‘পিকে’ সিনেমার শেষদিকের একটা দৃশ্য দিয়ে শুরু করি। প্রধান নারী চরিত্র জগত জননী বা জগ্গুর (আনুশকা শর্মা) মুখে শোনা যায়, “ভিনগ্রহের মানুষ সাদৃশ্য প্রাণী ‘পিকে’ (আমির খান) পৃথিবী থেকে দুটি জিনিস নিয়ে যাচ্ছে। তার (নারী) প্রতি ভালোবাসা ও মিথ্যা বলা।” ধর্মতাত্ত্বিক বয়ানে আমরা শুনেছি মিথ্যা সকল পাপের জননী। নারী ও মিথ্যাকে এক করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে বিরল নয়। এমনকি সে ব্যাখ্যা ধর্মের নামেও প্রচার আছে।
জগত সংসারে আরো প্রচার আছে মানুষ জন্মগতভাবে পাপী। পৃথিবীতে ‘পিকে’র আবির্ভাব কারো কারো মতে শিশুসুলভ। অথচ সেও পৃথিবী থেকে নিজ গ্রহে ফেরার কালে ওই প্রাকৃতিক দোষ নিয়ে যায়! অথবা এ দোষ তার ছিল— পৃথিবীর জল হাওয়ার প্রেক্ষিতে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এমন হতে পারে পিকে’র সুসমাচারে ওই দুটি বিষয়কে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। আবার পিকে যেভাবে মানব মুক্তির কথা ফেরি করে, তাকে ক্ষমা করা যেতে পারে। কেন না মর্ত্যে সে গুরুতর কাজ করে ফেলেছে। পৃথিবীর নিত্য নৈমত্তিক গুণ নিয়ে কোন মানুষ নিজ নিজ পাপ কাটাতে পারে না। তাকে দৈব সত্ত্বার দ্বারস্থ হতে হয়। ফলত, প্রেম ও মিথ্যাকে রোমান্টিকতায় রূপান্তর দৈব গুণ হতে বেশ উপাদেয়। মানুষকে অযুক্তি-অবুদ্ধির ফাঁদ থেকে মুক্তি দেয় বলে ‘পিকে’ই মানুষের ত্রাণকর্তা। তিনি মানুষের পাপ লইয়া উর্ধ্বগামী হন। সিনেমার শেষে তাকে ফিরে আসতে বা পুনরুত্থানে হাজির হতে দেখা যায়। কেমন জানি ধর্মবাদী গন্ধ লাগে! লাগুক, কোনো ঝুকিঁ ছাড়াই ‘পিকে’ মানুষকে মুক্তি দেয়— সেটাই তো আসল কথা।
চলচ্চিত্রের কাহিনীতে কিঞ্চিত নজর দেয়া যাক। মানুষের মতো দেখতে ভিন্নগ্রহ থেকে আসা এক প্রাণীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ‘পিকে’র কাহিনী। পৃথিবী সম্পর্কে অজ্ঞ ‘পিকে’ অদ্ভুত অদ্ভুত সরল প্রশ্ন করে। লোকে মনে করে সে মাতাল, তাই নাম হয় ‘পিকে’ (হিন্দিতে ‘পান করেছো নাকি’)। পিকে একটা লকেট দিয়ে তার স্পেসশিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এখানে কাহিনীতে খানিক বিরতি টেনে অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। লকেটের সঙ্গে অতীত সিনেমার যোগাযোগ সহজে আবিষ্কার করা যায়। একসময় লকেট বা গান দিয়ে নাবালক বয়সে হারিয়ে যাওয়া নায়কদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটত। এখানে লকেটের উসিলায় মানুষ তার হারিয়ে যাওয়া বুদ্ধিবৃত্তি ফিরে পাচ্ছে। কেন না, একটাই তার নিয়তি।
