ধাঁধা বলার কিছু চিরায়ত পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে একটা হলো শোলক বা শুলক। ছড়ার মতো ছন্দ থাকে। থাকে গভীর ভাবার্থ।ধাঁধাটি শুনলে মনে হয় এক, আসলে উত্তর আরেক। অনেকক্ষেত্রে যদি ভেতরকার বিষয় ধরা না যায়, অর্থ দাড়ায় অস্বস্থিকর কিছু। এর সাথে উত্তরকর্তার চিন্তার ধরণ ও রুচি জ্ঞান স্পষ্ট হয়। বুঝাই যাচ্ছে, উত্তরদাতা ভালোই চাপে থাকেন। যিনি ধাঁধার ভেতরকার বিষয় বুঝতে পারেন না তার জন্য শাহ আলম সরকার বলছেন, “যদি হয় ভণ্ড হাজার টাকার দণ্ড”। শাহ আলম সরকার তার প্রশ্নগুলো সেভাবে তোলেন।
অর্থের ভেতর গুঢ় অর্থ খোঁজা– বাংলার ভাব ভাষায় এর প্রভাব আছে গুরুতর। যা সাধনপন্থী নানা ধারার মধ্যে বিদ্যমান। ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে মারেফাতের বিকাশও এই ধরনটা দেখা যায়। কুর’আন আয়াত ও হাদিসের বাণীর সাধারণ অর্থের বাইরে গভীর অর্থের সন্ধান। এটা করতে গিয়ে মারেফত কাঠামোবদ্ধ শরিয়তের বেঁধে দেওয়া চৌহদ্দির বাইরে গিয়ে অর্থ অনুসন্ধান করে। এখন শরিয়তের পক্ষের শাহ আলম সরকার যখন শোলকের মতো করে প্রশ্ন করেন, সন্দেহ হয় শাহ আলম সরকার নিজেও কি মারেফাতের ফেরে পড়েছেন। নাকি শরিয়তও একই কায়দায় প্রশ্ন তোলা ও উত্তরের ভেতর নিজেকে খুঁজতে পারে। নাকি প্রশ্নকর্তা উত্তরদাতার চিন-পরিচয়ে অস্বস্থিবোধ করেন না।শরিয়ত মারেফত পালায় শরিয়তের পক্ষে হলেন শাহ আলম সরকার আর মারেফতের পক্ষে আছেন লিপি সরকার। দুইজনই পালা গানের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
শরিয়ত ও মারেফত উভয়ের লক্ষ্য আল্লাহর দিদার লাভ করা। কিন্তু তাত্ত্বিক ভিত্তি ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে ফারাক বিদ্যমান। যেমন- শাহ আলম সরকার জোর দেন নামাজের দিকে । কিন্তু লিপি সরকার নামাজের বাহ্যিক দিকের চেয়ে জোর দেন এর ভেতরকার মাজেজায়। শাহ আলম সরকার বৈষয়িক সম্পর্কের দিকে জোর দেন। শরিয়ত নিজে জাগতিক সম্পর্কের বৈষয়িক রূপান্তরের ভেতর আল্লাহকে খুঁজে। আর মারেফতে আত্ম-বিকাশকে গুরুত্ব দেয়। বৈষয়িক সম্পর্কের জায়গায় একে রাখা কঠিন। কিন্ত, এক মানুষের সাথে অন্য মানুষের সম্পর্কের বৈষয়িক ভেদের বিলোপও ঘটায় সে। কারণ, দুনিয়া আর আখিরাতের ভেদ ক্ষেত্র বিশেষে ফানা হয়ে যায়।
‘ফজরের ওয়াক্তে হাসান (হাসান বসরী (রঃ)) পড়িল ঘুমাইয়া, শয়তান পাও টিপে তার যাইয়া। শয়তান কয় হুজুর উঠেন, ওযু করেন, নামাজ পড়েন, মসজিদে ছুটেন, প্রাণ ভরে আল্লাহরে ডাকেন, ফজর যায় ছুইটা’।
শয়তানের খাসলতের বিপরীত কাজ। ঘটনা কি? ঘটনা হলো আগের দিন ফজরের ওয়াক্তে শয়তানের কারণে হাসান বসরী (র.) নামাজ কাজা করে ফেলেন। হাসান বসরী নামাজ কাজা করার অনুশোচনায় সারাদিন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। আল্লাহ সাত্ত্বনারূপে এক ওয়াক্ত কাজা নামাজকে হাজার ওয়াক্তের সমান করে দেন। গানের পরের অংশ-
