সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি)র নতুন প্রযোজনা আনিকা মাহিন রচিত ও কামালউদ্দিন নীলু পরিচালিত ‘ম্যাকাব্রে’। নাটক শুরুর বিশ মিনিটের মাথায় ঘুমাইয়া পড়ি, খুব ক্লান্ত ছিলাম বলে। যুগযন্ত্রণাময় পৃথিবী নিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পকর্মটি আমারে জাগাইয়া রাখতে পারে নাই। ঘুমও মনে হয় মিনিট বিশেক স্থায়ী ছিল। পেছনে একটা বাচ্চা ছেলে খুব হাসতেছিল, অভিনেতাদের কাণ্ড-কারখানা দেখে। তাই ক্ষণিকের ঘুম বিরামহীন হয় নাই। যাই হোক, বিশ মিনিট অনেক সময়। এ অপচয়ের কারণে নাটক নিয়া কিছু না বলি। ইন্টারেস্টিং জিনিস হলো নাটকের শেষে এক ডাইনি বুড়ির সামনে আকাশ থেকে তানপুরা নামে। বিষয়টি বোধহয় শান্তিময়তার প্রতীক। ডাইনি হলেও শান্তির দরকার আছে। সকলের শান্তি হোক!!
লোকজনের মুখে শুনলাম এ নাটকের বাজেট ৫০ লাখ টাকা, অনেক প্রপস বিদেশ থেকে আসছে। অবশ্য এ কথা লেখার জন্য নাটক দেখার দরকার পড়ে না।
(১৪ অক্টোবর ২০১৪)
প্রাচ্যনাটের প্রযোজনা মঞ্চনাটক ‘কিনু কাহার থেটার’। কাজী তৌফিকুল ইসলামের নির্দেশনায় মনোজ মিত্রের নাটকটির উপস্থাপনটা খানিকটা অন্যরকম। একটা লিনিয়ার বিষয়রে ভেঙ্গে অন্য কিছু দৃশ্য হাজির করা হয়েছে। নাটক আর নাটকের বাইরের দৃশ্য।
ফলে দুইটা জায়গায় দুই ধরনের অনুভূতি, কিন্তু আলাদা একটা ঐক্য তৈরি হয়েছে। মঞ্চ সিম্বল হতে পারে, কিন্তু তারও কেন্দ্রবিন্দু আকারে ঘটমান কিছু আছে— তাই তো দেখা গেল, নাকি! কাহিনীর ভেতর যাওয়ার সময়ে হঠাৎ বাহির হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা চমৎকার।
এতে কি বিষয় তার গভীরতা হারায়? মনে হয় না। বরং, কোনো বিষয়ে আধেক কথা বলার মধ্য দিয়ে— পুরা বিষয় বলে কিছু থাকতে পারে এমন ধারণার বীজ বপন করে দেওয়া হয়।
এক কথায় ধুপ, প্রদীপের আলো ও তারা মায়ের বন্দনা দিয়া শুরু হওয়া নৃত্য, গীত আর কমেডিময় নাটকটা জমছে দারুন।
(২৬ অক্টোবর ২০১৪)
শাহমান মৈশানের রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় থিয়েটরেক্সের ‘দক্ষিণা সুন্দরী’।
নৃত্য-গীতের অপূর্ব সম্বন্বয় আর নট-নটীদের শক্তিমত্তা সত্যি মুগ্ধ করার মতো। এটা হলো বাইরের বিষয়। মূল জিনিস হলো কাহিনীর গভীরতা। যদিও এর একটা ট্যাগলাইন আছে— ‘সর্বপ্রাণবাদ’ সম্পর্কীয়। সেটাও উহ্য থাক। প্রাণ তো প্রাণেই খেলে।
বাংলার ঐতিহ্যিক আবহকে চমৎকার তুলে ধরেছে এ নাটক। একইসঙ্গে অতীত অথবা যা আসলে অতীত নয়, বর্তমানের মধ্যে থাকা চিরায়ত অনুভব ও তার সঙ্গে বর্তমানের যোগসূত্রকে বিশেষায়িত করেছে। এতে প্রকৃতি ও পুরুষের সঙ্গে হাজির রাজনীতি, ধর্ম, অর্থনীতি ও সম্পর্কের জটিল জাল।
স্পিরিচুয়াল একটা বিষয় আছে। ঠিক ধর্মীয় অর্থে নয়, বুদ্ধির অগম্য কিছু হিসেবে। বুদ্ধির জগতে অজানা অথবা হারিয়ে ফেলা কিছু বিষয়ের দাগ এখানে আছে। মোটাদাগের বিভাজন ছাড়াই প্রকৃতিতে যে ঐক্য আছে— ধ্বংস, জন্ম ও লীলা তা নাটকের মূল বিষয় হয়ত বা।
বুদ্ধিমত্তা ও সন্দেবাদিতার গর্বে আমাদের পা পড়ে না- তার একটা ভাল ক্রিটিক হয়ত এ নাটক। আবার খানিক সম্বন্বয়ও আছে ধর্মে-মর্মে, চিন্তা-চর্চার রেফারেন্সে। সম্বন্বয় তো সম্বন্বয়! তার চরিত্র আলাদা করা মুশকিল আমার কাছে। অন্তত এ কালে সম্বন্বয় একটা ভাল প্রলোভন। হয়ত সবকালে!
সব মিলিয়ে মনে হলো— আরেকবার দেখা যেতে পারে।
(৩১ অক্টোবর ২০১৪)
*মন্তব্য তিনটি ফেসবুকে পূর্ব প্রকাশিত। ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।।