ব্যর্থ এক সার্জারি নিয়ে ভোগান্তির কাহিনি এটা। যার মূল পর্ব শুরু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, এখনো চলমান। এখন একটা সিনেমাটিক ক্লাইমেক্সে দাঁড়ায়া আছে। তবে সেই গল্পে দুর্ধর্ষ কোনো অ্যাখ্যান নাই, বিরাট কোনো বাঁক-বদল নাই। অনেক বিরক্তিকর দীর্ঘশ্বাস আছে। কিন্তু এ গল্প আমার খুবই কাছের, আমার বর্তমান। আমার স্বজনদের জন্য পরীক্ষার, আমাকে ভালোবাসার। সেই গল্পটা আমার বন্ধুদের জানাতে চাই, অন্তত এক অধ্যায়ের সমাপ্তির আগে আগে। … অবশ্য পুরো গল্পটা এভাবে শেয়ার করা সম্ভব কিনা আমার জানা নাই। এখন পর্যন্ত সব হাসপাতাল ও চিকিৎসকের নাম বদলে দেওয়া।)
আগের পর্ব: এক. অসুখের দিন, দুই. বাবা আর আমি পাশাপাশি, তিন. অপারেশন টেবিলের ঝাপসা দুনিয়া, চার. বাসায় ফেরার আনন্দ, পাঁচ. ঘুম ভেঙে দেখি শরীরজুড়ে রক্ত, ছয়. লজ্জা ভুলে কেঁদে উঠলাম হাসপাতালে, সাত. অপারেশন টেবিলে মৃত্যু নিয়ে রসিকতা, আট. হাসপাতালের বিল থেকে অর্ধেকের বেশি টাকা গায়েব
ইআরসিপি রিমুভের পর দিন দু-এক বাসায় শুয়ে-বসে কাটলো। প্রথম দিকে পেটের মধ্যে অল্প অস্বস্তি ছাড়া কিছু অনুভূত হয় নাই। তবে মনে মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল এমআরসিপি রিপোর্ট। পিত্তনালী ও কিডনির পাথর উদ্বেগে রাখার জন্য যথেষ্ট। রিপোর্টগুলো ডা. ইমরান ও ডা. ফাহিম ভাইকে পাঠালাম। ফাহিম ভাই বলছিলেন, অনেক সময় এমআরসিপি করানোর সময় পিত্তনালীতে পাথর থাকলে বের করে ফেলা যায়। সম্ভবত অন্য কোথাও পাথর আছে, যেখান থেকে বের করে আনা অসম্ভব বা ক্ষতিকর। অন্য নালীতে থাকলেও সেটা আর বাড়ার আশঙ্কা নেই। পিত্তথলি যেহেতু নাই, সেখানে পাথর থাকবে কী করে। আর যদি থেকে যায় এবং সেখানে পাথর থাকে তবে, জন্ডিস হবে, বমি হবে, জ্বর হবে। তেমন কোনো লক্ষণ না থাকলে সমস্যা নাই। আর কিডনি পাথরের জন্য বেশি করে পানি খাইতে বললেন।
৪ অক্টোবর ডা.আকবর আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। উনি সব রিপোর্ট দেখলেন। তারপর পাথরের বিষয়টা ব্যাখ্যা করলেন। সেই আগের ব্যাখ্যাটাই। একই কথা প্রেসক্রিপশন বিস্তারিত লিখে দিলেন। বললেন, ভবিষ্যতে যদি এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠে তাই লিখে রাখছেন। কিডনি প্রসঙ্গে বললেন, যেহেতু অনেকটা সময় ঝামেলার মধ্য দিয়ে গেছেন, আপাতত মাস খানেক বিশ্রাম নেন। এরপর ভালো একজন চিকিৎসকের রেফারেন্স দেবেন, আল হামরায় চিকিৎসা সম্ভব। সে দিন খালি পেটে গেছিলাম। উনি বললেন, একটা ইউএসজি করিয়ে নেন। কিডনির অবস্থা দেখে নিই। আমার ফোন নাম্বার রাখলেন। পরদিন ফোন করে জানাবেন রেজাল্ট কী এলো। উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে এলাম।
