ফাঁদ পাতা দুনিয়ায় জেসন তোমায় দরকার নাই!

জেসন বর্নরে (ম্যাট ডেমন) সিআইএ’র নারীরা সবসময় ভালো পায়। খালি পুরুষ বসগুলো তারে মারতে চায়। এই করে করে শেষ বসটাও মারা গেলে ‘জেসন বর্ন’ সিনেমায়। তাও আবার সিআইএ’র সাইবার অপারেশনস ডিভিশনের প্রধান হিথার লি (এলিসিয়া ভিকান্ডার)-এর হাতে। হিথারের ধারণা আউটল’ হইলেও জেসনরে কাজে লাগানো যাবে। যদিও তিনি পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত ছিলেন না। এই জায়গা আইসা মনে হলো পরের পর্ব বইলা কিছু কি থাকছে? মারার মতো লোক আর কই?

jason_bourne-wahedsujan.comএ কাহিনী দেখে সম্প্রতি মৃত এক সন্ত্রাসবাদীর কথা মনে পড়ল। তার মৃতদেহ দেখেও তরুণীরা ক্রাশ খাচ্ছিল। এক টিভি অনুষ্ঠানে জানা গেল, ক্যাম্পাসে থাকতে এ ধরনের আউটল’ হওয়া লোকের দাম ছিল মেলা। তার ড্যাশিং ব্যাপারগুলা নারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়া ধরা পড়ছিল। যাই হোক, এ কথা ঝুঁকিপূর্ণ হইতে পারে— কারো কারো মনে হতে পারে উস্কানিমূলক।এমন ধারণার উদয় বরাবরই আপতিক।

ঘটনা তো এই হিথার বুঝতে পারছেন জেসনের ভেতরে লড়াই করার যে স্পিরিট আছে, তা কিন্তু ষড়যন্ত্রপ্রবণ সিআইএ বস পারছেন না। তারা নজরদারিতে যতটা গুরুত্ব দেন, অন্য প্রবণতাতে ততটা নাই। এমনকি থ্রেডস্টোন নামের প্রজেক্টে জেসনের অন্তুভূক্তি ভীতিকররকম ষড়যন্ত্রমূলক।

এ সব শেষে আমরা যারা আম দর্শক তারাও হিথারের এ দর কষাকষির মধ্যে পড়ে গিয়া দোয়া করতে থাকি জেসন তুমি এ আবদার মাইনা নিও না। তুমি সিআইএ’তে গেলে আর ভালো মানুষটি থাকতে পারবে না। তুমি আউটল’ হিসেবে থাকো এইটাই ভালো! আইনের মধ্যে থাইকা খুন আর বাইরে থাইকা খুনের মধ্যে পার্থক্য বেজায়, নায়কোচিত ব্যাপারও অন্যরকম।

‌‘জেসন বর্ন’ সিরিজের পঞ্চম সিনেমা। তবে অরিজিনাল বর্ন হিসেবে চতুর্থ সিনেমা। এটা সবাই বলছে নতুন সিনেমায় কাহিনী কয়েক চুলের বেশি আগায় নাই। এটা ঠিক, তবে সিনেমাটা উপভোগ্য!

jason_bourne-wahedsujan.com1

এর মধ্যে মুভিতে ইন্টারেস্টিং যা যোগ করা হইছে তা হলো সিআইএ’র গোপন নজরদারি। সিনেমায় দেখা যায় সিআইএ বস রবার্ট ডেওয়ি (টমি লি জোনস) সোশ্যাল মিডিয়ায় গোপনে তহবিল যোগান দেন। কারণ তার দরকার রিয়েল টাইম সার্ভেল্যান্স। কিন্তু এ ধরনের একজন উদ্যোক্তা অ্যারন কুলার (রিজ আহমেদ/ ইনি ষোড়শ শতকের ভারতীয় ধর্মতাত্ত্বিক মোল্লা মাহমুদ জৈনপুরীর বংশধর) কাহিনী ফাঁস করতে গেলে তাকে খুনের চেষ্টা করে সিআইএ বসের কিলার। যদিও পারে না। অ্যারন সিনেমার অনেকটা অংশজুড়ে থাকলেও তার সঙ্গে জেসনের সরাসরি সম্পর্ক নাই। তবে কী এ সিনেমায় মাস সার্ভেল্যান্স নিয়া কোনো মেসেজ দিতে চায়! নাকি সিআইএ কী জিনিস তা জানায়। যাই হোক— এ পার্ট একদম আলাদা মনে হইলেও কম উপাদেয় না। আমাদের গণতন্ত্রে অবশ্য এতটুকুও আশা করা যায় না। এ আমলে পুলিশ বা এ ধরনের বাহিনী আর সাদা-কালো না, পুরোটাই সাদা।

