তারেক মাসুদ কার কাছে ফিরবেন? তারেক মাসুদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে এসে এ প্রশ্ন আচানক কোনো বিষয় নয়। এ প্রশ্ন তার জীবিতকালেও জারি ছিল। এখনও জারি আছে। যেহেতু তারেকের ভাব-ভাষা ও আকাঙ্খা সমাজে অচল হয়ে যায় নাই। অবশ্য অচল হওয়া দিয়া কোনো আলোচনার করব কি করব না- সেটা ঠিক করা কাজের বিষয় না। এ প্রশ্ন প্রসঙ্গে বলা যায়- এ প্রশ্নের উত্তর তাদেরই মধ্যে আছে, তারেক সেলুলয়েডের পর্দায় যাদের কথা বলেছেন। বা যাদেরকে পথ দেখাতে চেয়েছেন। পথ দেখানো কথাটার মধ্যে শিক্ষামূলক গন্ধ আছে। তারেকের চলচ্চিত্র শিক্ষামূলকও বটে। সার্বিকভাবে বললে, সব চলচ্চিত্রই শিক্ষামূলক। কোনোটা হালকা চালে, আর কোনোটা একটু মোটাদাগে। এই যা! তবে এটা স্বীকার করে রাখা ভালো- তারেক মাসুদ বাংলাদেশকে নতুন একটা চলচ্চিত্র ভাষা দিয়েছেন। অনুপ্রাণিত করেছেন নতুন প্রজন্মকে। এমনকি যারা তারেক মাসুদরে খারিজ করে সিনেমা বানাবেন, তাদের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য।
যাদের কথা মনে পড়ছে- আনু, সোহেল ও রুহুল। এরা তারেকের তিনটি পূর্ণ কাহিনীচিত্রের (মাটির ময়না, অন্তর্যাত্রা ও রানওয়ে) প্রধান চরিত্র। প্রথমজন নিতান্ত বালক, বাকি দুইজন কিশোর বা তরুণ। অর্থাৎ, তাদের ভবিষ্যতের রাহবার হওয়ার সম্ভাবনা জারি রাখে চলচ্চিত্রগুলোর কাহিনী অথবা তিনি যাদের এ ক্যাটাগরিতে ফেলতে চান। তারেক তাদের কোথাও নিয়ে যেতে চান। কোথায়? এটা ভাবতে গিয়া আবহমানতার ধারণা আসে। কারণ, তারেকের সিনেমায় এ প্রিকন্ডিশান জারি লক্ষনীয়। যেটা অনেকটা আইডিয়াল ওয়ার্ল্ডের মতো। এমন কিছু যাতে মাটির সোদা গন্ধ, শ্বাশত বলে একটা বিষয় থাকে। যার কাছে মানুষের ফিরতে হবে। বিষয়টা প্রথম চলচ্চিত্রে অনেক প্রবল। অন্য দুটিতে খানিকটা ফিকে হলেও- ফিকে হওয়াটাই এখানে তার সবল উপস্থিতির সাক্ষী। আপনি প্রশ্ন রাখতে পারেন, প্রকৃতই এমন কিছু থাকে কি? প্রকৃতই থাকে কী এটা জটিল বিষয় অথবা ‘থিঙ্ক ইটসেলফ’ অর্থে হয়ত জানা যায় না। তারপরও আমরা খুঁটি গেড়ে একটা দশায় থাকি। সে দশা দিয়ে অন্য আরও অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে চাই। সে অর্থে আমার কথাগুলোও একটা দশায় আপতিত। তো, দেখা যাক এ দশা মিলে আমাদের গন্তব্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