রিসেপশনিস্ট জিগাসা করলেন, এখন কী অবস্থা। বললাম, ভালো আছি। এর আগে একদিন ভদ্রমহিলা বলেছিলেন, তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। দিনের পর দিন কত কষ্ট সহ্য করে গেছি। কোনো অভিযোগ ছাড়াই অপেক্ষা করছিলাম। আমার সাহসের তারিফ করলেন। যদিও আমি কখনো নিজের সাহসের তারিফ করি না। আমি ভালো করেই জানি কতটা দুর্বল হৃদয়ের মানুষ আমি। দিনের পর দিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে গেছি শুধু। আর কী-ই বা করার আছে।
পরদিন ডা.আকবর আহমেদ ফোন করে বললেন, কিডনির পাথরটা খানিকটা বড়। তবে আপাতত ততটা টেনশন করার কিছু নাই। মাস খানেক পর যোগাযোগ করতে বললেন। কিন্তু যেহেতু দারাশিকো ভাইয়ের পাথর আটকে যাওয়া ও পরে অপসারণের বিষয়টি জানি; শারীরিক যন্ত্রণা ও খরচ সব মিলিয়ে সে দিকে যেতে চাইছিলাম না।
উনার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে হোমিওপ্যাথির বিষয়টা জেনেছিলাম। শাহাদাৎ তৈয়ব ভাই ও রাশেদ এ পদ্ধতির প্রশংসা করেছিল। এ ছাড়া আমার বাবাও হোমিওপ্যাথির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আঁচিল থেকে নানা সমস্যা— ওনার ঔষধ খেয়ে ভালো ফল পেয়েছিলাম। সে সময় একদিন ফোন করলো চট্টগ্রামের বন্ধু দাউদুল ইসলাম। পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে বলল, ভাই কিডনি নিয়ে ঝামেলার মধ্যে যাইয়েন না। আপনি হোমিওপ্যাথি খান। আমাদের এক বন্ধু আছে যার হাত খুব ভালো। এক ধরনের নিমরাজির মতো করে হ্যাঁ বললাম। সেটা অক্টোবরের মাঝামাঝিই হবে। পরদিন দাউদ ফোন করে নিশো হাসানের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলো। আলাপ-পরিচয়ের দু-একদিন পর আমরা লম্বা সময় ধরে কথা বললাম। খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, শুধু শরীরের বিষয়াদিই নয়, আমার ফুড হ্যাবিট, জীবনযাপন তো আছে, সঙ্গে মেজাজ, কী পছন্দ করি, কী করি না। এমন একটা প্রশ্ন ছিল— আমি মানুষকে ক্ষমা করতে পারি কিনা। সব মিলিয়ে এটা ইতিবাচক অনুভূতি হচ্ছিল। এটা ঠিক যে, যতবারই কোনো সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছি, হয়তো লম্বা সময় ধরে ভুগতেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে যতই অযৌক্তিক বলুক বা আমার ভাবনাকে ভুল হিসেবে প্রতিপন্ন করুন, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। যেকোনো ঘটনার একটা মানসিক প্রশান্তির দিক হয়তো এটা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কোনো সন্তুষ্ট আসে নাই।
ওই সময় রাশেদ চট্টগ্রামে ছিল। আমাদের আরেক বন্ধু শহরে গিয়ে নিশো ভাইয়ের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে আসলেন। বেশ কয়েকটা শিসি, সঙ্গে বিধিনিষেধের বিশাল ফর্দ, কী কী খাওয়া যাবে বা যাবে না এবং কী কী পথ্য যোগ করা যায় নিত্যদিনের অভ্যাসে। একটা পানীয় অনেকদিন ফলো করেছিলাম। কাঁচা হলুদ ও গোল মরিচ মিশ্রিত পানি। প্রতিদিন সকালে বটলে করে অফিসের ব্যাগে নিতাম, একটু একটু করে পান করতাম। অবশ্য যখন অপারেশনের ঘা খুলে যায় তারপর থেকে প্রতিদিন একটা লেবুর রস, সঙ্গে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খাচ্ছিলাম। এখন চকোলেট, চিনি, আলু, চা-কফি বন্ধ হয়ে গেল। করোনার লকডাউন ওঠার পর বাসা থেকে খাবার নেয়া শুরু করেছি। সঙ্গে প্রতিদিন তিনবেলা নানা ধরেন হোমিও বড়ি ও পানীয় খাওয়া শুরু করেছি। কয়েক দিনের মাঝেই চাঙ্গা অনুভব শুরু করি।