‘ঘুম হতে উঠিয়া হাসান পায়ের কাছে দেখে বইসা রইয়াছে শয়তান। হাসান বলে, শয়তান তুই কেন দিলি জাগাইয়া। শয়তান বলে, শোনেন সমাচার। কাল পা টিপিয়া নামাজ কাজা করছি আপনার। ঠক হইয়া গেছে আমার না পড়াইয়া। মানুষ ঐ রকম নামাজী হইয়া যাও, এক ওয়াক্ত হইলে কাজা কাইন্দা বুক ভাসাও, শয়তান দিয়ে পা টিপাও, শাহ আলম যায় গাইয়া..’।
নামাজ নিয়ে এটি অতিপ্রচলিত কেচ্ছা। ভিন্ন ভিন্ন নামে এর ভিন্ন ভিন্ন রূপ আছে। শাহ আলম সরকারের পালা জুড়ে ছিলো নামাজ নিয়া গান ও কাহিনীর ছড়াছড়ি। যেমন- তিনি গানে গানে নামাজের ভেদ জানাতে তিনি আরেকটি কেচ্ছা বলেন। ইয়েমেন দেশের এক লোক। যিনি আল্লাহর প্রেমে মশগুল। তিনি প্রতিদিন সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বের হতেন। হাঁটতে হাঁটতে একসময় যোহরের ওয়াক্ত হয়ে যায়। তিনি পাশের জঙ্গলে গিয়ে যোহরের নামাজ আদায় করতে যান। নামাজে এতো মশগুল হন, কখন যে সময় গড়িয়ে যায় তার খেয়াল থাকে না। একসময় খেয়াল হয় আছরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। এভাবে নামাজে তার সারাদিন কেটে যায়। রাতে যখন বাড়ি ফেরে স্ত্রী জিজ্ঞেস করে, কি নিয়া আসলেন। তিনি বলেন, কিছু আনেন নাই। স্ত্রী বিরূপ হলে তিনি বলেন, যে মালিকের কাজ করছি তিনি যা চাই তাই দিবেন। পরদিন যখন তিনি বাড়ি থেকে বের হলে আল্লাহর ফেরেশতা বাজার-সওদা নিয়া হাজির। ঐ ব্যক্তির স্ত্রীকে বলে, আপনার স্বামীর মালিক পাঠাইছে। এই হলো নামাজের হাল। নামাজের মতো নামাজ পড়লে বান্দার কোন চিন্তা থাকে না। আল্লাহ তার দায়িত্ব নিয়া নেন। কিন্তু এটা কোন নামাজ। বুঝাই যায়, আমাদের নামাজ সন্দেহজনক। এই সমাজের অনেকের মতো সেই আফসোস শাহ আলম সরকারেরও।
বুঝা গেলো ইসলামি শরিয়তে নামাজের গুরুত্ব কি? কিন্তু মারেফতে নামাজের গুরুত্ব স্পষ্ট হয় না। লিপি সরকার শুধুমাত্র এই বলে শেষ করেন, সব নামাজ নামাজ না। গভীর সাধনার বিষয়। যেটা শরিয়তপন্থীদের মধ্যে নাই। তিনি ইয়েমেনের সেই ওলিকে শরিয়তপন্থী বলতে নারাজ। তিনি দাবি করছেন এই লোক মারেফতের লোক। এই প্রেমভাব, একাগ্র সাধনা শরিয়তপন্থীদের মধ্যে পাওয়া যাবে না। এটাও বুঝা গেল যেন মারেফতের গোপন কথা প্রকাশ্যে বলতে নাই।
গভীর সাধনার কথা বলতে গিয়ে তিনি লালনের গান ধরেন, “সময় গেলে সাধন হবে না”। পালায় লালনের গানের ব্যবহারের গুরুত্ব আছে নানা কারণে। গ্রামীন সমাজ কাঠামোতেসাধন-ভজন-গানের চর্চা কোন শহুরে বাঁধা-ধরা নিয়ম মেনে চলে না। কপিরাইট জাতীয় শর্ত সেখানে উপস্থিত নাই। বরং, নানা মানুষের জ্ঞানতাত্ত্বিক কাণ্ড একই পাঠাতনে মিলিত হয়। যেখানে নানা উপাদান নানা জায়গা থেকে এসে জড়ো হয়। এখানে লালনের গানের ব্যবহারে বুঝা যায়, এই গানের সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক নানা কারণে নিবিড়। কিন্তু লিপি সরকারের গাওয়া গানটি বহুল চর্চিত হলেও লালন সাধকরা বলেন, এটি লালনের গানের বিকৃত পাঠ। শহুরে সমাজে লালনের গানটি এইভাবে গাওয়া হয়। যেটা ফরিদা পারভীনের হাত ধরেই জনপ্রিয়। নিচে গান দুটির পাঠ দেয়া হল-
