মার্ভেল কমিকস যে পিপিলীকার উপ্রে দখল নিয়া রাখছে— আগে জানতাম না। ‘অ্যান্ট ম্যান’ সিনেমাখান দেইখা পরিষ্কার হইল।
এটা শরীরি দখলমাত্র– মন মগজের লেশ নাই। এ কথার কারণ আছে। দিন কয়েক আগে একজন জানাইলেন মানুষ মানে হইল ‘হইার মধ্যে জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি’ আছে। সে মোতাবেক পিপিলীকা জীববৃত্তিসম্পন্ন, তার বুদ্ধিবৃত্তি নাই, অথবা থাকলেও সমীহ করার স্থরে না (যেমন— সবার উপ্রে মানুষ সত্য)। তো এখানে পিপিলীকার শরীরের তুলনায় দানবীয় জিনিসের ভার বইবার ক্ষমতা এবং কমান্ড মানার ক্ষমতাকে প্রাধান্য দেওয়া হলো। আরও আছে ‘পিপিলীকার পাখা গজায় মরিবার তরে’ নয় ‘অ্যান্ট ম্যান’কে বহন করিবার তরে। যেভাবে দেখেছি আর কি! বুঝতে হবে বাদুররে সে বাদুর থাকিতে দিবে না, মাকড়শাকে নয় শুদ্ধ মাকড়শা। এমন নিন্দার্থে নয়, কৌতুহল থেকে।
জগতকে জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে ভাগ করার শুদ্ধ লাভ মানুষের পক্ষে যায়। সংকীর্ণার্থে বাকি সব সেবাদাস।
মানুষ আসলে না-শোকর বান্দা। বুদ্ধির গর্ব করবে কিন্তু শরীর নিয়া তার অস্বস্তির অন্ত নাই। সুপারহিরোরা তো তা-ই বলে। আবার তাদের টেলিপ্যাথি বা অসহায়ত্ব দেখাইয়া করুণ ও অতিমানবিক রস উৎপাদনের চেষ্টা করে। এবং তার ‘সুপারহিরো’ কল্পনাকে বৈজ্ঞানিক কৃৎ-কৌশল দিয়ে ব্যাখ্যা করে। যেমন— মাকড়সার কামড় খাইয়া ’স্পাইডার ম্যান’। ব্যাপারটা যদি এমনই থাকে তাহলে নেকড়ে কামড়ে ভ্যাম্পায়ার হওয়ার লগে পার্থক্য নাই। তাই এতে বিজ্ঞানের আমদানি অতি জরুরি।
সিনেমা নিয়ে যত লেখা : ইচ্ছেশূন্য মানুষ । মুভি
আবার ‘সুপারহিরো’র বিপরীত পক্ষও বৈজ্ঞানিক কৃৎ-কৌশলের আশ্রয় নেয়। মাঝে লড়াইটা মানবতা বা এ নামে চলে। খেয়াল করলে দেখা যায় যা নিয়া যুদ্ধ, ওই সব ধ্বংসাত্মক জিনিস আবিষ্কারের লগে ‘সুপারহিরো’ বা তার মহৎ বাবা-মা বা অন্য কোনো সৎ লোকের অবদান থাকে। যেমন- ‘অ্যান্ট ম্যান’ এর অতি আশ্চর্য পোশাক বা পিম পার্টিকল। মানে কিছু সুপারহিরো কাজ অন্যের ডিমে তা দেওয়া বা আবিষ্কারের পাহারা দেয়া। যাতে খারাপ ব্যবহার না হয়। ‘অ্যান্ট ম্যান’ও তার আবিস্কার রক্ষার দায়িত্ব দেয় নতুন ‘অ্যান্ট ম্যান’কে। যা আসলে ভয়াবহ অস্ত্র।
এমন পাহারাদার পৃথিবীতে বিরল নয়। খোদ সুপারহিরো উৎপাদনের কারখানা দেশের কারবারও এমন। পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট একমাত্র দেশ— যারা পারমাণু বোমা মাইরা লাখ লাখ মানুষ মারছে, এখন তারাই আবার পরমাণু বোমার অপব্যবহার বন্ধে নানা কিছু করে, তাদের হাতেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বোমা। যার সুন্দর ব্যাখ্যা আছে— ‘বড় ক্ষমতা বড় দায়িত্ববোধের জন্ম দেয়’। এ নিয়া বিস্তর কথা বলা যায়। আমরা ‘অ্যান্ট ম্যান’ এ ফিরি। সেখানেও সোভিয়েত-আমেরিকার ঠাণ্ডা লড়াইয়ের কেচ্ছা আছে। আছে আমেরিকায় মিসাইল আক্রমন থেকে কেমনে বাঁচাইলো ‘অ্যান্ট ম্যান’। যাক বাবা! তারা বন্ধু রাষ্ট্র ছিল না। নইলে কার ঘাড়ে বন্দুক রাখত।
আরো পড়ুন : সুপার হিরোর ধর্মভাব
‘অ্যান্ট ম্যান’ এ একটা জিনিস দারুণ লাগছে। শেষ দিকে কোয়ান্টাম জগতে চলে যাওয়া। কিন্তু ঘটনাটা হুট করেই শেষ হয় আর বিষয়টা কী ছিল ‘অ্যান্ট ম্যান’রও মনে নাই। হয়ত কোনো একসময় আনুবিক্ষীন মানুষের স্ট্যাটাস পাইয়া তাও জাইনা ফেলবে। ভাবতেছি কবে যে ‘ভাইরাস ম্যান’, ‘ব্যাকটিরিয়া ম্যান’ এ সব আসবে! সিরিয়াসলি!
পুরা সিনেমায় একটা কমেডি মুডে ছিল। মজা লাগছে। অভিনয় দারুণ। অন্যান্য সুপারহিরো মুভির মতো তেমন কোনো কাহিনী। এ্যাকশনগুলো মোটামুটি।
এ সিনেমার সঙ্গে ‘কাপ্টেন আমেরিকা : সিভিল ওয়ার’র একটা যোগ আছে। অ্যাভেঞ্জার্সের অফিস থেকে ‘অ্যান্ট ম্যান’র আনা একটা জিনিস নিয়া হাইড্রা পালায়া যায় শেষে। তার রেশ সেখানেও থাকবে। ক্রেডিট দেখানোর সময় বের হইয়া আসছি। পরে শুনলাম একটুখানি ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’কে (অ্যাভেঞ্জারদের সর্দার) দেখায় ওইটা মিস করছি। টাইম পাস হিসেবে খারাপ না।