এর মাঝে হঠাৎ-ই মেঝো ফুপু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রচণ্ড পেটে ব্যথায় ভুগছিলেন। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি তিনি কানে কম শোনেন। যাই হোক, নোয়াখালীর ডাক্তাররা চিহ্নিত করলেন পিত্তথলিতে পাথর। ডাক্তারেরা ওপেন সার্জারি করতে চাইলে আমার ফুপুতো ভাইয়েরা আপত্তি করলেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন ঢাকায় নিয়ে আসার। মিরপুর ১১ এর একটা হাসপাতালে ভর্তি করান।
ওনার অপারেশনের তৃতীয়দিনে আমি দেখতে যাই। ফুপুকে সব সময় দেখেছি নিজের শ্রবণ সমস্যার কারণে নিজেকে নিভৃতে রাখতে। এর মাঝেই চার ছেলে দুই মেয়েকে বড় করেছেন। সহজ-সরল মানুষটা অন্যকে নিজের অবস্থা বোঝাতে বা অপরের কথা বুঝতে সব সময় হিমশিম খান। ফলে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আরও নীরব হয়ে গেলেন। আমি যেহেতু ওনার সঙ্গে অভ্যস্ত নয়, তাই চুপচাপ বসে থাকলাম। সেখানে ফুপাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে এই-সেই গল্প হলো। আমার অসুখ নিয়ে কথা উঠলো। যদিও ভালো লাগছিল না। কারণ, সেখানে এক ফুপাতো ভাই ছিলেন, যিনি প্রথমবার আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখেছিলেন কিন্তু কখনো একবারের জন্যও ফোন করে খবর নেন নাই। অথচ ওষুধের জন্য যখন এ দোকান ও দোকন ঘুরছিলাম ব্যথা নিয়ে, তখনও ওনার জন্য চিন্তায় ছিলাম এত রাতে বাসা চিনতে পারবেন কিনা!
ফুপুকে দেখতে আসার আগে এক কলিগকে ফোন করেছিলাম। ফেসবুকে দেখছিলাম তার সঙ্গে ডিভোর্স হতে যাওয়া স্বামীর অপারেশন হইছে। পিত্তথলির। কথা বলে দেখলাম, ডা. আকবর আহমেদের কাছেই অপারেশন করাইছেন ওই ভদ্রলোক। তার নাকি লিভারের অনেকটা পচে গেছে। শুনে খারাপ লাগা ছাড়া আর কী আছে!
হাসপাতাল থেকে নেমে দারাশিকো ভাইকে কল দিলাম, কাছেই তার বাসা। ভাবলাম দেখা করে যাই। সেই ফেব্রুয়ারিতে আমাকে হাসপাতালে দেখতে গেছিলেন। তিনিই এখন হাসপাতাল আর ডাক্তারের কাছে দৌড়ে উপর আছেন। সেদিন সকালে মেসেজ দিছিলেন, রাতে ওনার পিত্তথলির ব্যথা উঠছে। ওষুধ দিয়ে রিকভার করছেন। শিগগিরই ডাক্তারের কাছে যাবেন। তাই দেখতে যাওয়া তো উচিত। আর ওনার মেয়ে তুবা-রুবাকে অনেকদিন দেখি না। বড়টার সঙ্গে আমার বেশ খাতির। সে আমাকে ভুলে গেলে ভালো তো লাগবে না।
যাই হোক, দারাশিকো ভাইকে কল দিতে বললেন বাসায় নাই। দুপুরের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হইছেন। কী ব্যাপার? জানা গেল, একটু সুস্থবোধ করতে সকালে অফিসের দিকে রওনা দিছিলেন। কিন্তু অফিসের গাড়িতে ওঠার আগে একটা অস্বস্তি। বাসায় ফিরতে গিয়ে ব্যথা বাড়তে থাকে। মানে পিত্তথলির ব্যথা। তাই দুপুরের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হইছেন। ডাক্তার বলছেন, পরদিনই অপারেশন হবে।