মূল পাঠ |
বিকৃত পাঠ |
সময় গেলে রে ও মন সাধন হবে না দিন ধরিয়ে তিনের সাধন কেন জানলে না।
জান না মন খালে বিলে মীন থাকে না জল শুকালে কি হয় তারে বান্দাল দিলে শুকনো মোহনা।।
অসময়ে কৃষি করে মিছেমিছি খাট মরে গাছ যদি হয় বীজের জোরে ফল ধরে না।।
অমবস্যায় পূর্ণিমা হয় ম হা জ ন সেই দিনে উদয় লালন বলে তার সময় দন্ডেক রয় না।। |
সময় গেলে রে ও মন সাধন হবে না দিন থাকিতে দিনের সাধন কেন করলি না।
জান না মন খালে বিলে থাকে না মীন জল শুকালে কি হবে আর বান্দাল দিলে শুকনা মোহনা ।।
অসময়ে কৃষি করে মিছামিছি খেটে মরে গাছ যদিও হয় বীজের জোরে তাতে ফল ধরে না।।
অমবস্যায় পূর্ণিমা হয় ম হা যো গ সেই দিনে উদয় লালন বলে তাহার সময় দন্ড রয় না।। |
আশংকা এই, শহুরে ধাচের লালন চর্চার কারণে পালা গানেও কি ভেজাল ঢুকে গেল। ভেজাল এই অর্থে জনমানুষের চর্চার সেই গ্রামীণ রেশ এতে নাই। দিন থাকিতে দিনের সাধন কেন করলি না- সেটা পুরোটা শহুরে মধ্যবিত্ত বয়ান। সেখানে মানুষ তার সম্ভাবনা ও সীমানা নিয়ে নিশ্চিত। যেখানে মানুষকে নিদিষ্ট কাঠামোতে ফেলে ব্যাখ্যা করে। মানুষ মানে এই, মানুষ মানে সেই- এর বাইরে কিছু না।
এই আশংকা সত্ত্বেও, শরিয়ত-মারেফতের ভেদ জানতে শাহ আলম সরকার ও লিপি সরকারের প্রশ্নোত্তর চমৎকার সব ইংগিত দেয়। ফকিরদের মাহফিলের একটা গান, ‘দয়াল সোনা দিবে বলে ভুলিয়ে রূপাও না দিয়ে পিতল দিয়ে অবলাকে ভুলিয়েছেন’। শাহ আলমের প্রশ্ন এতো বড় বাটপারের কাছে কেন গেল, যে কথা দিয়ে কথা রাখে না। এই প্রশ্নের উত্তরে লিপি সরকার বলেন, যারা পীরে বিশ্বাস করেন না তারা বাটপার। আর যে দয়াল চান নিজে বাটপার, তার মুরীদও বাটপার। বাটপারের মুরিদ বাটপার। বাটপারের হাট-বাজার। এই সুত্রে রশীদ বয়াতির বলেছিলেন, ভালা চোখ কানা করল মাওলানা। আর লিপি সরকারের গান, ‘মাওলার ভাব তরঙ্গে এসো আমার সঙ্গে। যদি কারো ভালো লাগে ভাবের কথা বলতে গেলে তার নাই শেষ। পুত্র-কন্যার মধ্যে আছে হইয়া নিরুদ্দেশ। ছাইড়া তোর মাওলানার বেশ, মাতাল বৈতাল সাজ’।
শাহ আলম সরকার ফকিরদের আরেকটি গানের ভেদ জানতে চান। ‘ফুল যখনই গাছে, উঠে যাইয়া ফুলের নিকট চুমুক দিও দুই ঠোঁটে নুড়াইয়া মাথা’। প্রশ্ন হলো, এটা কোন ফুল, কখন ফোটে এবং চুমুক দিতে হয় কিভাবে? লিপি সরকার উত্তরে ফকিরের হাতে বাইয়াতের প্রসঙ্গ তুলেন। এই ফুল হলেন পীর-মুরশিদ। সাগরেদ যখন বাইয়াত গ্রহণ করেন তখন তার কাছে পীর ফুল হয়ে ফুটে। সাগরেদ পীরের পায়ে মাথা নুইয়ে চুমু দেন। লিপি সরকার যেমন মাইজভাণ্ডারীর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। তার