যাইহোক, পৃথিবীতে অবতরণের পরপরই পিকে’র লকেট চুরি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে লকেট খুঁজতে দিল্লি তক যায়। দেখা যায়, সবাই বলছে এতো বড় শহরে কতো মানুষ। সেখানে এভাবে জনে জনে জিজ্ঞাসা করে সামান্য একটা লকেট খুঁজে বের করা অসম্ভব। একমাত্র ভগবান সহায় হলে লকেটটা পাওয়া যেতে পারে। যেহেতু তার গ্রহে ভগবান বা ঈশ্বরের ধারণা নাই, সেহেতু পিকে ঈশ্বরকে খুঁজতে থাকে। এর জন্য মন্দির, মসজিদ, গির্জায় যায়। প্রার্থনা করে। কিন্তু লকেট মিলে না। একইসঙ্গে এতো এতো খোদা ও তার বান্দাদের মধ্যে পার্থক্য দেখে বিস্মিত হয়।
এ সবের সাওয়াল-জওয়াব খোঁজার মাঝে আবিষ্কার করে এক ধর্মগুরু তার লকেটকে ভগবানের নিদর্শন বলে প্রচার করছে। নিজের লকেট উদ্ধার করতে গিয়ে ‘পিকে’ দেখে ধর্ম নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা আসলে ধর্মকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা ও ধর্ম নিয়ে ব্যবসার কারণে। মানে খোদা দয়ালু হলে যুক্তি অনুসারে যা হওয়ার তা হচ্ছে না। প্রমাণও করে দেয় ধর্ম নিয়ে ব্যবসা হল মূলধন ছাড়া ব্যবসা। সবশেষে জগত জননীর সাহায্যে ‘পিকে’ ধর্মগুরুর মুখোশ খুলে দেয়।
‘পিকে’র প্রশ্ন নাকি অনেককে চমকে দিয়েছে। একে শিশুসুলভভাবে প্রচার করা হলেও আদতে শিশুসুলভ নয়। আমাদের জীবন যাপনের ধারাবাহিকতা ও অভ্যাসের কারণে ধর্ম বিষয়ে আমরা জানি বলি ধারণা করি। অথবা অনেক কিছু প্রশ্ন করি না। কিন্তু আসলেই কী করি না? করলে এর প্যাটার্নটা কেমন— পরিষ্কার না। এ ব্যাপার নিয়ে ধর্ম-অধর্ম সব জায়গায় আলোচনা আছে। এখানে অনুমানটি এমন যে ‘পিকে’র যেহেতু সে অভিজ্ঞতা ও বেড়ে উঠার বিষয়টি নেই, ফলে তার প্রশ্নগুলোও সে রকম। সে অনেক ঈশ্বরের মাঝে আসল ঈশ্বর খুঁজে, মানুষের শরীরের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের (পিকে’র ভাষায় কোম্পানি) সিল-ছাপ্পর খোঁজে। কিন্তু তার যৌক্তিক এন্টেনায় কোনো উত্তর মেলে না। এমন প্রশ্ন শিশু করে না, বা করার মতো সুযোগ তাদের নাই। এমনকি আমাদের জানাও হবে না শিশুরা এ প্রশ্ন ডিল করবে কিনা। এ ছাড়া আমরা তো নিশ্চিত এ জিনিসগুলো কোনো বড় মানুষ করছে। এটা মূলত ধর্ম সংক্রান্ত ফ্যান্টাসির আছর।
‘পিকে’র আল্লাহ খোঁজার বিষয়টা ইন্টারেস্টিং। অ্যালান টুরিংয়ের পুরানা একটা পদ্ধতির কথা বলা যায়। যা দিয়ে মেশিনের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করা হয়। ধরেন আপনি বাংলা থেকে কোনো কিছুকে ইংরেজি করবেন। আপনাকে বললাম গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করেন। অথবা একজন লোককে বাংলা থেকে ইংরেজি করার একটা ডিকশনারি ধরিয়ে দিলেন। তারপর আপনি তাকে বললেন ইংরেজি কর। সে করল। কিন্তু আপনি ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা বা ভাষার এসেন্স নিয়ে তার দক্ষতা নিয়ে যাচাই করতে চাইবেন। সিম্পলি বাংলা বা ইংরেজী পড়তে পারাকে গুরুত্ব দেবেন না। ব্যাপারটা খানিক এই রকম যে, একটা রোবটকে নামাজ শিখালেন বা পূজা করতে শিখালেন। সে তা ঠিক ঠিক মতো করছে। সূরা বা মন্ত্র ঠিক ঠিক মতো পাঠ করছে— তাইলে কি বলবেন সে আল্লাহ বা ভগবানকে পেয়ে