ওহে সোমেশ্বরী

এক.

একটি মানুষ সুদূর বেশ
যেমন নক্ষত্র
তবুও আমরা কী এক পাষাণ বেঁধে
নদীটির ঢেউ গুনি।

আমরা যখন নীল জলের খোঁজে নদীর কাছে দাঁড়াই, হতাশা আর বিরক্তি জেগে ওঠে। জলে আকাশের ছায়া আমাদের হয়তো খানিক আপ্লুত, খানিক বিহ্বল করত। এখন কিনা সে ‘খানিক’ বিষয়টা মহীরুহ হয়ে কাছাকাছি কোথাও শেকড় বসায়। এভাবে না পাওয়াগুলো ভাবনার চেয়েও বড় হয়ে বাড়তে থাকে। তবু নদীটির দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি। সে আমাদের আরেকটা ভাবনা দেয়_ নদী কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়?

সেপ্টেম্বরের সোমেশ্বরী

সেপ্টেম্বরের সোমেশ্বরী

নদীটার নাম সোমেশ্বরী, যাকে আদর করে বলি ‘ওহে সোমেশ্বরী’। ‘ওহে’ বলার মধ্যে কী এক অদ্ভুত ব্যঞ্জনা আছে_ অতিনিকট যেন। নিজের ভেতর কেমন যেন লাগে। আমরা যখন নেত্রকোনার বিরিশিরিতে, তখন আশ্বিন মাস। এর আগের মাসটা ভাদ্র। মেঘ দেখার জন্য চমৎকার সময়। আকাশের রঙ সজীব থাকে। আর এ সময়টায় আকাশ বিবর্ণ হতে শুরু করে। সোমেশ্বরীতে এখনও ভিনদেশি ঢল। এ ঢলই তার প্রাণ। ঢল ও বিবর্ণ আকাশের কারণে তার নীল আভা মুছে গেছে। তবু আমরা তার ঢালে আরও খানিকক্ষণ দাঁড়াই। শেষ বিকালের লালচে আভা আমাদের চোখে-মুখে। এরপর উঁচু পাড়ে উঠে বসি। একপাশে সোমেশ্বরী, অন্যপাশে বিলের মতো একটা বড় জলাশয়। বিলজুড়ে শাপলা বিরস মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সকাল হলে মুখখানা হাসিতে ভরে উঠবে।

আবার নদীর দিকে তাকাই। পাড় থেকে নিচের দিকে ছোট ছোট নানা গাছের ফাঁকে চরে বেড়াচ্ছে ধেনু (গরু)। হায় এ রঙিন বিকালে ধেনুর রাখাল কৃষ্ণ যে নেই। কৃষ্ণেরও রঙ নীল। আসলে তিনি বর্ণহীন। ব্যাপারটা এমন যে সমুদ্রের জলের মতো। কিন্তু দূর থেকে দেখলে নীল মনে হয়। কাছে এলে সব ফাঁকি। সুতরাং, নীল জল দেখা বা না দেখা প্রায় কাছাকাছি ব্যাপার। কৃষ্ণ সত্য হলে ফাঁকিবাজিও সত্যি। এমন প্রবোধের চেয়ে আরও দূরে তাকানো ভালো_ যেখানে চোখের সীমানা অাঁকা হয়ে গেছে। তারপর আর কিছু নেই। আকাশের কোলে পাহাড়। ওই তো গারো পাহাড়। মেঘের ফাঁকে ফাঁকে পাহাড়ের সারি। চোখ সরু করলে আরও কিছু আবছা পাহাড় চোখে পড়ে। তারপর সত্যিই কিছু নেই।