আমি নিজের অবস্থা দিয়ে উনাকে অনেকটা বুঝতে পারছিলাম। আমি যেমন বন্ধু পরিবার আকড়ে ধরেছি বা অনেকের সঙ্গে নিজেকে শেয়ার করছি, সেখানে উনি পরিবারের গুটিকয়েক লোক আর দু-একজন বন্ধু ছাড়া একদম নিজের মধ্যে রয়েছেন। অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করলে বেশিরভাগ সময় এড়িয়ে যান। আর আমি তার উল্টো। এই যে হড়বড় করে এখানে প্রায় সব বলছি, আর উনার পেটে বোমা মারলেও বের হবে না। একদিন বলছিলাম, আমাকে অনুসরণ করছেন দেখি! আমার যা যা হচ্ছে, আপনারও তা তা হচ্ছে। শুধু উল্টোভাবে। আপনার কিডনি থেকে পিত্তথলি, আর আমার পিত্তথলি থেকে কিডনি সমস্যা। উনি বললেন, অনুসরণ করছি না। আপনার সঙ্গে আমাকে বেঁধে দিয়েছে। কথাটা শুনে খুব মন খারাপ হয়েছিল।
পরদিন, সম্ভবত শুক্রবার ছিল। অফিস সেরে মোহাম্মদ শোয়াইব আর আমি দারাশিকোকে দেখতে গেলাম তাসমানিয়া ব্যাংক হাসপাতালে। দুপুরে উনি মেসেজ দিয়ে রাখছিলেন, হাসপাতালে দেখা নাও হতে পারে। বিকেল পাঁচটার দিকে ওটিতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু বিকেলে জানালেন, আজ অপারেশন হচ্ছে না। হাসপাতালে উনি একাই ছিলেন। ডাক্তার বলেছেন, ইনফেকশনের কারণে পিত্তথলি ফুলে গেছে। তাই মাস দেড়েক অপেক্ষা করতে। এখন ল্যাকপরোস্কপি করলে পিত্তথলি ফেটে যেতে পারে। আপাতত ওষুধ দিয়ে দিচ্ছেন। দেড় মাস পর যেন দেখা করেন। এর পরদিনই ডাক্তার তাকে রিলিজ করে দেন।
নভেম্বরের শুরুর দিকের ঘটনা সম্ভবত। কয়েকদিন ধরে প্রস্রাবের রাস্তায় একটু জ্বালাপোড়া হচ্ছিল। বিশেষ করে অল্প গরমেই খুব ঘামতে থাকি। প্রথম দিকে ভাবছিলাম, হয়তো এ কারণে হচ্ছে। কিন্তু বাসায় বা অফিসের এসির মধ্যে থাকলেও বা যখন পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছি, প্রস্রাব স্বাভাবিক তখনও দেখি এই অবস্থা। একদিন দাউদের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। তখন ও বলল, নিশো ভাইকে এখনই জানান। ফোন দিলাম, উনার মতে, একটু তাড়াতাড়িই জ্বালাপোড়া হচ্ছে। একটা ইউএসজি করাতে বললেন। সেই মতে, একদিন ভোরে ভোরে আল হামরার অন্য একটা শাখায় চলে গেলাম, এখানে স্টেইন রিমুভ হয়েছিল। আর যেখানে অপারেশন হয়েছিল, সেখানে ইউএসজির ডাক্তার আমাকে চেনেন আর আকবর আহমেদের চেম্বার লাগোয়া ইউএসজি ডিপার্টমেন্ট। হোমিওপ্যাথি খাওয়ার বিষয়টা উনাকে জানাতে চাইছিলাম না।
… ও আচ্ছা, অক্টোবরের শেষ দিকে ডা. আকবরের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সেদিন আপা আর দুলাভাই গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। আমি অফিস সেরে এক বন্ধুর সঙ্গে সীমান্ত সম্ভারে সাক্ষাৎ শেষে রাশেদের সঙ্গে খানিকটা কেনাকাটা করলাম, এরপর আল হামরায় আসি। আকবর আহমেদ বললেন, সময় করে একদিন চলে আসতে। এমআরসিপি করে কিডনিতে একটা অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেবেন। তো, উনাকে হোমিওপ্যাথির কথা বললাম না।