গেছে? অবশ্যই বলবেন না। কারণ আপনি বলবেন জাস্ট এ কাজগুলো করার মধ্যে আল্লাহ বা ভগবানকে পাওয়া যাবে না। মানে আপনি পত্রিকা পড়ার মতো করে এগুলো করেন না। কারণ এরমধ্যে একটা দিব্য অনুভূতি বা চর্চার ব্যাপার-স্যাপার থাকে। সোজা কথায় ‘ঈমান’ বলে একটা বিষয় থাকে। আবার অনুবাদ করা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপত্তির নাও হইতে পারে। কারণ তা হয়ত একশোতে একশো হওয়া সম্ভব। কিন্তু একটা বিবৃতিমূলক বা নৈতিক বাক্য অক্ষরে অনুবাদ এক কথা, তাকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারা আলাদা কথা। স্রষ্টার সঙ্গে যোগাযোগকেও নিশ্চয় আমরা তা বলি না। কিন্তু ‘পিকে’ এ কাজটাই করতে গেছে। অর্থ্যাৎ স্পিরিচুয়াল আকাঙ্ক্ষাকে পাত্তা না দিয়েই শুধু রিচুয়ালে মনোযোগ দিল। সে রিচুয়ালে মুখ ফিরাইয়া ঈমানের কথা বলে। অথচ ধর্মের ক্ষেত্রে তার উল্টো। দুটিই যুগপৎ চলে। বান্দা তার খোদার কাছে দীর্ঘ যাত্রার মধ্য দিয়ে পৌঁছতে চায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ‘পিকে’ চলচ্চিত্রের নির্মাতারা নিজেকে এতো কাটছাট করে দেখতে চান কেন?
মজার জিনিস হলো বুদ্ধি-বৃত্তিক বাস্তবতা ও আধ্যাত্মিক বাস্তবতার ফারাক নিয়ে কোনো বাহাস নাই। এখানে অনুমান হলো খোদা যদি এমন হয়, তবে ব্যাপারটা এমন হবে। মানে ‘পিকে’র বুদ্ধিবৃত্তিতে যা হওয়ার কথা। অর্থাৎ বৃদ্ধিবৃত্তির বাইরে ঈশ্বর নাই। এবং সিনেমার নিয়মে সেটার জয় হয়। এ করতে গিয়ে ‘পিকে’ মানুষকে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ। ফলত, পিকে’ এমন এক চলচ্চিত্র— যেটা ‘মানুষ যে স্পিরিচুয়াল সত্তা’, তা নাই হয়ে যায়। মানুষ নানা কিছু দিয়ে ধারণা তৈরি করে, বিশ্বাস করে, কথা বলে, চিন্তা করে। তার অন্যান্য ইন্দ্রিয় এখানে গায়েব। আমি ধার্মিক বা অধার্মিক যাই হই- ব্যক্তিতান্ত্রিকতা ও মানুষের অন্যান্য ফ্যাকাল্টি বাদ দিয়ে যুক্তিকে প্রধান করে তুললে ‘স্পিরিচুয়ালিটি’কে বুঝা কঠিন। এর সঙ্গে ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, সম্পর্ক— সবই জড়িত। ফলে এগুলোকেও বুঝা যাবে না। এমনকি মানুষ কেন ভাল হবে, অপরের সেবা করবে, সমাজ করবে, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা ফাদবে না— তার উত্তর মিলবে না। এ সবকিছুকে প্রয়োজন দিয়ে হয়ত ব্যাখ্যা করা যায়, কিন্তু অপরিহার্য করে তোলা যায় না। তাই একসময় পিকে ‘ভগবান তুমি কোথায়’ বলে রাস্তায় রাস্তায় হাঁক ছাড়তে থাকে। পরে তা ঠাট্টা-মশকরার বিষয় হয়ে যায়।
ফলত বাহ্যিকভাবে ‘পিকে’ চলচ্চিত্রের বয়ান সে কথাই মনে করাইয়া দেয়- যেভাবে আমাদের দেশের বিদ্যায়তনে বুদ্ধিবাদী বা অভিজ্ঞতাবাদ বলে এক ধরনের জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ পড়ানো হয়। সেখানে মানুষের কোনো একটা বৃত্তিকে স্বীকার করা হয়। অপর অপর বৃত্তিকে অগ্রাহ্য করা হয় বা তাকে নিয়ে কোনো কথাই বলা হয় না। টিকাভাষ্যমূলক পড়াশোনা তাই তো বলে। কিন্তু জ্ঞানগত প্রক্রিয়া এতো নিসঙ্গ নয়। ‘পিকে’ টিকাভাষ্যের মতো। তাই মানুষকে মানুষ দিয়ে না পড়ে ভিনগ্রহবাসী দিয়ে পড়তে হয়।