এবার অন্য কথা। সোমেশ্বরী নামটি এসেছে সোমেশ্বর পাঠকের নামানুসারে_ যিনি কিনা এক সুদর্শন ব্রাহ্মণ। কামাখ্যা তীর্থ দর্শন শেষে গারো পাহাড়ের পাদদেশে এক জলধারার তীরে বিগ্রহ লক্ষ্মী নারায়ণজির আবাসস্থল নির্ধারণ করেন। পরবর্তীকালে স্থানীয়দের অনুরোধে অত্যাচারী বৈশ্য রাজাকে পরাস্ত করে নতুন রাজধারা প্রতিষ্ঠিত করেন। এক সিদ্ধ পুরুষ তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। ফলে যা দাঁড়ায়, মহাপুরুষের সৎসঙ্গ ও সদুপদেশে এ রাজ্যের উৎপত্তিবলে এর নাম সুসঙ্গ। আর সুসঙ্গর গাঁ বেয়ে যে নদীটি রাজ্যের রাজধানীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম অনুসারে তার নাম সোমেশ্বরী। গারো উপকথায় এ নদীর পূর্বনাম সিমসাং। গারোরা এ অঞ্চলকে নিয়ে আলাদা গল্প বলে থাকে। সেটা ডেমিনেন্ট না। হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা আছে, তেমন নেই। এখানে উপজাতি কালচারাল সেন্টার আছে। কিন্তু যেখানে যাবেন, দেখবেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এবং বেশ জীবন্তভাবে যিশুর বাণী চোখে পড়বে। এখানে আপনি খানিকটা আন্তর্জাতিক হওয়ার সুযোগ পাবেন।

সোমেশ্বরীর এখনকার মূল স্রোত প্রাচীন ধারা থেকে আসেনি। নদীর পূর্ব স্রোত দিক পরিবর্তন করে মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। উত্তর থেকে আসা আরেকটি স্রোতধারা এখন নদীর মূল প্রবাহ। ওই স্রোতধারা সম্পর্কে প্রচলিত আছে ১৯৬২ সালের আকস্মিক এক ঢলের মাধ্যমে এর উৎপত্তি, যার কারণে এক রাতের মধ্যে দুই পাড়ের অসংখ্য বসতি নদীর গর্ভে হারিয়ে যায়। সোমেশ্বরী আরও দূরে গিয়ে মিলেছে ধনু নদীর সঙ্গে, যার তীরে বাস করতেন সাধক উকিল মুন্সীর মনচোর।

কালমাকান্দার গারো পাহাড় থেকে দৃশ্যাবলি। গিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারি ২০১২

কালমাকান্দার গারো পাহাড় থেকে দৃশ্যাবলি। গিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারি ২০১২

 দুই.

আনন্দ দেখো
কী বিস্ময় আমার চোখে
তুমি বেয়ে ওঠো সে নদী।

আমরা উঁচুতে বসে নদীর বাতাসের কোমল ও আর্দ্র স্পর্শ পাচ্ছিলাম। সারা দিনের ক্লান্তি জুড়িয়ে দিল। সকাল সাড়ে ৭টায় মহাখালী থেকে বাসে চড়ি। পূর্বমুখী জানালায় বসে শরীর-মন পুড়িয়েছি। গাজীপুরের ভাঙাচোরা রাস্তায় জ্যাম ও ঝাঁকুনির অত্যাচার তো ছিলই। তারপর নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ থেকে সেরকম হোন্ডা ভ্রমণ। জারিয়া নদীর ব্রিজ একমুখী হওয়ায় ভালোই জ্যামে পড়তে হলো। ঠা-ঠা রোদে পুড়ছিলাম। তবে রৌদ্রোজ্জ্বল জারিয়া নদী এলেই বেশ সুন্দর। নানা ধরনের নৌকা নদীপথ ধরে চলছিল। পুরোটা পথ মুগ্ধ হয়ে দুই পাশের দৃশ্য দেখেছিলাম। এটা সত্যি, এমন দৃশ্য বাংলাদেশের সর্বত্র আছে।

আরও খানিকটা সময় জিরিয়ে আমরা দুর্গাপুর বাজারের পথ ধরি। পথে পড়ে সোমেশ্বরীর পুরাতন স্রোতধারার ওপর স্থাপিত ব্রিজ। লম্বায় বেশ। ব্রিজটার বৈশিষ্ট্য হলো, গাড়ি গেলেই দুলতে থাকে। আমার সফরসঙ্গী শাহনেওয়াজ খান নাম দিল ‘দোল দোল দুলুনী ব্রিজ’। অনেকটা সময় ব্রিজটার ওপর দাঁড়িয়ে থাকি। দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে। আগে যেখানটায় বসেছিলাম, সেখান থেকে এদিকটা দেখা যায় না। যেন নদীর পুরনো ধারাটা হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে। এভাবে আমরাও হয়তো কখনও প্রাসঙ্গিক, কখনোবা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ি। আবার এখান থেকে নদীর উত্তর থেকে দক্ষিণে দেখা যায়। যেভাবে প্রাচীনতার জানালায় সহজে যে কোনো পরিবর্তন ধরা পড়ে।

