কাউসার রুশো: সব ধর্মই নাকি মানবতার কথা বলে। কিন্তু যারা ধর্মকে পুজি করে ব্যবসা করে তারা সেটা সবসময়ই ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে। সে মতে বলা হয়, যুগে যুগে ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষের নানাবিধ ক্ষতি সাধন করে গেছে। এসব থেকে মানুষ শুধূ নিজের জীবন দিয়েই নিস্তার পায়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিলো আরো অনেক গভীর এবং অনেক বেশি মর্মান্তিক। আলোর পথের দিশারী নামধারী ধর্মব্যবসায়ীরা আমাদেরকে ক্রমাগত ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার গুহায়। আর আমরা ভোদাইয়ের দল কার্যকারন না খুজে সেটা অন্ধের মত বিশ্বাস করে যায়।
ওয়াহিদ সুজন: ধর্ম যে মানবতার কথা বলে সেটা তো আজকাল সেক্যুলাররাও বলে। তারা অবশ্য কোরান হাদিস নিয়াও দৌড়াদৌড়ি করতেছে পাবলিক স্পেসে। তারা ধর্ম নিয়া আর প্রাইভেট স্পেসে বসে নাই।
হাইপোশিয়া (এই উচ্চারণ সম্ভবত সহি না) কে ছিল বা কি কি তার গুণপনা- তা নিয়ে কথা বলছি না। দুই এক কথা বলব তাকে কেন্দ্র করে নির্মিত স্পেনিজ-ইংলিশ মুভি ‘আগোরা’ (এগোরো,২০০৯) নিয়ে। চমৎকার একটা মুভি। পরিচালনায় আলেকজেন্দ্রো আমেনাবার। যা দেখার পর বেশির পরিচিতজনরা বলছে- দেখো নিষ্পাপ বিদুষী এই নারী কি না অবিচারের স্বীকার হইছেন। তাও ধর্মের নামে। হাইপোশিয়া বিদুষী হতে পারেন। যেহেতু গণিত, দর্শন, জ্যোর্তিবিজ্ঞান আর কথার মারপ্যাচ জানতেন। আমি তাকিয়ে ছিলাম নায়িকা র্যাচেল ওয়াইজের দিকে। মহিলা কি চমৎকার দেখতে।
বছর দুই আগে খুব জ্বরে পড়ছিলাম। কয়েকদিন ঘুমাতে পারি নাই। এই অবসরে (বিপদে!) ‘আগোরা’ মুভিটা দেখেছিলাম। দেখেছিলাম ‘জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা’। এরও কয়েকবছর আগে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে ট্রেনে চালর্স কিংসলের ‘হাইপোশিয়া’ উপন্যাসটার অনুবাদ পড়েছিলাম। দুটোর অভিজ্ঞতা- অসম্ভব মন খারাপ হলো। এর মধ্য দিয়ে অসাধারণ এক নারী উদ্ভাসিত হলেন।
মুভির কথা উঠলে মানবতার কথাও চলে আসে। অন্তত আমার চোখ-কান যা উপলব্দি করছে আরকি!মানবতা কথাটার মধ্যে ধোয়াশা আছে। এটার কি মানে দাড়ায় তা জানি না- তবে মানবতার সাথে বোধহয় মানবতাবাদের সম্পর্ক আছে। সেখানে মানবতাবাদ কখনো ধর্মীয় জিনিস না- কেউ যদি এই দাবি করেন তবে তা ভুল। কেন না, মানবতাবাদ দুনিয়ার সবকিছুর কেন্দ্রস্থলে মানুষকে বসায় (যা ধর্মের উল্টো) এবং তার কর্তৃত্ব মেনে নেয়। এখানে অন্য মাকলুকাতের স্থান মানুষের অধীনতার। ধর্মকে দুনিয়াবী কুলষতার বাইরে কল্পনা করার মধ্যে ভুল আছে। ধর্ম তখনই ধর্ম হয়ে উঠবে যখন শর্তহীনভাবে আল্লাহর অনুভব দিতে পারে। কারণ কর্তৃত্ব যখন মানুষের হাতে থাকে তখন ঈশ্বরের ইচ্ছেয় যে মানুষের ইচ্ছে হয়ে উঠবে- এটা ঠিক নাও হতে পারে। হাইপোশিয়া তো বিজ্ঞানের নিয়ম জানতেন। ধার্মিকরা বলেন আল্লাহ সেই নিয়মের ব্যতায় ঘটান না। সেই জরুরত তখন ইতিহাস দিয়ে নির্ধারিত হয়।
আমি বলব হাইপোশিয়াও কিন্তু নিজ ধর্মের বলী। তিনি প্যাগান ধর্মীয় ঐতিহ্যের সর্বশেষ উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি প্যাগান ধর্ম ও বিজ্ঞানের মাধ্যমে খৃষ্টান ধর্মকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। ক্ষমতার ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল খৃষ্টানরা। এটা তাদের রাজনৈতিক উম্মেষের কাল। তখনো ইহুদীদের ত্রাহি অবস্থা। তিনি কিসে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তিনি তা বিলকুল জানতেন। তিনি নিজের পরিণতি বুঝেন নাই- এটা ভাবলে তাকে খাটো করা হবে। তিনি হয়তো অস্ত্রের বিরুদ্ধে অন্য কিছু দিয়ে যু্দ্ধ করেছেন। অসি আর মসির দ্বন্ধ সর্বদায় ছিল। তার জ্ঞানের ভেতর যে অহংকার ছিলো সেটা কিন্তু কথিত ধর্মান্ধদের আবেগ বা ভালোবাসাকে (স্বধর্মের প্রতি) বক্তৃতার মধ্য দিয়ে কটাক্ষ করেছেন। এর ফল নিশ্চয় তার জানা ছিলো। তবে, খৃষ্টানদের নিষ্ঠুরতার ভেতরকার ধর্মীয় প্রণোদনা অনেকটা ক্ষমতার লোভ ও শঠতা। উপরিভাবে আমরা তাই জেনেছি। তবে এটা ঠিক যে যেকোন ক্ষমতা ক্ষমতা হয়ে উঠার পরই তার নায্যতা দেখায়। (খৃষ্ট ধর্ম নিয়ে খুব বেশি জানি না)
সেই যুদ্ধে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু পরাজিত হন নাই (লোকে এমনই বলে)। হাইপোশিয়া নিজে নিয়তির মতো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছেন। আমার তাই মনে হয়। হাইপোশিয়ার সামনে অস্ত্র না থাকার সমস্যাও। যে যার মতো যুদ্ধ চালিয়ে গেছে।
এমন সব নিরাসক্ত কথা বললেও হাইপোশিয়ার কথা ভাবলে মন আর্দ্র হতে বাধ্য।