কাছে মাইজভাণ্ডারী ফুল হয়ে ফুটেছেন। তিনি তার পায়ে চুমু খেয়েছেন। লিপি সরকার পীর-মুরিদের সম্পর্ক বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, গুরু যদি ভক্তের হাতে বিষ তুলে দেয়, সেটাও হালাল। এইখানে হলাল-হারামের প্রশ্ন কাটে না। এই হলো বাইয়াতের মধ্যে বাধা পড়া গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক। এটা মারেফত চর্চার মূল বৈশিষ্ট্য। বাংলার ভাবচর্চার ক্ষেত্রেও একই পরম্পরা চোখে পড়ে।
বাইয়াত গ্রহনের বিষয়টি শরিয়তে এইভাবে নাই। শরিয়তে দেখা যায় খলিফার হাতে দেশের প্রজারা বাইয়াত গ্রহন করে। সেটা দুনিয়াবী আনুগত্যের বিষয়। সেখানে খলিফা আল্লাহ প্রতিনিধিরূপে শাসন করেন। কিন্তু বিষয়টা মারেফতের মত না। এতে অনুশীলন ছাড়া আল্লাহর দীদার লাভ করা যায় না। তাই মারেফত বা তরিকাপন্থীদের পীর বা মুরশিদের হাতে বাইয়াত গ্রহন করতে হয়। তা না হলে সাধনা সম্ভব হয় না। নামাজের প্রসঙ্গে যেমন ভেদ রয়েছে, তেমনি ভেদ আছে আল্লাহর দীদার মানে কি? আল্লাহকে কিভাবে দেখি? সেটি প্রকাশযোগ্য কিনা? এই বিতর্ক ধর্মীয় পরিসরে ব্যাপক। ধর্মতত্ত্বের এই ধ্রুপদী বির্তককে সহজ তর্কে বর্ণনা করছেন শাহ আলম সরকার ও লিপি সরকার। দেখা যাক, বাইয়াত নিয়ে প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর লিপি সরকার শাহ আলম সরকারকে ঘায়েল করছেন কোন প্রশ্ন দিয়ে। তিনি প্রশ্ন করছেন, শরিয়ত চায় আল্লাহকে পেতে। তিনি কি কখনো আল্লাহকে দেখেছেন। যদি দেখে থাকেন, আল্লাহ দেখতে কেমন এবং কার মত?
শাহ আলম সরকার উত্তরে বলছেন, ধরা যাক আমরা দুই ভাই। কেউ একজন আমাকে দেখেছে কিন্তু আমার ভাইকে দেখে নাই। তিনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমার ভাই দেখতে কেমন? হয়তো গায়ের রং, গড়ন হিসেবে ঊনিশ-বিশ। কিন্তু দুইজনের চেহারায় এমনকিছু মিল থাকে, তা দিয়ে ধরা যায় কে কার ভাই। কিন্তু এই মিল-অমিলের বিষয় আল্লাহ কাছে নাই। কারণ আল্লাহ হলেন বে-মেসাল বা নিরাকার। সোজা বাংলায় যার কোন আকার নাই। পৃথিবীর কোন কিছু দিয়ে আল্লাহকে বুঝানো যাবে না। আল্লাহকে যে দেখেছে তার অনুভূতির ব্যাপার। যে দেখে নাই সে কখনো বুঝবে না। এই দেখার দেখার স্বাদ অতুলনীয়।
কিন্তু আল্লাহকে দেখা যায় না এটা ঠিক না। লিপি সরকার বলেন, আল্লাহ যদি বে-মেস্ল হন, তবে রাসুল (স.) কি আল্লাহকে দেখেন নাই- তার সাথে কি কথা বলেন নাই। শাহ আলম সরকার বুখারী শরীফের দোহাই দিয়ে বলেন, মিরাজের ঘটনার পর হযরত আবু-বকর (রা.) রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ দেখতে কেমন? রাসুল (সা.) বলেন, মন কর তোমার মত দেখেছি। হযরত ওসমান (রা.), হযরত ওমর (রা.) ও হযরত আলী (রা.)