মাগরিবের আজানের পরে আমরা দুর্গাপুর বাজারে হাজির হই। বাজারটায় একটা প্রাচীন ভাব বিদ্যমান। তবে বেশ জমজমাট। বছর দুয়েক আগে দুপুরবেলায় এত এত মানুষের ভিড় ছিল, ঘণ্টা দুয়েক হোন্ডা ভ্রমণে ক্লান্ত দাউদের বিরক্ত বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে জোটে এক পাগল। দাউদকে ছাড়বে না। তারপর কেমন করে যেন তাকে রিকশার জটে আটকে ফেলে দাউদ। আজকের সন্ধ্যায় অবশ্যই তেমন মানুষ নেই। দোকানগুলোতে আধুনিকতার কোনো ছাপ নাই। তবে কী নেই? সব দোকানই পণ্যে ঠাসা। বাজারের একপাশ নেমে গেছে নদীর পাড়ে। এখান থেকে বালিভর্তি ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। বালি ও মাছ বাণিজ্যে অঞ্চলটা সব সময় জমজমাট থাকে। শাহনেওয়াজ চটপটি আর আমি পেঁয়াজু খাই। বাজারে তিনটি লাইব্রেরি, সেখানে ঢুঁ মারি। তুলনামূলকভাবে স্কুলের গাইড ও ধর্মীয় বই বেশি। তারপর ফিরতি পথে ব্রিজের কাছে একটা চায়ের দোকানে বসি। অনেকক্ষণ বসে থাকি। কয়েকবার চা চাইলেও কেউ দেয় না। কেন দেয় না, কী জানি।

একসময় চা না খেয়ে উঠে আসি। স্থির অন্ধকারে ব্রিজের মাঝামাঝি দাঁড়াই। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। অস্পষ্ট আকাশে কিছু টের পাওয়া যায় না। মেঘ আছে বুঝি। বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে। ফিরতি পথে বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে যেতে হয় বিরিশিরি বাজারে। খেয়েদেয়ে ফিরে আসি আমাদের আস্তানায়, প্রজাপতি গেস্ট হাউস। এক জায়গায় দেখি নেচে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার জোনাকি। রাস্তার জামাকাপড় পরা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ি। বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘুম ভাঙে। ছাদে এসে বসি আর আকাশটা বড় হতে থাকে।

যেন কত কাল আগে তারাদের সঙ্গে মিতালি ছিল। তারাদের সঙ্গে হেঁটেছি। সেসব দিন মনে পড়ে। চেনা তারাদের খুঁজতে থাকি, পাই না। কোথায় গেল সপ্তর্ষী, কোথায় গেল ধ্রুবতারা। তারপরও মন খারাপ হয় না। কত দিন এভাবে আকাশ দেখিনি, আকাশ এভাবে বড় হয়নি। আবার ভাবি, তারাদের দিকে তাকালে সময়ের ফাঁদ থেকে মুক্তি পাব কিনা। কত লাখ লাখ আলোকবর্ষ আগের দৃশ্য আমরা দেখছি। তারা দেখতে দেখতে আমরা অতীতের ঝাঁপি খুলে বসি। আনন্দ-বেদনার কথা, পাওয়া-না পাওয়ার কথা। কী অদ্ভুত বেদনা-না পাওয়া কী চমৎকারভাবে আমাদের জীবনে ভাস্বর হয়ে ওঠে। হায়, অপ্রাপ্তিও বুঝি আনন্দের নিচ থেকে পুরনো দিনের একটা হিন্দি গান ভেসে আসে। আমিও ভেসে যাই। এক সময় মনে হয়, ঢাকায় থাকা অবস্থায় নিজের দিকে ফিরে তাকানো হয় না। খানিকটা ভয়, নিজের ভেতরের ভ্রান্তিগুলো যদি বের হয়ে আসে! এখানে এসে মনে হলো ভ্রান্তি খারাপ না।

চিনা মাটির পাহাড়

চিনা মাটির পাহাড়

তিন.