ধরা যাক, মাটির ময়নার আনুর কথা। তার আশেপাশে এতো এতো কথামালা, মোটিফ ছড়ানো- যাকে আমরা লোকজ বলি। এমন যা ইসলাম নামে প্রবল হতে চায়- তাও লোকজ। একে আবহমানতার দোহাই দিয়া একটা অবস্থা আকারে জারি রাখতে চাই। সেখানে রাজনৈতিক ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়। যার মাধ্যমে করা হয় তা নিতান্ত সাংস্কৃতি উপাদান মনে হতে পারে। এ নিতান্তকে নিতান্ত ধরলে চলে না। সংস্কৃতি ও ইসলামের এ দ্বন্ধটা বাংলামুলুকে অনেককাল ধরে গুরুতরভাবে জারি আছে। সে বিষয়গুলো এখানে- নৌকাবাইচ, জারিগান, পুঁথিপাঠ অথবা মাটির ময়না। হাঁ মাটির ময়না, তারেক দার্শনিকতায় ধরা পড়ে না- জগতে আসলে আমরা সকলেই মাটির ময়না। অতিধার্মিক বাপের খপ্পরে পড়ুক অথবা সূফি তরিকায়- যে কোনোটাই। কথা হলো কোনো ছলে তারে আমারে নিজের দশায় নিমন্ত্রণ করি। সেখানে হাজির হয় উদারতার ইসলাম ও ‘জঙ্গিপনা’র ইসলাম নামে ভাগাভাগি। যেটা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শরীয়ত ও মারেফাতের দ্বন্ধে গিয়ে দাঁড়াবে। এ চলচ্চিত্রে আনুর শরীয়তপন্থী ‘কট্টর’ মুসলমান বাবার বিপরীতে বহুবিচিত্র লোকসংস্কৃতি ঘাড়ের উপ্রে নিঃশ্বাস ফেলে।
আদতে সর্বহরণকারী আবহমানতার সংস্কৃতিতে উদারতা কখন হাজির হয় বা বিশ্ব গণতান্ত্রিক নিউ লিবারেল পরিসরে? যখন আপনি কারো মতকে দমন করতে পারেন না। কারণ এ সব মতাদর্শ টিকে থাকে ভাষা, চিন্তা অথবা আত্মার গহীনে। যেটারে লোকে প্রগতির নামে খারিজ করে, ঐতিহ্যের নামে খারিজ করে। কিন্তু খোদ বিষয়টাই বিদ্যমান অবস্থারে পাল্টাতে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করে। যার ইতিহাস বহুবৈচিত্র্য ও জটিল, আশ্রয়স্থানগুলোও জটিল। একইসঙ্গে ধর্মের বহুবিদ লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসকে স্রেফ গায়েব করে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এ বাংলাদেশে সাধারণত বিরোধাভাস তৈরির জন্য পাকিস্তান আন্দোলনকে তুলে ধরা হয়। কিন্তু খেয়াল করলে সহজে চোখে পড়বে, বাংলাদেশের আর্টফিল্মের তরিকায় একপক্ষের পাকিস্তান চাওয়ার মধ্য দিয়ে জটিল রাজনৈতিক (সামাজিক ও অর্থনৈতিক) অবস্থায় ব্যাখ্যা করা যায় না। এমনকি পাকিস্তান চাওয়ার মধ্যে নানান পক্ষের বিষয় ছিল। পুরোটা মুসলমানী ব্যাপার বলে দেখানোর চাল তো পুরানা। এটা স্রেফ উদাহরণ। আমার দাবি এ নয় যে, তারেকের ইসলাম বোঝাপড়া এখানে আটকে আছে। কিন্তু বাংলাদেশে তো এখনও দ্বিজাতিতত্ত্বের ভুল সংশোধনের কান্না জারি আছে। লক্ষণীয় হলো, এ কান্না সমাজের কোন স্তর থেকে আসে।
আগের কথায় ফিরে আসি। সে যে ভাষা, চিন্তা বা আত্মার গহীন থেকে যাকে দমন করা যায় না, তারে খানিকটা উদারতার মোড়ক দেখাইতে হয়। বলতে হয়, দেখ তোমার ইতিহাসের মধ্যে এই ব্যাপারগুলো আছে। তুমি আমার অপর না- যদি এ এ বিষয়গুলো পালন কর। কিন্তু অপর না হওয়ার মধ্যে অপর হওয়া জ্যান্ত থাকে। এটা হলো তরিকা বাতলানো উদারতার ডিলেমা। এখানে বলা হয় তুমি কেমন থাকবা তার সিদ্ধান্ত তোমার না, আমার। কারণ এটা তোমার জন্য ভালো, তুমি বুঝতেছো না। ফলে, আমাদের নিজের কথাগুলোই অন্যরে বলতে হয়, এটা তোমার কথা।