র প্রশ্নেরও জবাব একই। আবার সবাই যখন একসাথে জিজ্ঞেস করলে বলেন, আল্লাহ হলেন বে-মেসাল, তার রূপের মেসাল দেয়া পৃথিবীতে সম্ভব নয়। কিন্তু লিপি সরকার আপত্তি তুলে বলেন, এই যে রাসুল (সা.) আল্লাহর কথা বলতে গয়ে সাহাবীদের বললেন ‘তোমার মত’। এই ‘তোমার মত’বলার মধ্যে কি কোন মেসাল নাই। তিনি বলেন, বুখারী শরীফের সেই হাদিসটার ব্যাখ্যা দিলে এই দাঁড়ায়, কেউ রাসুল (সা.)কে দেখলে আল্লাহকে দেখার বাকি থাকে না। কিন্তু শরিয়ত বা মারেফতে আল্লাহকে দেখা-অদেখার যে বিতর্ক তার মূল সুরটি উহ্য রয়ে যায়। উহ্য থাকেনিরাকার আল্লাহর ধারণাকে ইতিহাসের সীমানায় কিভাবে মীমাংসা করা হচ্ছে। বাংলার ভাবের জগতেও এই প্রশ্ন নিয়ে গভীরতর আলোচনা হয়েছে।
শাহ আলম সরকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলেন। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার করেছে ওলি-আউলিয়া-গাউস-কুতুব। ফকিররা এদের মধ্যে পার্থক্য করে। শরিয়ত ওলি আর মাওলানা এইসব পার্থক্য করে না। কিন্তু শাহ আলম সরকার যে মুশকিল করেন, তিনি বলছেন সকল পীর মাদ্রাসা শিক্ষিত এবং মাদ্রাসার শিক্ষক। যেমন- বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী এবং খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি। প্রশ্ন জাগে ওলি-আউলিয়া-গাউস-কুতুবদের মাদ্রাসা শিক্ষিত মাওলানাদের সমার্থক ধরা হলে ফকিরদের করা পার্থক্যই ঠিক প্রমাণিত হয়। শাহ আলম সরকারের কথায় স্ববিরোধ দেখা দেয়।
পীর-মুরশিদ মানেই কারো না কারো ওস্তাদ, পথ প্রদর্শক। কিন্তু তাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত হওয়া আর শিক্ষকতার সাথে গুলিয়ে ফেলা অন্য জিনিস। শরিয়তের পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এই মহিমা অপ্রমাণিত। বরং, পীর-মুরশিদ হবার সিলসিলা ও জনসম্পৃক্ততা সবসময় এক নয়। এর নানা বৈচিত্র্য আছে। এই কথার সত্য-মিথ্যাত্ব নয়, বরং এটা শরিয়তের সাথে বৈষয়িক সম্পর্ক এবং ঐতিহাসিক ধ্যান-ধারণায় এই বিকাশকে ইংগিত করছে। সেই প্রসঙ্গে ইসলামি শরিয়তের বিকাশের সময়টা ধরতে পারি। এর সাথে আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থাকে, ইজতিহাদের ধারা বন্ধ রাখা হয়েছিল কেন? এই জায়গায় সে ইংগিত মাথায় রেখেই সন্তুষ্ট হতে হবে। লিপি বলছেন, শরিয়তীপন্থীদের ভেদজ্ঞান স্পষ্ট না। উদাহরণ দিয়ে বলেন তারা গাভী দেখলে মনে করে মুসা (আ.) এর গাভী।
লিপি সরকার শাহ আলম সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি মাওলানা। নায়েবে রাসূল, আপনার গালে দাড়ি নাই কেন? শাহ আলম সরকার বলেন, দাড়ি দেখলে ধরে। সে ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার জন্য দাড়ি রাখেন নাই। লিপি সরকার দাড়ি ভীতিকে নির্বিশেষ না করে বলেন, সমস্যা দাড়ির না। সমস্যা হলো স্বভাবের। তাই দাড়ি না থাকার পক্ষে এই যুক্তি খাটে না। কিন্তু লিপি সরকারের স্বভাবের কথা সত্ত্বেও ঘটনা কিন্তু ঘটে গেছে। সেটা শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিষয় নয়, দুনিয়া জুড়েই নানা আচার-বিচার, আইনে, দোহাইয়ে ধর্মীয় চিহৃ মানেই বিপদজনক। এই রব-হুংকার থেকে বাংলাদেশও বাদ যায় নাই। বরং, আগামী দিনে এই ঘটনা প্রকট হয়ে উঠবে এমন ইংগিত বিস্তর।
