্ট মনে হলো। এটা পড়ছে নাছির নগর উপজেলায়। সরাইলের পরের উপজেলা। এই বিলের পরের হবিগঞ্জ জেলা।
টিপস: আপনার ভ্রমনের জায়গাটা যত কাছেই হোক না কেন কয়েকদিন আগেই যাতায়াতের ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। তা নাহলে সামান্য তথ্য ঘাটতির কারণেও আপনার যাওয়া আটকে যেতে পারে। এবার দুজনের তাই হয়েছে। যাওয়ার আগে কোথায় কি দেখার আছে খোজ নিয়ে নিন। এখনতো প্রতিটা জেলা নিয়া সরকারী ওয়েবসাইট আছে। সেখানে ঢু মারতে পারেন।
যাওয়ার ব্যবস্থা: ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের ট্রেনে (সুবর্ণ ছাড়া) যেতে পারেন। এছাড়া ব্রাহ্মবাড়িয়া ও আখাউড়াগামী দুটি ট্রেন আছে। এই ট্রেনগুলো একদিন ছুটি ছাড়া হপ্তায় ছয়দিন ছাড়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সাইট দেখতে পারেন।
বাসে যেতেন পারেন। তিশা ও সোহাগ (এসি) পরিবহন ছাড়ে ঢাকার কমলাপুর থেকে। বিআরটিসি (এসি/নন এসি) আছে, তবে কোত্থেকে ছাড়ে জানি না। চট্রগ্রাম থেকে যেতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের ট্রেনে (সুবর্ণ ছাড়া) যেতে পারেন। দিনে দুটো বাস ছাড়ে কদমতলী থেকে।
………………………………………………………………………………………………………………
[slideshow]
ক্লাসের অন্যান্য কন্ধুদের উদ্দেশ্য করে এই লেখা। তবে তাদের বাইরে আরেকজনকে স্মরণ করছি- কাঊসার রুশো। ভ্রমনের কথা বললেই বলে থাকেন- ডিটেইলস জানায়েন। আশা করছি এই পোষ্ট সেমি-ডিটেলস হইছে। তার ভালো লাগবে।
সরাইলের গ্রে হাউন্ড কুকুর ও হাসলি মোরগ নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন:
সরাইলের গল্পের পর্দা ভালোই সরাইলেন 🙂
শুকরিয়া।
valo laglo…
শুকরিয়া। তোমারে মিস করছি।
ভালো লাগলো , ফ্রি তে সরাইল ভ্রমণ ও হয়ে গেল ।
আপনার কথাটা শুনে শান্তি পেলাম। ধন্যবাদ।
অনেক দিন আবার পড়লাম পোস্টটা। 🙂
মেনি মেনি থ্যাংকস। কিছু কিছু বিষয় নাকি ভিনভাষায় প্রকাশ না করলে জোরালো হয় না!!! 🙂