তখন সেই মতাদর্শরে আমার মতো করে হাজির করে বলতে হয়- এটা হলো উদারতা। বাংলাদেশের পরিসরে কেন উদার ইসলামরে হাজির হইতে হয়। ধরেন তারেক মাসুদদের যে সাংস্কৃতিক বলয়ে বেড়ে উঠা (স্নাতক পর্যায়ে) সেখানে তো কোনো অর্থে ইসলাম হাজির ছিল না। বা অতি সাম্প্রতিক গুড়িয়ে দেওয়া ছবির আর্ট বা আজিজ মার্কেট। সেটারে যদি আবহমান বাঙালিত্ব ধরা হয়- সেখানে মুসলমানদের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ হাজির নাই, যেটারে মুসলমানরা নিজেদের ল্যাগাসির বলে দাবি করতে পারে। বরং, আশির দশক জুড়ে টুপি দাড়িওয়ালা বলতে ‘তুই রাজাকারের’ জিগির ছিল। ধর্মে চিহ্নগুলো হয়ে উঠছে ভীতিকর ও বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী। ইসলাম এখানে প্রতিক্রিয়াশীলতা অর্থেও বিরাজমান। তাইলে, তারেককে আসলে সেদিকে আগাইতে হইলো যাদের ‘না থাকা’র মধ্য দিয়ে থাকাটা প্রবল হয়ে উঠবে। তাই নিজের জীবনের অছিলায় সেই ঘরের খবর নিতে গেছেন- যার বেখবরে বাঙালি আসলে নিজে বেখবর ছিল। কিন্তু কতটা। যাইহোক, তিনি সিধাসিধা বুঝতে পারছেন- ইসলামরে মোকাবেলা না কইরা আগানো যাবে না।
তাই বাঙালির বইলা একটা ইসলামী তরিকা হাজির করতে গেছেন। সেখানে বেইনসাফের বিরুদ্ধে ইসলামের ভূমিকা হাজির থাকার কথা না। নাইও। ইসলাম ইতিহাসের মধ্যে কোনো মৌলিক বচন দিয়া আগাইয়া গেছে তার কথাও নাই। ফলে তারেক মনের পশু কোরবানি, গুটিকয়েক বাউলিয়ানা বা শহুরের আধ্যাত্মিকতাপনার উত্তর দিতে পারেন- কিন্তু ইসলাম প্রশ্নের আশেপাশে দিয়ে যায় না। মোকাবেলা করতে পারে নাই। কারণ, গ্রামের মানুষ বলে যাদের হাজির করছেন তাদের মনের জগত বলে আলাদা কিছুরে হাজির করতে হয় না। নিতান্ত জাগতিক অর্থে এ বোঝাপড়াও অনৈতিহাসিক। ফলে তারেক আনু বইলা নিজের কাছে ফিরতে পারেন, আনু পিতারে ভাঙ্গতে পারেন- এরপরে কী হবে তার উত্তর দিতে পারেন না। সে অর্থে তারেক আনুর কাছে ফিরতে পারেন না, যদি না আনুরে এ সব প্রশ্নের ভেতর না নিতে পারেন। পারেন নাই, কারণ ইসলামের কোনো মৌলিক জায়গায় তিনি প্রশ্ন তুলেন নাই। বোরাক মেটাফোর বা কওমি মাদ্রাসার শান্তিবাদী হুজুরের (!) মধ্যে ইসলাম আটকে থাকে। এমনকি এ শান্তিবাদী হুজুররে উদ্ধারের কোনো কাহিনী নাই। যদি আনু ওই জায়গা থেকে ফিরে আসে – তাইলে তারেও মোকাবেলাহীন একটা জীবন বেছে নিতে হবে। যেখানে অন্যদের চেয়ে অগ্রসর তারেক আটকে ছিলেন বৈকি।
