আধুনিক দর্শন যার হাতে পয়দা হইছে বলা হয়, সেই দার্শনিক রেনে দেকার্টের ‘মেডিটেশন অন ফার্স্ট ফিলোসফি’ প্রকাশ হইছিল ১৬৮৫ সনে। সে তুলনায় ইনসেপশান নামক মুভির পয়দা এই তো সেদিন (২০১০ সন)। এই মুভির গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান সেই ২০০১ সনে আশি পৃষ্টার গল্প নিয়া হাজির হন ওয়ার্নার ব্রাদার্সের দরোজায়। তখন সেটা ছিলো হরর কিসিমের কাহিনী। নোলান ভাবেন জিনিসটা আরো ঘন হইতে হবে। এই ঘনীভূবনের পক্রিয়ার পর সেই মুভির পয়দা হলো ২০১০ সনে। এই মুভিতে তিনি যা আবিষ্কার করতে চাইছিলেন- “the idea of people sharing a dream space…That gives you the ability to access somebody’s unconscious mind. What would that be used and abused for?” (নোলানের সাক্ষাৎকার থেকে) যদিও নোলানের চিন্তা আমাদের মন থেকে কেউ কিছু চুরি করতে পারে কিনা বা পুতে দিতে পারে কিনা- কিন্তু আমরা দেখব তিনি হাত দিয়েছেন পশ্চিমা চিন্তার গোড়ার জায়গায়।
ইনসেপশানে দর্শক যা আবিষ্কার করছেন এইকালে, মহান দেকার্ট তা তিনশত বছর আগে তার সেই বইয়ে হাজির করেছিলেন। যার সিলসিলা দর্শনের এইকালেও বিদ্যমান। ইনসেপশানেও সেই মুসিবিদা দেখা দেয়- যদিও শেষ পর্যন্ত তার মীমাংসাও ঝাপসা। আপনে যদি পুবে মানে আমাদের চিন্তকদের আলোচনা দেখেন (ফকির লালন) সেখানে কিন্তুক এই গ্যাড়াকল নাই। আমার থাকাকে এইভাবে সন্দেহ দিয়া ব্যাখ্যা করতে হয় না।
এতো বছরেও যদি একটা প্রশ্নের মীমাংসা না ঘটে প্রশ্ন তোলা যায়- এই প্রশ্নটা সঠিক কিনা। সেই বিষয় মুলতবি রেখেও এই আলোচনায় মন চাইলে সক্রেটিস, প্লেটোকেও টানা যায়। ফিলোসফি নাউ পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যায় হিথার রিভেরা নামের নিউইয়র্কের এক গ্রাজুয়েট ক্লাসের ছাত্রএই মুভি নিয়ে কথা তুলেছেন। আমরা এখানে তার মত অনুসরণ করে দেকার্টে সীমাবদ্ধ থাকব।
সে পুরানা কথা- আপনি কি ঈমান নিয়া কইতে পারেন আপনি স্বপ্নে মইধ্যে নাই,এটা কইতে পারেন যদি দেখাইতে পারেন আপনি এতক্ষন ঘুমাইয়া ছিলেন- এখন জেগে আছেন। কখনো কখনো স্বপ্নের মধ্যেও আপনি স্বপ্ন দেখেন, এটা এমন জাতের ঘুম যেখানে চোখের পাতা পিটপিট করে। (Rapid eye movement).