দেখা যায় এথেন্স বা বার্লিলের রাস্তা— কোনো কিছুই রিয়েল টাইমে নজরদারি সিআইএ’র পক্ষে অসম্ভব নয়। এমনকি সেখানে গিয়া আউটল’কে খুন করার আয়োজন সরাসরি করে। বলে দিচ্ছে টার্গেট ডানে না বামে, উপ্রে না নিচে। সম্ভবত লাদেনকে খুনের প্রক্রিয়াটাও এমন ছিল। সিনেমায় যা দারুণভাবে দেখাইছে।  সমস্যা হলো, এভাবে সময় মতো হাজির হওয়া সিআইএ’র গুপ্তঘাতক সবসময় ঠিকঠাক মতো কাজ করতে পারে না। যেমন— জেসনের মতো কেউ কেউ ঠিক ঠিক পার পেয়ে যায়। (জেসন নিজেও একসময় এ কাজে যুক্ত ছিল)। উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাকে আটকাইতে পারছে না। গ্রীস, বার্লিন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সব জায়গায় অনায়াসে চলে যাচ্ছে জেসন। এ থেকে আমাদের লেসন কী?

এ সব রিয়েল টাইম সার্ভেল্যান্সি আসলে কী ঠেকাই। যার জন্য আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত পরিসরেও নাক গলাইতে বাধ্য হচ্ছি। নজরদারির মধ্যে মানুষের চাওয়া-পাওয়াগুলার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক বিচারের ঘাটতি চোখে পড়ে না।

আরো পড়ুন : মুভি । ইচ্ছেশূন্য মানুষ

জেসন বর্ন সিরিজের সবকটা সিনেমায় দেখবেন কেউ তার কথা শুনতে রাজি না, এমনকি তার অতীত জানাইতেও রাজি না। মানে সত্যের তালাশের কারণে ষড়যন্ত্র, প্রতারণার দুনিয়ায় নিজের খুঁজে পাওয়ার ধান্ধার কোনো মূল্য থাকতেছে না। সত্য খুঁজতে গেলেই মাইর। এর বদলে মরণরে সামনে রাইখাও সিআইএ বস দেশপ্রেম নিয়া সবক দিলেন জেসনকে। অথচ জেসনের সামনে রহস্য হয়ে খাড়া তার বাপ, কেন তারে খুন করা হইল? দেশ নামক কল্পিত সত্তাকে রক্ষার জন্য আরো আরো কল্পনার ফুলঝুরি কিভাবে দেশপ্রেম, ষড়যন্ত্র, নির্বিচারে খুনরে যাচাই করে তার উদাহরণ এখানে! আর দেশপ্রেম হইলো এটাই জেসনের বাপরে খুন করে, তাকেই অ্যামনেশিয়া আক্রান্ত খুনী বানানো, আর সত্য জানতে না চাওয়া। এ প্রেমের বাইরে গিয়া বাপও সত্য হইতে পারে, এমনকি আমি নিজেও। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার হিম্মত কী? যদি জেসন সত্য জানার জন্য গুলির মুখে দাঁড়াইতে ভয় না পায়— তাইলে তারে মেরে আপনার লাভটা কী হচ্ছে। ওই প্রশ্ন আপনার জন্য চিরকাল খাড়া হইয়ে থাকল। আর জেসনের ক্ষেত্রে যা হইল– সে কিন্তু মানবতার জন্য বড় কিছু অর্জনে লড়াই করছে না। তার শুধু নিজের পরিচয়টা জানলেই হলো। তো, জেসন একটা পরিচয় পায় শেষতক! এটাই কী মানুষ হিসেবে তার আসল পরিচয়?

হুমমম। এই হইলো জেসন বর্ন দেখার অভিজ্ঞতা। সিনেমার শেষে জেসন বরাবরের মতোই কই যেন হারায়া গেল। সত্য জেনে। তিনি কি আর সিনে পর্দায় ফিরবেন? আশা করি ফিরবেন না। সত্য জানার পর ফাঁদ পাতা দুনিয়াকে তার কেন দরকার!

Comments

comments