তবে অন্তর্যাত্রার সোহেল! ব্রিটেনে বড় হওয়া সোহেল। সে কিনা বাবার মৃত্যুর পর দেশে ফিরে দেশ-বিদেশের কালচার নিয়া দ্বন্ধে পড়ে। যারে জানত না, চিনত না- সে কত আপন। তো, সোহেলরে তারেক শুনাইয়া দেন আনুশেহ-বুনোর ফিউশান। ব্রিটিশ শিশুদের কবর দেখে, উড়িয়াদের গান শুনে। কিন্তু সোহেলরে কোনো লাইন দিতে পারে না। ফিউশানরে তারেক রিজেক্ট করতে পারেন নাই, পারার দরকার আছে বলে মনে হয় না। তবে সেখানে নিজের বলে আবহমানতার গন্ধ থাকতে পারে- আদতে সেটা কোনো ভাবের রিপ্রেজেন্ট করে না, দৈন্যতারে ডাইকা আনে। কিন্তু একইসঙ্গে তারেক ফিউশানের বাস্তবতারে অস্বীকার করতে পারেন নাই। এটা ঘটমান বাস্তবতা বলে। তিনি যেহেতু আইডিয়াল- আবহমানতা জারি রাখতে চান, তাইলে এভাবে আটকে থাকা ক্যান। মানুষ যদি স্থানিক পরিসর অতিক্রম করে তার সম্ভাবনা পরিসরও তো বড় হয়। সোহেলকে সে দিকে ফিরাতে চান না। জাস্ট কালচার বলে একটা জিনিস দিয়া প্রেম জাগ্রত করতে চান। এ জাগ্রত হওয়ার মাজেজা তারেক হয়ত অভিবাসীদের নিয়ে সিনেমা করা ফান্ড পাইয়া বুঝতে পারছেন অনেকখানি। এ ছাড়া ধরেন ঐ সময়গুলাতে ব্রিটিশ প্রবাসীদের বলা হচ্ছিল, তারা কিনা বাংলাদেশিদের মধ্যে ‘জঙ্গিবাদ’ সম্প্রসারণে টাকা ঢালতেছে। কিন্তু কিন্তু ‘জঙ্গি’ না হোক এ ফিউশানের কাছে কোন মাজেজা নিয়ে ফিরবে। সেখানে এতো এতো আবহমানতার মধ্যে ফিরার তাড়া থাকার কথা না।
তারেকের সবচেয়ে নিখুঁত কাজ ‘মাটির ময়না’ আর চিত্তাকর্ষক ও কৌতুকোদ্দীক কাজ ‘রানওয়ে’। একে মাটির ময়নার দূরবর্তী দশা আকারে দেখা যাইতে পারে। তবে আমি দেখি না। কারণ রানওয়ের ‘জঙ্গিপনা’র ইতিহাস বড়ই খাপছাড়া। মাটির ময়নার মতো খানিক সিরিয়াস তর্কও নাই। একজন মানুষের ‘জঙ্গি’ হয়ে উঠার জায়গা পরিষ্কার না। বরং, সে বয়ান- সহজ সরল ছেলেগুলারে ধর্মের নামে বেপথে নিয়া যাইতেছে। যা আরও অপরিচ্ছন্ন করে সিনেমাটার শেষ দৃশ্য। রুহুল নামের নিম্নবিত্তের পোলা, যেখানে আরিফ ভাইয়ের পাল্লায় পড়ে ‘জঙ্গি’ হইয়া যায়। সে শেষমেষ ফিরে আসে। মা দুধ দিয়া মুখ ধোয়াইয়া দেয়। তারপর ‘টেবুলা রাসা’ বা সাদা কাগজের মতো রুহুলের মন শূন্য হইয়া যায়। এটা আসলে কোন দশা! আমরা জানি না। তারেক হয়ত জানতেন বলে মনে করতেন। তাই রানওয়ের শেষদৃশ্যটা এমনভাবে সাজাইছেন। হাঁ, তারেকের মধ্যে একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস ছিল- এ গণতন্ত্র, মডারেট ইসলাম এ সবরে উদারতার অছিলায় হাজির করার সততা। এগুলারে সরলভাবে ডিল করার সরলতা। রানওয়ে মুভির একটা দৃশ্য খুবই ইন্টারেস্টিং। এখানকার ‘জঙ্গি’ আরিফ ভাই- একসময় মডারেট গণতন্ত্রী; ইসলামী রাজনীতি করতেন। তো, তার প্রাক্তন রাজনৈতিক সঙ্গী ও স্ত্রী আইসা তারে জেরা করে ক্যান গণতন্ত্রের লাইন ছাড়ছে। আরিফ ভাই বলেন, গণতন্ত্রের রাজনীতি দিয়া ইসলাম কায়েম হবে না। বউও তারে ছাইড়া কথা বলে না। শেষ মেষ এর ব্যর্থতাও খানিক বুঝা যায়। তখন মনে হইছিল মডারেট ইসলাম একটা সেফ পজিশনে আছে, তারেক সেটা দিয়া এ ‘জঙ্গিবাদ’র মোকাবেলা করতে গেছেন। কিন্তু দুনিয়া দেখেন- এখন পুরানা মডারেটের ভাত নাই। তারে আরও উদার হইতে হবে। যেহেতু উদারতার শেষ নাই। তাই প্রস্তাব করাই যেতে পারে।