সকল সন্দেহকে দূর করে দেকার্ট নিশ্চিত হতে চাইছিলেন আমরা জেগে আছি না স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু নানা কারণে সংশয় থেকেই যায়। যেহেতু মুভির আলোচনা- বিস্তারিত না গিয়ে এতটুকু বলা যায় এই চিন্তা তাকে পাগল মতন করেছিলো। যদি কোন খারাপ দৈত্য বা দেবতা আমাদের ঘুম পাড়িয়ে অবাস্তব জগতকে সত্য বলে দেখায়- তাহলে দুনিয়া আসলে কি রকম অথবা আমার বাস্তব হাল কি, তা কখনো জানতে পারব না। এই চিন্তা যদি আমার বিশ্বাসে কড়া নাড়ে, তাইলে সবচেয়ে খারাপভাবে আমার অস্তিত্বকেও নাড়িয়ে দেয়। আসলে কি আমি আছি! এই প্রশ্ন যার পকেটে থাকে তার কাছে নিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ এবং বেচে থাকার সবচেয়ে বড়ো প্রনোদনা হয়ে দাড়ায় (যেটা এখনো অর্জিত হয় নাই)। এই সব চিন্তার মাঝে দেকার্ট দেখতে পান যতই ভুল করি না কেন অথবা প্রবঞ্চিত হয়- দেখা যাচ্ছে আমরা পুরো বিষয়টা (বাস্তবে/স্বপ্নে আছি) চিন্তা করছি।
যদি ব্যাপারটা তাই হয়- তাহলে চিন্তাকারীকেও চিন্তা করার জন্য থাকতে হবে। স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার নিয়ে এই সমস্যার দেকার্ট বলতেছেন, ‘our memory can never connect our dreams with each other and with the course of life, in the way it is in the habit of doing with events that occur when we are awake’. তাহলে আমি স্বপ্ন দেখছি এটা নিশ্চিত হতে হলে আমাকে জাগতে হবে। সে স্বপ্ন আর বাস্তবতাকে আলাদা করে বলবে ‘আমি স্বপ্ন দেখছি না’। কিন্তু ইনসেপশান কি সেই পথে হেটেছে!
কিছু জায়গা ছাড়া ‘ইনসেপশান’ দেকার্টের স্বপ্ন সমস্যার সমাধানের যুক্তিকে বাতিল করে দিয়েছে। ডম কভ স্বপ্ন দেখছে এবং সে স্বপ্নের মধ্যেই সচেতন- স্বপ্ন দেখছে। সুতরাং, এই সিনেমায় এটা বলা অসম্ভব যে আপনি কখন স্বপ্ন দেখছেন আর কখন দেখছেন না। যেহেতু স্বপ্ন দেখলেও আপনি সচেতন। এই সচেতনতা কি বাস্তবতা নয়? যদিও এখানে আপনি অদ্ভুত অসম্ভব সব সিড়ি দেখতে পাবেন- যেগুলো ৯০ ডিগ্রী বরাবর খাড়া এবং একর পর এক চক্রাকারে উঠে গেছে। এগুলো একজন মানুষ অতিক্রম করতেই থাকবেন- যেটা শেষ হবার না!
দেকার্টের মতে, যা আমরা দেখি নাই তা স্বপ্নে আসতে পারে না। এই মুভিতেও স্বপ্নদেখওনেওয়ালা স্বপ্নের দুনিয়া বা লেভেল শেয়ার করে- যেখানে সবসময় তার পরিচিত জায়গাগুলো টুকরা টুকরা স্মৃতির তালাশ দেয়। সন্দেহ বাতিকগ্রস্থ বলে সুনাম বা দুর্নাম কুড়ানো দার্শনিক ডেভিড হিউম An Enquiry Concerning Human Understanding (1748) বইয়ে বলছেন, যা আমাদের চিন্তার মধ্যে নাই, সেইরকম বিশুদ্ধ কিছু আমরা