হাতের রেখায় অনুজ্জ্বল হলো
বাদামি পৃষ্ঠার ছোপ ছোপ ছাপ
আমরা সে ফিসফিসানি এড়িয়ে
মগ্ন পাখির খোঁজে
পাহাড়ের নির্জনতায় হাঁটছিলাম।

রাতেই বলা ছিল। সকালে সোমেশ্বরীর ওপারে নিতে এলেন মতি ভাই। আগের দিন তার হোন্ডায় চড়ে শ্যামগঞ্জ থেকে এসেছিলাম। নদী পার হতে ঘাটের চেয়ে খানিক সামনে এসে শুয়োরের পাল্লায় পড়ি। না, বন্য শুয়োর নয়, ওরা খোঁয়াড় থেকে চরতে বেরিয়েছে। এত কুৎসিত প্রাণী আগে দেখিনি। প্রায় পঞ্চাশের উপরে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আল্লাহ তায়ালা যদি সব সৃষ্টির মূলে হন, তবে কেন আমি এ ঘৃণা পুষে রাখি।

নদী পার হতে বেশি সময় লাগল না। খানিক পরে একটা পুকুরপাড়ে হাজির হই। নৌকায় হোন্ডাসমেত পার হতে হলো। বিষয়টা বেশ মজা লাগল। আফ্রিকা আফ্রিকা ভাব পেলাম। ওপার থেকে এলো সাইকেল নিয়ে এক কিশোরী। তারপর খানিক পথ পেরিয়ে জলাভূমি। এবার নৌকা নেই। হোন্ডা ছেড়ে আমরা পানিতে নামলাম, হোন্ডাও আমাদের পিছে পিছে এলো। দৃশ্যটা দেখার মতো।

এরপর এলাম বিজিবি ক্যাম্পে। আগেরবার এখান থেকে সোমেশ্বরীর অদ্ভুত রঙের খেলা দেখেছিলাম। আমার সফরসঙ্গী জানালেন, চাপার রঙ নীল। মতি ভাই আশ্বস্ত করলেন পৌষ মাস এলে সোমেশ্বরীর ভুবনজয়ী নীল জল দেখতে পাবেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সে আলাপ বাদ দিয়ে একটু ছায়ায় বসি। ওপারে ইন্ডিয়া, কাঁটাতারের বেড়া দেখা যায়। নদীতে অসংখ্য ছোট ছোট নৌকা। নদীর তলদেশ থেকে জাল দিয়ে কয়লা তুলছে কেউ কেউ। প্রিয় পাঠক, লেখার সঙ্গে দেয়া নীল জলের ছবি ফাল্গুন মাসে তোলা। সে সৌন্দর্যের কথা আজ বলে লাভ নেই। যা আছে, তা-ই নিয়ে বলি। ধরেন কিচ্ছু নেই, বাংলাদেশে পর্যটন বলতে প্রায় এমন। এ নেইয়ের মধ্যে আপনার কেমন যেন ভালোলাগা জারি থাকে, অদ্ভুত বিষয়!

বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে।

বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে।

ছোট একটা পথ ধরে এগিয়ে গেলে পাহাড়। এত খাড়া যে দম আটকে এলো। বেশি উঁচু না। বুঝলাম, শহরে শরীরের ওপর অত্যাচারটা কেমন হয়। বেচারা একটু নড়াচড়া, দম ফেলা কোনোটার সুযোগ পায় না। বেশ উপরে ওয়াচ টাওয়ার। অত দূর ওঠার সাধ্য নেই। আমরা দূরের পাহাড় ও বন দেখতে থাকি। পথে একটা সাইনবোর্ড দেখেছিলাম_ এটি প্রতিবন্ধীদের ভোকেশনাল ট্রেনিং কেন্দ্র ও বৃদ্ধাশ্রমের জন্য নির্ধারিত স্থান। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কমলালেবু আর পাম গাছ। কিছু গাছে কাঁচা কমলা ঝুলছে। কমলা ধরে ছবি তুললাম। ফেসবুকে ক্যাপশন হলো জনৈক কমলা চাষি। আমাদের যে কোনো কিছু এখন ফেসবুকের উদর পূর্তি করে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ফেসবুকের জন্যই বুঝি আমরা যা যা করি, তা তা করি। কী মুশকিল! এরপর আরও কয়েকটা পাহাড় পাড়ি দিই। পাহাড়জুড়ে সেগুন গাছ। এসব বন বিভাগের কীর্তি। পাহাড় নিজস্বতা হারায় এভাবে। এর জন্য খরচও হয় কোটি টাকা।

পরের গন্তব্য চীনামাটির পাহাড়। এখানকার লোকরা বলে সাদামাটি। চিন্তা করুন ঠা-ঠা গরমে মানুষজন পাহাড় কাটছে, চীনামাটি বস্তায় ভরছে, গাড়িতে তুলছে_ তা কিনা পর্যটন! পথও সে রকম। ভারতীয় মাহেন্দ্র ট্রাক্টরের দাপটে রাস্তা আর রাস্তা নেই। আবার ধরেন এ ট্রাক্টর ছাড়া এমন পথে কোনো গাড়ি চলবে না। এ এক চক্র দোষ, যা বাংলাদেশের সর্বত্র পাবেন। রাস্তার বর্ণনায় একটা উদাহরণ দেয়া যায়। ওই সময় আমাদের সহকর্মী ওয়ারেছুন্নবী খন্দকারের হোন্ডার কথা মনে পড়ে। ওই হোন্ডা নিয়ে যদি এ পথে চলা যায়, তবে যাওয়ার পথে হেলমেট ছাড়া কিছু অবশেষ থাকবে না। এটা ঠিক, এখানে কাউকে হেলমেট পরতে দেখি না।

ফেব্রুয়ারি সোমেশ্বরী

ফেব্রুয়ারির সোমেশ্বরী

পথে পড়ে হাজংমাতা রানী রাশমণির স্মরণে একটা স্মৃতিস্তম্ভ। এ অঞ্চলে বিদ্রোহের বেশ বড় ইতিহাস রয়েছে। এসব পেরিয়ে আমরা চীনামাটির দুটো পাহাড় দেখি। প্রথমটা দেখে মনে হলো ওয়েস্টার্ন জেনরের কোনো মুভির সেট। এত গরম! শ্রমিকরা আমাদের ছায়ায় ডাকছিলেন। পর্যটক বলে কথা, পাত্তাই দিলাম না। ধূলিধূসর পথ বেয়ে উঠতে থাকি। এরপর ছোট একটা ছড়া পেরিয়ে একটা পুকুরের সামনে দাঁড়াই। সবুজে নীল জল। চীনামাটির কোনো উপাদানের সঙ্গে রোদের বিক্রিয়ায় হয়তো এমনটা হয়। ওই জায়গাটার নাম মনে নেই। পরে গেলাম বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে। এটা মনে হয় বেশ পুরনো। এখানে লেকের মতো বিশাল জলাশয় আছে। সবুজ পাহাড়ের মাঝে সবুজ পুকুর। আমরা চুপচাপ বসে থাকি।

এবার ফেরার পালা। পরদিন যাব মোহনগঞ্জে সাধক উকিল মুন্সীর বাড়িতে। প্রথমবারের মতো হাওর দিয়ে যাব। সে গল্প একদম আলাদা– ভালোবাসা ও মহানুভবতার।

*লেখাটি আলোকিত বাংলাদেশে পূর্ব প্রকাশিত। কৃতজ্ঞতা : শাহনেওয়াজ খান ও হোসেন শহীদ মজনু।

Comments

comments

2 thoughts on “ওহে সোমেশ্বরী

  1. ধন্যবাদ। আমার বাড়ি বিজয়পুর।
    আবার আসার আমন্ত্রণ রইল।

Comments are closed.