বাংলাদেশের অজ্ঞানতা ও অপরকে শিক্ষা দেওয়ার প্রগতির দোহাইয়ে মাদ্রাসা বা ধর্মের প্রশ্নে কথা তোলা সহজ। তারা কেন বিজ্ঞানবাদী না বা ভোকেশনাল ট্রেনিং নেই না, তা বলা সম্ভব। এটা হইলে তারা তো ‘জঙ্গি’ হইত না। কিন্তু বোমা মারা তো একটা ভোকাশনাল ব্যাপার। যাই হোক, যে পাঠাতনের উপ্রে দাড়াইয়া এ সব প্রশ্ন, তারে প্রশ্ন করবে কে? অথবা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সুবিধাগুলা সব সময় কারা পাইয়া আসছে? বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশ্ব রাজনীতি, আরব বসন্ত, শাহবাগের গণজাগরণ, গণতন্ত্রের দৈনদশা, অনির্বাচিত সরকার এবং তার দেশী-বিদেশী সমর্থন, জাতীয়তাবাদের ফ্যাসিবাদীরূপ, গণমাধ্যম নীতিমালা বা ৫ মে’র মতিঝিলের হেফাজত দমন এ সব একদম সরল ঘটনা না। এর মধ্যে গভীর বিদ্বেষ ও শত্রু খোঁজার তাড়া আছে। যার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। সাহিত্যে দেখেন, শিল্পে দেখেন, প্রগতিশীলতায় দেখেন; পাবেন। তাই আশা জাগানিয়া চরিত্র হইলেও আদতে আনু, সোহেল বা রুহুল টেবুলা রাসা হইয়া জীবন শুরু করতে পারেন না। তারা আরও জটিল ও গুরুতর প্রশ্নের সামনে নিজেরে হাজির রাখছে। তাদের বিশ্ব ইতিহাসের কতো কতো প্রশ্নের ভিতর দিয়া যাইতে হবে- সে খোঁজ আমরা রাখি না বা স্রেফ গায়েব করে দিই।
সে দিক থেকে তারেক একটা দিক তো দেখাইয়া গেছেন। যা একটা শ্রেনীরে ভাব দিবে, ভাষা দিবে। তারা দাবি করবেন- তারা আরো ঋদ্ধ হইছেন। তারেক বাংলাদেশের অপরাপর উদারতা বেচনেওয়ালাদের মতো সংকীর্ন না। অপরকে বুঝার সামান্য চেষ্টা তার ছিল। কিন্তু, তিনি আসলে যাদের কথা বলছেন- তাদের কাছে ফিরবেন না, তারাও তার সিনেমা দেখে না। কারণ, যে ইনসাফের আকাঙ্খায় নিজেরে সপে দিছে, সে কখনও রানওয়ের বয়ান নিবে না। আমরা নিব। কারণ, আমি অন্যের মত, বাহাসরে শুনতে রাজি না। অন্যের মত পর্যালোচনার তাড়া আমার নাই। এমনকি নিজেকেও না। আর তার সম্পর্কে আমার সরল একটা বয়ান আছে, তারে আমি উদারতার বাণী শুনায়। কিন্তু তারেকের ওইসব চরিত্রের কাছে ব্যাপারগুলা এতো সহজ না। তারেকের সাহসের তারিফ- তার চরিত্রগুলো সমাজে বাইচা থাকবে তিনি ভাবতে পারছেন। শুধরানোর তরিকা আছে তাও ভাবতে পারছেন। কিন্তু ব্যাপারগুলো বিনোদনময়, অবিশ্বাস্য ও মনোতুষ্টির। যা সিনেমা হিসেবে কোন সিনেমার কাছে অপ্রত্যাশিত কিছু না।
*লেখাটির অংশবিশেষ দ্য রিপোর্ট২৪.কম ও মাসিক দখিনায় প্রকাশিত।
**ফিচার্ড ফটো: সাদিক আহমেদ।