বানাতে পারি না। এগুলো আমাদের অভিজ্ঞতা আর ধারণার যোগাযোগ মাত্র। আমরা সোনার পাহাড়ের কথা বলতে পারি। যা স্রেফ আমরা অভিজ্ঞতার স্বর্ণ আর পাহাড়ের যোগফল। এইভাবে ইনসেপশানে স্বপ্ন দেখনেওয়ালা বাস্তবে দেখা শহর,বাড়িঘর- এমন কি ল্যাম্প পোষ্ট, পুরানা প্রতিবেশী দিয়ে স্বপ্ন নির্মাণ করছেন। এই মুভির একটি চরিত্র বলছে, আমরা যা জানি তার উপরই এইসব নির্মান করছি।অন্যদিকে, দেকার্ট জানাচ্ছেন সংশয়ের রাজ্যে আমরা একমাত্র আমাদের চিন্তা নিয়ে নিশ্চিত হয়। কিন্তু ইনসেপশানে আমরা শেষ পর্যন্ত কি নিয়ে নিশ্চিত হই? এছাড়া নোলান আর দেকার্টের মধ্যে একটা বড়োসড়ো ব্যতিক্রম আছে। সেটা হলো খোদার জ্ঞান। দেকার্ট সংশয়বাদ হতে বের হবার জন্য খোদাকে ব্যবহার করেন। দেকার্ট জেনেছেন তিনি খোদার ব্যাপারে সচেতন, যদিও তিনি নিশ্চিত না কেমনে এই ধারণাটা মন পাইল। কিন্তু বলতেছেন খোদার জ্ঞান মানুষের সহজাত। এখানে ইনসেপশানের সাথে দেকার্টের বড়ো ধরণের ঠোকাঠুকি লাগে। তাই একই রাস্তায় গিয়া দেকার্ট বলতেছেন, আমি সমাধান পাইছি। অন্যদিকে ইনসেপশান কই ‘চলো চরকির মধ্যে ঘুরপাক খাই’। এটা কি যৌক্তিক খোদা না-থাকার অসুবিধা! হতে পারে।
ইনসেপশান মানে হলো কারো অজ্ঞাতে তার মনে কোন একটা আইডিয়া পুতে দেয়া।কভের মতে যার মনে পুততে হবে সে যদি গভীর ঘুমে থাকে তবে তার মনে পুতে দেয়া চিন্তাকে নিজের মনে করবে। অথচ এটা স্বপ্নের মাঝে কেউ বুনে দিয়েছে। অর্থ্যাৎ এখানে স্বপ্নের জগতে দুইজন মানুষ বা একাধিক মানুষ থাকে। তাদের পক্ষ দুইটা। এক পক্ষ স্বপ্ন রোপন করে। অপর পক্ষ নিজের চিন্তা মনে করে প্রতারিত হয়। যদি ঘটনাক্রমে সেই স্বপ্নের কথা স্মরণ করতে পারে বিশ্বাস করতে বাধ্য এটা তার নিজের চিন্তা।
কভ নিজের স্ত্রীর উপর এই ইনসেপশন প্রয়োগ করেছিল। একটা স্বপ্নে যেখানে চেতনের জগতের মিনিট বা সেকেন্ডের সমান দৈঘ্যে এক একটা দিন কেটে যাচ্ছিল- এক ছুটির দিকে কভ ও তার স্ত্রী এই সময়ের স্বপ্নে আটকে গেলেন। স্বপ্নের জগতে হিসেবে সেখানে পঞ্চাশ বছর কেটে গেলো। ফলাফলস্বরুপ এই জগত থেকে বের করে হতে হবে। দুভাগ্যজনকভাবে কভ ও তার স্ত্রী মল যখন স্বপ্ন থেকে বাস্তব জগতে ফিরে এলো, মল বিশ্বাস করল এই জগত বাস্তব নয়। এই স্বপ্ন ভেঙ্গে বাস্তবে ফিরে যেতে হলে নিজেকে খুন করতে হবে। নিজেকে আত্মহত্যা করে। কিন্তু কভের স্বপ্নের জগতে সে সবসময় ওতপেতে থাকে।
এই ধরণের সিনেমা বিরল নয়। ওয়াস্কি ভাইদের দ্যা ম্যাট্রিক্স ট্রিলজিতে আমরা কম্পুটার নিয়ন্ত্রিত জগতের সন্ধান পাই। যেখানে পৃথিবীর মানুষের কৃত্রিম অভিজ্ঞতাকে সত্য মনে করে। যেখানে মিশেল ফুকো আর জাঁ বদ্রেলরের সামাজিক নিয়ন্ত্রন তত্ত্বের প্রভাব আছে। ইনসেপশান সেখান থেকে আলাদা কিছু। নোলানের মুভির সাথে মিল পাওয়া যায় গিলেস ডেলুজ এবং ফেলিক্স গুত্তারির চিন্তার।
ইনসেপশানের ঘটনা কি বাস্তবে সম্ভব? যখন কেউ ঘুমিয়ে থাকে- তাদের মনে কি এভাবে ধারণা পুতে দেয়া সম্ভব? কেন নয়? আমরা যখন জেগে থাকি, তখনও আমাদের মনে বিভিন্ন আইডিয়া পুতে দেয়া সম্ভব। যেটা আমাদের নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে। বিভিন্ন মার্কেটিং কোম্পানীগুলো যেভাবে জিনিসপত্র মানুষকে গছিয়ে দেয়- এটি ভালো উদাহরণ হতে পারে। আমরা জেগে থাকলে যা সম্ভব সেটা ঘুমন্ত অবস্থায় সম্ভব হবে না কেন? যদি ঘুমন্ত কেউ আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, তবে তার মনে কোন ধারণা পুতে দেয়া যাবে না কেন?আপনি তখন তাকে যে কথা বলবেন সেটা তার স্বপ্নের অংশ হয়ে যাবে।যখন সে জেগে উঠবে- ভাববে স্বপ্নের মধ্যে দারুন একটা আইডিয়া পেয়ে গেছে। এই রাস্তায় চিন্তা করলে মনে হবে জিনিসটা সম্ভব কিন্তু এই মুভি যেভাবে বলে সেভাবে নয়।
[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=66TuSJo4dZM]পুরানা সওয়াল ফিরেই আসছে, কেমনে বাস্তব থেকে স্বপ্নকে আলাদা করি? এই প্রশ্নটাও মাথায় পুতেঁ দিসে এই মুভি। কেন শেষ দৃশ্যে এসে আবার সন্দেহ করতে হয় কভ বাস্তবে বা স্বপ্নে আছে। এখানে বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে অভিন্ন রেখা দেখা দেয়- ভাবছি সে স্বপ্নে আছে বা নাই।এই মুভির প্রধান চরিত্রের কাছে আছে ‘টোটেম’ (লাটিম জাতীয় জিনিস)। এটা বাস্তব জগতে জিনিস। এর গুনাগুন তার মালিকের জানা আছে।এটা থাকার কারণে তারা স্বপ্নের ভেতর অন্য কারো দ্বারা প্রতারিত হয় না। যখন এটি ছুড়ে দেয়া হয়, ঘুরতে থাকে অথবা থাকে না- এর মালিক বলতে পারে তারা স্বপ্নের জগতে আছে না বাস্তবে আছে।
মুভির শেষ দিকে কভ যখন তার ঘরের মধ্যে হাটতে হাটতে টোটেম ঘুরাচ্ছিল, সে বাইরে যায় তার বাচ্চার সাথে দেখা করতে। একটি চিহৃ যেমন- সে যদি স্বপ্নে থাকে তাহলে টোটেম নামের লাটিমটি ঘুরতেই থাকবে।আমরা দেখি টোটেম ঘুরছে এমন দৃশ্যের মধ্যেই মুভিটি শেষ হয়ে যায়।আমরা জানতে পারি না টোটেমটি এইভাবে চিরকাল ঘুরতে থাকবে বা পড়ে যাবে।এমন কি এই দৃশ্যে লাটিমটি ঘুরা বন্ধ করার স্বপ্ন দেখছিলো এটা বলাও অসম্ভব।
হিথার রিভারো বলছেন-এটাই কি সেই চিরন্তন চিন্তা মানুষ সবসময় অনুসন্ধানের মধ্যে বিরাজ করে। হুমম.. এই বিষয়টাকে অনেক মহিমা সহকারে দেখা যেতে পারে। অথবা রহস্যপ্রিয় মানুষের জন্য দারুন খোরাক বা দারুন বিনোদন। কিন্তু শেষ বিচারে তো সেই কানাগলিতে ঘুরপাক খাওয়া। আমরা যদি অস্তিত্বের প্রশ্নটার (যার যিনি সমস্যা আকারে দেখেন) কোন (আপাত) সমাধান দেখাতে না পারি তবে একই অন্ধগলি ঘুরপাকই মানুষের নিয়তি। সে জায়গায় মানুষ আর কতকাল থাকবে।