এবার আল হামরায় ইউএসজির ডাক্তার বললেন, আপনার কিডনিতে কোনো পাথর নাই। ভদ্রমহিলা অবাকই হলেন। বারবার চেক করলেন। কাগজপত্রগুলো ভালো করে দেখছেন। শেষে রায় দিলেন, সত্যি সত্যি পাথর নেই। এরপর তাকে হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হওয়ার কথা বললাম। বিষয়টায় পাত্তাই দিলেন না। বললেন, অনেক সময় বেশি বেশি পানি খেলে পাথর চলে যায়।
বেশ খুশি খুশি লাগছিল। বের হয়েই নিশো ভাইকে ফোন করলাম। উনি বললেন, এখনই একটা ডাব খেয়ে নিন। যেটা মাটির স্পর্শ পাই নাই। কী একটা জটিল ব্যাপার। এমন ডাব কোথায় পাবো। এ যেন বনি ইসরায়েলিদের দাগহীন গাভী খোঁজা। কলাবাগানে রিকশা থেকে নেমে একটা ডাব খেয়ে নিলাম। যা পাইলাম তা-ই আরকি। পরে নিশো ভাই বললেন, সে রকম ডাব না পেলে খাওয়ার স্যালাইন খেতে পারেন। এটাও করেছিলাম। খবরটা রাশেদকে জানালাম। পরে রিপোর্টটা ডা. ফাহিমকে জানালাম। উনি ‘উফ’ বলে মন্তব্য করলেন। কী ব্যাপার? একটা গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া নিয়ে টেনশন করলেন, যেটা মূলত বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে হয়। ধ্যাত, সমস্যা আমায় ছাড়লো না।
পুরো বিষয়টি নিয়ে নিশো ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ হলো লম্বা সময় ধরে। কিডনির জন্য ইউএসজির সঙ্গে একটা থাইরয়েডের পরীক্ষাও করিয়েছিলাম। রিপোর্টে তেমন গড়বড় দেখলাম না, কিন্তু উনি বললেন, একটু বাড়তির দিকে। যেটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। এও বললেন, সমস্যা নাই। সব ঠিক হয়ে যাবে। উনি ওষুধ দেবেন।
এর মাঝে সবকিছু বিবেচনা করে ঠিক করলাম চট্টগ্রাম যাবো। কিডনির সমস্যার বিহিতের পাশাপাশি শরীর নিয়ে আগের চেয়ে আরামবোধ হচ্ছিল। শোয়েব করিমও বিয়ের দাওয়াত দিল। পাত্রী বীথিও ওর সূত্রে অনেক দিনের চেনাজানা। এ ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে খুবই ভালো লাগবে। সব মিলিয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে এক শনিবার দুপুর দুইটার বাসে চেপে বসলাম। প্রায় দেড় বছর পর চট্টগ্রাম যাওয়া, মেঘলা একটা দিনে। বিশেষ করে গাড়ির জানালা থেকে শেষ বিকেলে বিস্তৃণ সবুজ ধান ক্ষেত দেখার দৃশ্যটা চোখে লেগে আছে। যাত্রাপথে মজার মজার কাণ্ড ছিল। যেমন; হোটেলের ওয়াশ রুমে যেতে গিয়ে থমকে গেলাম। দরোজায় বোরকা পরা এক নারী। পরে উপরের দিকে চোখ যেতে দেখলাম, ও না! আমার গাড়ির সেই বৌদ্ধ ভিক্ষু। বাসের টিভি স্ক্রিনে একের পর এক নাটক পাল্টানো হচ্ছিল। কিন্তু কারো মনে ধরছিল না। পরে মোশাররফ করিমের একটা নাটক অনেকের পছন্দ হলো। যেখানে করিম তার ছেলে আখম হাসানের কবিতা চুরি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়, আর মেয়েরা তার প্রেমে পড়ে। এরপর একটা আঞ্চলিক গান চালানো হলো, যাত্রীরা কী যে খুশি। অনুরোধে আবার চালানো হলো। মানে একটা জমজমাট সফর। আরে! সব ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে।