হিন্দী মুভি যে কারণে পছন্দ করি, বিশেষ করে ঝলমলে হিন্দী মুভি, তার বিপরীত কারণে অন্য দেশের মুভি পছন্দ করি। কিন্তু ইদানিংকার খুব কম মুভিতে পুরানা মেলো-ড্রামা পাওয়া যায় অথবা আমিই কম মুভি দেখছি। তবে এখনো আমি মাশালা মুভির ভক্ত। গান আমাকে যা রিলিফ দেয়। কিন্তু হুট করে এর চেয়ে আলাদা কিছু মুভি এসে যায়- ভালো না লেগে পারে না।
অভিষেক কাপুরের প্রথম মুভি ‘আরিয়ান’ খুব একটা ভালো না লাগলেও দ্বিতীয় মুভি ‘রক অন’ দেখেছি বেশ কয়েক বছর আগে। গান, বন্ধুত্ব মান অভিমানের সেই মুভি দারুন লেগেছিল। দারুণ কিছু গান ছিল। অনেকটা মিউজিক্যাল বললেও ভুল হবে না। প্রথম মুভিতেই অভিষেক দেখিয়েছেন তিনি অন্য রকম কিছু বলতে পারেন। তৃতীয় মুভিতে এসে তিনি নিজের সম্ভাবনা ও অবস্থানকে পাকাপোক্ত করলেন।
চেতন ভগতের নাম শুনলে শিব কেরা-র নাম মাথায় আসে। যদিও কারো বই আমি পড়ি নাই। শিব কেরার বই বন্ধুদের পড়তে দেখেছি। এটা নাকি দারুন অনুপ্রেরণা দেয়। চেতন ভগত যতটুক জানি উপন্যাস লিখেন। শুনেছি আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়ট’ নাকি তার কাহিনী থেকে মেরে দেয়া। সেখানে বেশ উপদেশ আছে বটে, তবে উপভোগ্য। কাই পো চে সেই ধারার বাইরে নয়। অভিষেকের দ্বিতীয় মুভিটি চেতনের ‘দি থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি। দেখা হচ্ছিল না- কি না কি উপদেশ দেয়। যদিও উপমহাদেশ কেন দুনিয়ার সব দেশের মুভিই কিছু না কিছু উপদেশ দেয়। তফাত হলো, আমরা বেশির ভাগই মিষ্টিতে ভরে ট্যাবলেট খেতে চাই।
‘কাই পো চে’ এই বছরের ফেব্রুয়ারির মুভি। বছর পার হতে মেলা সময়। এর মধ্যে এক সমালোচক বলে ফেলছেন এটা বছরের সেরা মুভি। ফেসবুকে এই মুভি নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে আলোচনা হচ্ছে বেশ। তারপরও একজন বলে ফেলল, আশিকী টু এত ব্যবসা করে- আর ‘কাই পো চে’ তেমন ব্যবসা কেন করে না। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বটে!
‘কাই পো চে’ মুভি হিন্দী হলেও নাম গুজরাটি। যার বাংলা দাঁড়ায় ভো কাট্টা। অর্থ্যাৎ, প্রতিপক্ষের ঘুড়ি কেটে গেলে আমরা যা বলি। এই মুভি কিঞ্চিৎ হলেও বলে আসলেই আমিই আমার প্রতিপক্ষ। ঘুড়ি কেটেছো তো নিজেরটা কেটেছো। বাস্তব কারো ঘুড়ি কাটলে এমন নাও হতে পারে। মানুষের কাছে এসে এইভাবেই হয়ত শব্দের অর্থ পাল্টে যায়।
‘কাই পো চে’ বরাবরের মতো তিন তরুণের কাহিনি। বরাবর বলার কাহিনি হলো, বন্ধু তিনজন দেখানো মুভির কমন বিষয়। কিছু করতে না পারা এই তিন বন্ধু একটা ক্রিকেট প্রাকটিসিং গ্রাউণ্ড করে। সাথে খেলার জিনিসপত্র বিক্রি করে। আহামরি প্রেম নাই। কমেডি নাই খুব বেশি। দারুন কিছু গান কম্পোজ করেছেন অমিত ত্রিবেদি।
সুশান্ত সিং রাজপুর, অমিত সাধ আর রাজকুমার যাদব তিনজনই চমৎকার অভিনয় করেছেন এই মুভি। ইন্ডিয়ান মুভিতে সাধারণত তিন তরুন মানে কিছু ফাতরামি-হ্যাংলামি। এই মুভিতে তেমন কিছু নাই। তরুদের জন্য যারা নিজের প্যাশন ও হবি-র ভেতর থেকে কিছু করে খেতে চায় অনুপ্রেরণাদায়ক বটে। সোজা সাপটা উপদেশের ধারে কাছে না গিয়ে বরং তাদের ভেতরকার শক্তিটাকে বের করে দেখাচ্ছে।
আমরা সাধারণত আমাদের স্বপ্ন আর কল্পনাকে এই যুগে বিরাজনৈতিক ও কনটেক্সচুয়ালহীন করে দেখাইতে চায় তার বিপরীত দিকটি আছে এই মুভিতে। যদি অনেকটা নেগেটিভভাবে আসছে তবুও এক বন্ধুর রাজনীতি করাকে আমি নেগেটিভ দেখি না- হোক সেটা সাম্প্রদায়িক। হাঁ, এই মুভিতে দুটো বিপর্যয় দেখানো হয়, একটা প্রাকৃতিক আরেকটি মানবসৃষ্ট। যদিও ব্রহ্মাণ্ডের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এরা আলাদা থাকবে কিনা আমি ওয়াকিবহাল নয়। গুজরাটের কুখ্যাত ভূমিকম্প, ভূমিকম্প পরবর্তী সাম্প্রদায়িকতা (২০০১) ও ‘গোধরা ট্রেন পুড়ানো’কে কেন্দ্র করে মুসলমান সম্প্রদায়ের উপর চালানো হত্যাকাণ্ড (২০০২)। এই মুভি সেক্যুলার রাজনীতির পক্ষেও দাঁড়ায়। যদিও শুনছি হিন্দু ধর্মকে ছোট করে দেখানোর জন্য মামলাও হইছে। এই মুভি বুঝায় শাইনিং ইন্ডিয়াকে কে কার প্রতিপক্ষ। সে দিক থেকেও এই মুভির সাহস কম না।
আমার আলোচনা এইসব নয়। এইসব দেখানো অবশ্যই সাহসের ব্যাপার। তবে বড় সাহসের বিষয় হলো আমাদের নিখুঁত, নিখাদ, দাগহীন স্বপ্ন ও কল্পনার ভেতরে বসে এই সব বাস্তব পরিস্থিতি ও সমসাময়িকতাকে ধারণ করা। আপনি হয়ত বলবেন আর পাঁচ-দশটা হিন্দী মুভিও তো নানা যন্ত্রণায় কাতরায়, পরে সফল হয়। আমি বলব সেসব কাল্পনিক যন্ত্রণার সাথে এই বাস্তবতার ফারাক আছে। সে যন্ত্রণায় হারানো কিছু থাকে না। ভবিষ্যতের মৌজ মাস্তি সেটাকে ভুলে যাবার ইশারা দেয়। এই মুভি সেটা দেয় না। যদি ভুল না হয়, এই মুভি ভালো ভাবেই সেই কাজ করছে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
…………………………………………………………………………………………………………………………….
ফেসবুক কমেন্ট:
আসলে সেক্যুলার ইন্ডিয়া ই দেখাইতে চাইছে গল্পকার আর পরিচালক…এই মুভি নিয়া আমার কিছু নেগেটিভ চিন্তা কাজ কর্ছে…সেসব নিয়া কোথাও বলিনাই এজন্যে যে পরিচিত সবার ই মুভিটা ভালোলেগেছে…(যেইহারে বস্তাপচা মুভি হয় ইন্ডিয়াতে…এরকম মুভি ভাল না লাইগা পারার কথা না!)
দেখার পরে আমার কাছে খুব বেশী ফিলিংস হয়নাই যেটা অনেকের ই হইতে দেখছি…অনেক নামি দামী মুভি দেখেও আমার সেই টাইপের ফিলিংস খুব কম ই হয়…মুভি দেখি বিনোদনের জন্য…সেটা কে কতটুকু ভাল দিতে পারল…কতটুকু ভিন্নভাবে দিতে পারল সেইটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবি…তারপর মুভিকে মন থেকে একটু সরিয়ে দেই…কাউকে আলোচনায় দেখলেই আবার সেই কথাগুলো মনে পরে…
তবে আপনের পোস্ট খুবই সংক্ষিপ্ত হইছে…যেটা ভালোলাগেনাই…লেখার ধারা বদলাইছে…লেখা পড়ার সময় কার কথা জানি মনে পর্তেছিল…। ৩০ মে, ২০১৩
> ব্যবহৃত ফটো: ইন্টারনেট
>আরও মুভি পোষ্ট: ইচ্ছেশূন্য মানুষ। মুভি
দুর্দান্ত একটা মুভি। ছেলে তিনটার অভিনয় দারুন লেগেছে।
আপনার রিভিউটা শেষ হইয়াও হইলো না শেষ মনে হলো। অর্থাৎ পড়তে এত ভালো লাগছিলো যে মনে হচ্ছিলো লেখাটা আরেকটু বড় হলো না কেন! তারপরও চমৎকার লাগলো। আনেক সাবলীলভাবে লিখছেন। লেখার স্টাইল একটু পাল্টাইছেন বলে মনে হলো আর একটু ফাঁকিবাজও হইছেন
কিছুটা ফাকিঁবাজি আছে। এক বসায় লিখছি তো অনেক কিছু উল্লেখ করতে ভুলে গেছি। সামান্য সমালোচনাও ছিল।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
শুরু আর শেষ পছন্দ হই নায়। একটি হত্যা মামলার জন্য কয় বছর জেলে থাকতে হয় বুঝলাম না। নাকি প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পাইছে সেটাও ক্লিয়ার না। ভুমিকম্পের ভয়াবহতাকে আর ভালভাবে উপস্থাপনের দরকার মনে হইছে। আরও বহুত কিছু মনে হইছে কিন্তু কমু না। তয় নিরীহ মুসলমানের হত্যাকাণ্ড দেখাইয়া সাহস দেখাইছে পরিচালক এটাতে দ্বিমত নায়। সর্বোপরি, ভালো লিখছেন।
বহুত কিছু না বলায় ভালো হইছে কিনা বুঝতে পারছি না। তবে আমার কোন উপকার হয় নাই। 😛
এইখানে দশ বছর জেল দেখাইছে। তাছাড়া দাঙ্গার জন্য লোকে আসলেই শাস্তি পাইছে কিনা তার ইতিহাস আমার জানা নাই।
কিন্তু একটা বিষয় মানতে হবে- এই মুভি রিকনশিলিয়েসনের বাতিকগ্রস্থতা থেকে বানানো। সেক্যুলার ইন্ডিয়ার স্বপ্নই এর বড় কথা। এইভাবে যদি তারা সুখ পায় পাক না।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
মাথায় ছিল লেখাটার কথা, পড়লাম আজ, মুভিটা দেখা শেষ করেই । ভাল লাগলো মুভিটা,লেখাটাও ।
“তবে বড় সাহসের বিষয় হলো আমাদের নিখুঁত, নিখাদ, দাগহীন স্বপ্ন ও কল্পনার ভেতরে বসে এই সব বাস্তব পরিস্থিতি ও সমসাময়িকতাকে ধারণ করা।”
এই কথাটার মূল্যে লেখাটার হ্রস্ব দৈর্ঘ্যের আক্ষেপ ভুলে গেলাম ।