লিপি সরকার প্রশ্ন করেন, আল্লাহ বলেছেন, দুনিয়া থেকে যারা তাকে চিনল না, তারা কাল হাশরে অন্ধ হয়ে উঠবে। আল্লাহ এটা কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শাহ আলম সরকার বলেন, যে আল্লাহ আমাদের সবকিছু দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছেন, যারা তার শুকরিয়া আদায় করবে না, তারাই হাশরের দিন অন্ধ হয়ে উঠবে। তিনি সুরা আর-রহমানের সেই আয়াতটি উল্লেখ করেন, (হে জ্বীন-ইনসান) তোমরা তোমাদের প্রভুর কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে।
যে গানটির দিয়ে লিপি সরকার পালা শেষ করেন–‘খাঁটি পীরের মুরিদ হইলে যমে সালাম দেয়, থাকতে কেউ চিনে নারে, চলে গেলে বুক ভাসায়। দুনিয়ায় থাকলে পরে লোকে তারে চিনে না…’।
শরিয়ত-মারেফতের এই ভেদ আসলে মানুষের খাসলতের ভেদ। দুটোই বলছে একই লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। কিন্তু সেই পথে তাদের পার্থক্য মূলত: কোন আচার-বিচারে-বয়ানে তারা নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যান সেখান। সেখানে আকার আর নিরাকার কি বান্দার স্বভাবের বয়ানেই আল্লাহ তার কাছে ধরা দেন। মানুষের কাছেই আছে সেই রহস্য ভাঙ্গার জীয়ন কাটি।
ঢাকার পাটুয়াটুলী থেকে প্রকাশিত এবং মনির হোসেনের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় শরিয়ত মারফত পালাটি প্রযোজনা করেছে স্মৃতি সুর।
ভাইসাহেব, আপনার শাহরুখ খানের রিভিউটা পড়লাম। ভালো লিখেছেন। ফকীরদের ব্যাপারে কিছু মন্তব্য করতে চাই।
১. শরীয়ত মারেফত যারা আলাদা বলে এরা সব পাগল-ছাগল।
২. নয়তো মূর্খ। এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। কারণ পাগলে তো আর গান গেতে পারে না। ইসলামের যে বিধান শরীয়াহ, সেটা পালন করতে করতেই বান্দা আল্লাহর পরিচয় লাভ করে। এটাই হলো মারিফাহ (অর্থাৎ জানা)। তাসাওউফের ইমাম, জুনায়েদ আল বাগদাদী বলেছেন, আমাদের এই জ্ঞান (মারিফাহ) কুরআন-হাদীস দ্বারা আবদ্ধ।
ইমাম কুশায়রী লিখেছেন: যেসব বাতেনী জিনিস, শরীয়াহসম্মত নয় তা বাতিল।িআসুন দেখি এদের এমন বলার কারণ কী:
১. আরামসে গাঞ্জা খাওয়া যায়। এ বিষয়ে একটা গানও আছে । দেখি পাইলে দেব আপনাকে।
২. নারীদেহ ভোগ করা যায়। তাছাড়া পর্দা করা দরকার হয় না। যেহেতু মনের পর্দাই বড় পর্দা!!!
৩. শরীয়তের কোনো বিধিবিধান পালন করা দরকার হয় না। অর্থাৎ যে কারণে বেশীরভাগ নাস্তিকরা নাস্তিক সে কারণেই এরা শরীয়াহবিরোধী।
৪. শয়তান ও নফসের (এনিম্যাল সউল) পাবন্দী করা যায়। এটা ইন্দিয়সুখ দেয়।
হাহাহাহহাহা সেই কথা কইছেন। শুইনা মজা পাইলাম নিচপর ৪টা যুক্তিতে