কাহিনী সংক্ষেপ: ডম কভ (ডি ক্যাপ্রিও) এবং তার পার্টনার আর্থার (যোসেপ গর্ডন লেভিট) স্বপ্নের মাধ্যমে বড় ব্যবসায়ীদের মনে ঢুকে তাদের ব্যবসা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন তথ্য চুরি করে। যাদেরকে এই স্বপ্নের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তারা শক বা স্বপ্নের মধ্যে মারা যাওয়ার মাধ্যমে আবার সত্যিকার জীবনে ফিরে আসতে পারে। কভ এবং আর্থারের কাছে একটি করে টোটেম (লাটিম) থাকে যেগুলো তাদের এই গুপ্তচরবৃত্তি অন্যদের থেকে লুকিয়ে রাখে। কভের সমস্যা হলো স্বপ্নের ভেতর তার মরে যাওয়া স্ত্রী হাজির হয়। আবার স্ত্রীকে মেরে ফেলার দায়ে আমেরিকায় সন্তানদের কাছে যেতেও পারছে না।
সাইটো নামক এক ব্যবসায়ীর হয়ে কাজ করতে হবে। সাইটো বলে একটা তথ্য তার প্রতিযোগী মরিস ফিশারের ছেলে রবার্ট ফিশারের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে। এর প্রতিদান হলো- কভ স্ত্রী হত্যার মিথ্যা দায় থেকে মুক্ত হয়ে আমেরিকায় দুই ছেলের কাছে ফিরে যেতে পারবে।
মরিস ফিশারের লাশ যে প্লেনে করে সিডনি থেকে লস এঞ্জেলেসে নিয়ে যাচ্ছিল রবার্ট ফিশার। সেখানেই রবার্ট ফিশারকে স্বপ্নের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কভের সাথে আরো কয়েকজন যোগ দেয়। সঠিকভাবে কাজ হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য সাইটোও সেই দলে ভিড়ে যায়।শেষপর্যন্ত রবার্ট ফিশারের মাথা থেকে তথ্যও বের করা হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রী মলের সাথে দেখা হয়ে যায়। যেখানে তার আত্মহত্যার সত্য জানতে পারে।
মিঃ সাইটো তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। কভ নির্বিঘ্নে আমেরিকায় ঢুকে পড়ে। বাস্তবেই কি তার ছেলেদের কাছে ফিরে যেতে পেরেছিল নাকি সব কিছুই স্বপ্নের মধ্যে লিম্বো পর্যায়ে ঘটছে! সেটা পরীক্ষা করতে তার টোটেমকে ঘুরিয়ে দেখছিল কিন্তু তার আগেই সন্তানদের সাথে দেখা হয়। তখনো টোটেম ঘুরছিলো।এখানে মুভিটি শেষ হয়।
> লেখাটির দৈনিক আমার দেশ লিংক: ইনসেপশানের কানাগলি।
সবাই ইন্সেপশনের ঠেলায় শাটার আইল্যান্ড এর কথা ভুইলাই যায়… শাটার আইল্যান্ড নিয়া কিছু লেখেন ভাইসাব। শেষের দিকে আমার মাথা আউলাইয়া গেসিলো। 😛