এখানে ফেসবুকে পাওয়া দুটি মন্তব্য উল্লেখ করি। এক. ‘পিকে’ ষাট দশকের সমাজতান্ত্রিক প্রচারণার মতো। দুই. ব্রিটিশরা যেমন শিক্ষার আলো জ্বেলে কলোনি তৈরি করে- সে রকম ভাবনার সিনেমা এটি। এ ধরনের ক্রিটিক সত্ত্বেও ‘পিকে’র জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা বলে দেয়— নিঃসন্দেহে টিকাভাষ্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসা রয়েছে। এমনকি যুক্তির শাসনেও। আমরা শটকাটে গুরুতর বিষয়গুলোর মীমাংসা করতে চাই।
রাজকুমার হিরানী দৃষ্টিভঙ্গি উপাদেয়। তার থেকে শেখার আছে- কোনো বিষয়কে কতটা সহজার্থে দেখানো যায়। সে অর্থে ‘পিকে’র নির্মাণ প্রশংসার দাবিদার। সহজার্থের কারণে ‘পিকে’র কোথাও হীনার্থের বা হীনমন্যতার ব্যাপার নাই। ‘পিকে’ যদিও এ ধরনের নির্মাণের মূল দিকটাই রক্ষা করেছে— ধর্মকে সরাসরি নাই করে পাবলিককে উত্তেজিত করা যাবে না। অন্যক্ষেত্রে যেটা জনপ্রিয়, তা হলো সকল ধর্মের ভাল জিনিসকে এক ডেগচিতে এনে প্রচার করা। হিন্দি সিনেমায় এ শিক্ষামূলক দিকটা বরাবরই উপস্থিত। ‘পিকে’ও সে রকম, তবে সম্বন্বয়ের দানব তৈরির দিকে যায় নাই। জিনিসটা ভাবতেই কেমন লাগে- সর্বধর্মের ভাল দিক নিয়া উপস্থিত ওই দানব সবসময় নিজের খুঁত সারাতে ব্যস্ত। তার ভয় থাকবে, কোন ভাল জিনিসটা বাদ পড়ল। কিন্তু ‘পিকে’ যেহেতু শিশুসুলভ ও ‘দৈব’— তাই তার মধ্যে এ ব্যাপারটা নাই। সে অন্যরকম দানব হয়ে নিজেকে হাজির করেছে। পৃথিবীতে এতো বোকা মানুষ আছে- একটা পিকেও নাই।
একইসঙ্গে ভারতের মতো দেশে— যেখানে বিজেপির উত্থানে আপনি শঙ্কিত হতে পারেন। কিন্তু সেখানেই প্রতিবাদ ও হুমকি সত্ত্বেও ‘পিকে’র প্রদর্শন বহাল আছে। একইসঙ্গে জেনে রাখুন আরেক ধর্মীয় গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ইনসানজীর রক অ্যান্ড রোল মার্কা ধর্মীয় চলচ্চিত্র ‘মেসেঞ্জার অব গড’ চলচ্চিত্রটি প্রথমে সেন্সর সনদ পায়নি। কারণ এতে কুসংস্কার ছিল, ওই ভদ্রলোক নাকি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করছেন— এমন কারণে। যাইহোক পরে আদালতের মাধ্যমে ছাড়পত্র মিললে সেন্সর বোর্ড প্রধান পদত্যাগ করেন। কারণ তিনি ধর্মীয় কুসংস্কারের বিপক্ষে। আবার ধরেন রাজকুমার হিরানি ধরে নিয়েছেন, এলিয়েনরা হাত ধইরা অনেক কিছু বলে দিতে পারে। কিন্তু মানুষ যখন দাবি করে সেও এ রকম অনেক কিছু বলে দিতে পারে- যেমন- ‘পিকে’ সিনেমার ধর্মগুরু। তখন সে তা বিশ্বাস করবে না। এটা একটা মজার বিষয় বটে! এটা কিন্তু সায়েন্স ফিকশন।