আপনার রিভিউ ( নাকী বিশ্লেষন!) ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ মাষ্টার। শাটার আইল্যান্ডের কথা ভুলি নাই। যতবার ইনসেপশানের কথা আসে- ততবার কেন যেন শাটার আইল্যান্ডও এসে হানা দেয় মনে। শাটার আইল্যান্ডেরও চমৎকার তাৎপর্য আছে। সময় সুযোগ করে সে কথা হবে।
QQQযদি কোন খারাপ দৈত্য বা দেবতা আমাদের ঘুম পাড়িয়ে অবাস্তব জগতকে সত্য বলে দেখায়- তাহলে দুনিয়া আসলে কি রকম অথবা আমার বাস্তব হাল কি, তা কখনো জানতে পারব না।
####এখানে আমি একটা কথা বলি- আমরা অতি সাধারণ মানুষ তাই আমাদের মৃত্যু ছাড়া এই ঘুম থেকে জেগে উঠার কোন সম্ভাবনা নেই, যদি না আপনি বিশেষ কিছূ কোড ব্যবহার না করেন বা ওয়ার্ল্ড মেকার আপনাকে সে শক্তি প্রদান না করে। কিন্তু, আমাদের নবী-রাসূল ওয়ার্ল্ড মেকার এর শক্তিতে জেগে উঠতে পারে এবং ফ্রিমেসনরা একধরনের গোপন কোড ব্যবহার করে সে জগতকে দেখতে পারে, কিন্তু প্রবেশ করতে পারে না।
আর তাই এই পৃথিবীকে একটি ভ্রম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছ সবসময়।
.
QQQডেভিড হিউম An Enquiry Concerning Human Understanding (1748) বইয়ে বলছেন, যা আমাদের চিন্তার মধ্যে নাই, সেইরকম বিশুদ্ধ কিছু আমরা বানাতে পারি না। এগুলো আমাদের অভিজ্ঞতা আর ধারণার যোগাযোগ মাত্র।
###ঠিক একইভাবে আপনারা যারা অতিপ্রকৃত ঘটনাতে বিশ্বাস করেন না, র্দূভাগ্য বশত আপনাকে অভিজ্ঞতায় এগুলো ধরা দেয় নি বা আপনাদের দূর্বল মনমানসিকাতার কারনেই এগুলো আপনাদের কাছে ধরা দেয় না।
.
QQQএই মুভির একটি চরিত্র বলছে, আমরা যা জানি তার উপরই এইসব নির্মান করছি।
###এর ভিত্তিতে আমি বলতে পারি মধ্যযুগে তৈরী হওয়া দূর্দান্ত সব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো এখনকার তবৎ আর্কিটেক্টরাও তৈরী করতে পারেনি। সুতরাং কোথায় লুকিয়ে আছে সেই সব জ্ঞান?
.
QQযদি ঘুমন্ত কেউ আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, তবে তার মনে কোন ধারণা পুতে দেয়া যাবে না কেন?আপনি তখন তাকে যে কথা বলবেন সেটা তার স্বপ্নের অংশ হয়ে যাবে।যখন সে জেগে উঠবে- ভাববে স্বপ্নের মধ্যে দারুন একটা আইডিয়া পেয়ে গেছে।
###এখানে আমি একটা ছোট যুক্তি দিতে পারি প্রতিটা মানুষের আত্ত্বা এক একটা “এনার্জি” এর কোনই আকার নেই দেহ নামক “ভেসেলে” তা আটকে আছে। কিন্তু আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন তখন আপনার “ভেসেল” থেকে বেড়িয়ে আসে এবং তখন সেই “এনার্জি” জগতে যদি কোন প্রাণী থাকে তার সাথে দেখা হয়, যাদের বিচরন এই “এনার্জি” এর জগতে। তখন তারা যদি আপনাকে সাহায্য করে আপনি মনে করেন, স্বপ্নে প্রাপ্ত আইডিয়া। জাগ্রত অবস্থায় দূর্বল মানুষ নিয়ন্ত্রন হয় তার দেহ নামক “কামে পরিপূর্ন” “ভেসেল” দ্বারা।
.
আমি একটা অতি ছোট ও সাধারন মনস্তত্ত্বিক পরীক্ষার মাধ্যে আপনাদের বাস্তাবের ৫ মিনিটকে ৫ঘন্টায় পরিনত করতে পারি।
আপনাদের কাছে আমার জানতে চাওয়া – কি হত যদি আপনারা কেউ মারা না যেতেন এই পৃথিবীতে।
বিপ্লব ভাই দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এই লেখায় উল্লেখ আছে দেকার্ট তার জ্ঞানে নিশ্চিত হতে শেষ পর্যন্ত খোদায় আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে স্বপ্ন এক্সপেরিমেন্ট চালাতে নিয়ে নোলান এই সিনেমায় পৌছেছেন পশ্চিমা দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানতাত্ত্বিক সমস্যায়। এর গোড়ায় হলো- আমি যা দেখছি তা আসল জিনিসটা দেখছি- সেটা কিভাবে নিশ্চিত হবো।
আপনার কথা প্রসঙ্গে বলছি- আমরা ওহী থেকে শুরু করে বেহেশত- দোযগের বর্ণনায় এই দুনিয়ার বিষয়াদি ব্যবহার করি। আমার মনে হয় না দুনিয়াবী জিনিস দিয়া স্বপ্ন বানাইলে সেটা মানুষের সীমাবদ্ধতা। নাম আর নমুনার পেছনে আল্লাহ কুদরতি আছে এটা কি যথেষ্ট না।
ফ্রিমেসন এবং এনার্জি-ভেসেলের আলোচনাটা যদি বিস্তৃত করে কোথাও লেখেন খুশি হবো।
ছবিটা দেখতে ইচ্ছা জাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ শাহাদাত ভাই।
শাটার আইল্যাণ্ড আর ইনসেপ্শন ছবি দুইটা একসাথে দেখে ছিলাম্, অনেক ভালো লেগেছে, কিন্তু অনেক কিছুই বুঝি নাই। এরকম হয়েছে মুলহলাণ্ড ড্রাইভ মুভিটা নিয়া, অনেক কিছুই খোলাসা হয় নাই। পোস্টে ভিন্ন আঙিকে আলোচনার জন্য অনেক ধন্যবাদ্। অনেক কিছুই আবার নতুন করে জানা হল। শুভেচ্ছা কবি 🙂
ধন্যবাদ। শাটার আইল্যান্ডও ভালো লাগছে। মুলহলান্ড ড্রাইভ অনেক কষ্ট করে একবার দেখছি। প্রায় কিছুই বুঝি নাই। অনেক প্রশংসা শুনছি। দ্বিতীয় বার দেখার আগ্রহ জমাট হয় নাই।
রিভিউ পুরোটা পড়লাম। মনে হয়েছে বেশিমাত্রায় দার্শনিক ধাঁচের হয়ে গেছে। অবশ্য আপনি ফিলোসফির ছাত্র সেটা জানা ছিল পড়ার আগে থেকেই। তাই এমনটা এক্সপেক্ট করছিলাম। 🙂 কিছু কিছু দার্শনিক বিষয় আশয় মাথার উপর দিয়ে যায় কিনা!
ইনসেপশনের রিভিউ তো হল, নোলানেরই আরেক মুভি ইন্টারস্টেলার নিয়ে একটা রিভিউ লিখবেন আশা করি। এই মুভিটার প্রশংসা শুনতে শুনতে কান পচে গেছে! ভাল প্রিন্টের অপেক্ষায় দেখা হয়নি। মোক্ষম একটা রিভিউ হলে ভাল হয়।
ইমস এর সত্তা পরিবর্তনের বিষয়টা ক্লিয়ার না! একটু বললে খুশি হতাম