‘পিকে’ সিনেমায় ধর্মীয় কুসংস্কার ও ধর্মব্যবসার পাশাপাশি ধর্মকে ধরতে না পারাকে একাকার করে দেখানো হয়েছে। এমনকি রংনাম্বার বলে একটা কনসেপ্টের আমদানি করে— ধর্মকে নাই করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ‘নাই’ করাকে এতো দুর্দান্তভাবে করা হয়েছে যে— এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। অবশ্যই এ মত প্রকাশকে আমরা না করতে পারি না। কিন্তু আপনি ধর্মের জগতে ঢুকতে না পারার ব্যর্থতা দিয়া তাকে খারিজ করবেন তা কেমন কথা। তেমনি অপর কেউ আপনার বুদ্ধিবৃত্তিকে ধরতে না পারার ব্যর্থতা দিয়ে যদি তাকে খারিজ করে দিতে চায়- তাও তো মানা যায় না। যেমন ‘পিকে’র বুদ্ধিবৃত্তি আমাদের মাথার উপর দিয়ে যেতে পারে, তাই বলে একে অস্বীকার তো করা যাবে না। এমন ঘটনা মানুষের দুনিয়ায় ঘটছে!
শেষ করা যাক, আরেকটা মজার বিষয় দিয়ে। পিকে চলচ্চিত্রে জগত জননীর কাহিনীটা অদ্ভুত। জগত জননী বেলজিয়ামে পড়াকালে পাকিস্তানী মুসলিম ছেলে সরফরাজের প্র্রেমে পড়ে। তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত পরিবারকে জানায়। তার বাবা আবার প্রতিটি কাজে এক ধর্মগুরুর উপদেশ মেনে চলেন। এতটাই যে, তাদের বাসার ওয়াশ রুমে ওই গুরুর ফটো ঝুলে থাকে। ধর্মগুরু তাকে বলে, এই মুসলমান পাকিস্তানী কখনো তার মেয়েকে বিয়ে করবে না, ছেড়ে চলে যাবে। জগত জননী এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। সরফরাজকে বলে পরদিনই বিয়ে করবে। সরফরাজ রাজি হয়। কিন্তু পরদিন জগত জননী হাজির হলেও ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অফিসে সরফরাজ আসে না। এক চিঠির মাধ্যমে জানায়, এ বিয়ে সে করবে না। প্রতারণার অপমান নিয়ে জগত জননী ইন্ডিয়া চলে যায়।
পরে জানা যায়, ওই চিঠি সরফরাজ লিখে নাই, জগত জননীকেও লেখা হয় নাই। অন্য একজনের চিঠি ভুল করে তার কাছে চলে এসেছে। এটা লজিক্যালি জানাইয়া দেয় পিকে। এ ঘটনার মজার দিক হলো জগত জননী নিজের ভেতর থাকা গুরুজীর প্রতি বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ না করে প্রতারিত হন। সে ধরে নিয়েছিল গুরুজীকে প্রত্যাখ্যান করছে। অথচ ওই বিশ্বাসকেই লালন করছিল। নিজেকে ও নিজের বিশ্বাস প্রবণতাকে প্রশ্ন করেন নাই। ব্যাপারটা কী খানিকটা এমন— আমরা ধর্মকে না না করতে করতে ধর্মের রিচুয়ালে ঢুকে পড়ি কিন্তু প্রবাহমানকে টের পাই না। অথবা ধর্ম বলতে শুধু গুরুজীকে বিশ্বাস টাইপ কিছু বুঝি। এখন বলুন আপনি যদি ধর্ম না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাক্ষণ ধর্মের ভয়ের নিচে বসবাস করেন- এটা কার দোষ?
পিকে
পরিচালনা : রাজকুমার হিরানি
কাহিনী : অভিজিৎ যোশী, রাজকুমান হিরানি
প্রযোজনা : বিধু বিনোদ চোপড়া
অভিনয় : আমির খান, আনুশকা শর্মা ও সৌরভ শুক্লা
মুক্তি : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪
……………………………………………………..
কৃতজ্ঞতা : ইফতেখার জামিল। রচনাকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৫