‘..পদ্মার ঢেউরে মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা, যা-রে’। এতো রোমান্টিক একটা গান থাকতে দাউদ ফেসবুকে ফটোর টাইটেল দিলো ‘সর্বনাশী পদ্মা’। কি দুঃখজনক!
পদ্ম নাই পদ্মায়। মাথায় আসলো আর লিখে ফেললাম। কারণহীনতাকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো কোন বিষয় না, কারণ আপনি ভ্রমণে আছেন। কিন্তু ভ্রমন এতো তুচ্ছ নয়, আরো গভীর কিছু দাবি করে। সমুদ্রের কাছে গিয়ে যদি হৃদয়কে সমুদ্রময় করতে না পারেন তবে ভ্রমনের কি মূল্য। তাই কথাটার আপাতত কোন মানে না থাকারও অনেক অর্থ হতে পারে। স্রোতে পদ্ম জম্মায় না। পদ্মের জন্য লাগে স্থির পানি। তাই পদ্ম নাই পদ্মায় তার দ্যোতনা অনেক। নদীর জল স্থির হলে দুনিয়া চলবে কেমনে?
এই পদ্মার সাথে অন্য একজনের দারুন মিল। এমনকি নামেও। সেও স্থির নয় অস্থির। নিজের পুজা পেতে তুলকালাম কান্ড করেছে। এটা ছিলো নারীর অধিকার আদায়ের লড়াই। সে হলো হিন্দু পুরাণের মনসা । মনসার আরেক নাম পদ্মা। মনসা শিবের কন্যা। পদ্ম পাতায় রাখা বীর্য থেকে তার জম্ম। এছাড়া বলা হয়ে থাকে গঙ্গার উৎপত্তি মহাদেবের জটা থেকে। মহাদেব শিবের আরেক নাম।
হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় (মানাকোসা ও দুর্লভপুর ইউনিয়ন) বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নাম নিয়েছে। অন্য শাখাটি ভগীরতি নামে ভারতে হুগলীর দিকে প্রবাহিত হয়েছে। সেই ভগীরতি ও হুগলী নদীর নাব্যতা বাড়াতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের জল ডাকাতি করে নিচ্ছে ইন্ডিয়া। এ ডাকাতির ক্ষতচিহ্ন বাংলাদেশ জুড়ে বিদ্যমান।
উৎস হতে ২২০০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে পদ্মা নাম বহাল রেখে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। তারপর মেঘনা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বাংলাদেশের ২য় দীর্ঘতম এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩৬৬ কিলোমিটার। রাজা রাজবল্লভের কীর্তি ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ধ্বংস হয় বলে পদ্মার আরেক নাম কীর্তিনাশা।
সেই কীর্তিনাশা পদ্মা দেখতে আমরা হাজির হয়েছিলাম কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাটে। এ শিলাইদহে আছে কবি রবীন্দ্রনাথের জমিদারির স্মৃতিময় কুঠিবাড়ি। এই নিয়ে তৃতীয়বার শিলাইদহে আসা। আমি আর দাউদের এক সাথে দ্বিতীয়বার আসা। আমাদের সাথে ছিলো চট্টগ্রামের গালিব, তানিম, রোকন, রূপম ও স্বদেশ। কুষ্টিয়ায় যারা লালনের মাজারে আসেন তাদের একটা বড় অংশ শিলাইদহের কুঠিবাড়ি দেখতে আসেন। কুঠিবাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দুরত্বে প্রমত্ত পদ্মা। প্রমত্ত বলছি এ কারণে রাজশাহীতে পদ্মা বলতে যে ক্ষীণ ধারা দেখেছি তার সাথে পদ্মার এখানকার রূপ একদম আলাদা। তবে এটা শ্বাশত নয়। রাজশাহী হয়েই পদ্মা কুষ্টিয়া আসে। সে কথা পড়ে আসছি।
এই ২০১২ সালের অক্টোবরের আঠারো তারিখে লালনের মাজারের সামনের নবপ্রাণ আখড়াবাড়ি থেকে আমাদের যাত্রা। ভ্যানে করে দবির মোল্লা, সেখান থেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে তৈরি দেশি ইঞ্জিনের গাড়ীতে করে শিলাইদহ। এই সড়কটি চলে গেছে কুমারখালীর দিকে। কুমারখালী থেকে পাঁচ কিলোমিটার আগে আলাউদ্দিন নগরে ভিনরাস্তা ধরে যেতে হয় শিলাইদহে। এর আগে পরে গড়াই নদীর উপরে বিখ্যাত হাডিঞ্জ ব্রীজ এবং মীর মশাররফ হোসেনের বসতবাড়ি। এই আলাউদ্দিন নগর শিক্ষাবিদ আলাউদ্দিনের নামে। যিনি এই অঞ্চলকে শিক্ষাপল্লী হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
আলাউদ্দিন নগর শিলাইদহের দুরত্ব ৫.১৫ কিলোমিটার। রাস্তার অবস্থা জানতে হলে জান হাতে নিয়ে দেখে আসতে হবে। একবছর আগে যেমন ছিলো মোটামুটি তার কাছাকাছি। ধারণা করলাম হয়তো এই এক বছরে একবার সংস্কার রয়েছে। তারপর আগের অবস্থায় ফিরে গেছি। এটাই শ্বাশত। হাড়-মাংস আলাদা হয়ে যাবার ভয়ে আমরা বসা থেকে দাড়িয়ে গেলাম। আর রূপম রাস্তায় লোকজনকে সালাম দিয়ে যাচ্ছে। সে নাকি জননেতা হবে। সে জননেতা হলে ভালোই হয়। হয়তো এই রাস্তার কথা ভাবত। ভেবে অবাক হই, বাংলাদেশের রবীন্দ্রপ্রেমীরা কেন এই সড়ক সংস্কারে দাবি তোলে না। তাদের খরচ করা কার্বনে এ দাবি কখনো দেখি নাই। মোটামুটি আধঘন্টা পর কুঠিবাড়িতে এসে পৌছলাম। দশ টাকা টিকেট কেটে কুঠিবাড়ির মিউজিয়াম পরিদর্শন। আমার জন্য দেখার নতুন কিছু ছিলো না। বড় একটা সময় গেছে পুকুর পাড়ে বসে হাওয়া খেতে। এখানে আছে কুষ্টিয়া প্রসিদ্ধ কুলফি আর ঘোড়ায় চড়ার অবস্থা। নাগরদোলাও আছে। চাইলে ফ্রি গান শুনতে পারেন। পুকুরপাড়ে একতারা হাতে লোকজন গান গায়। বেশিরভাগ ভুলভাল লালনগীতি। হাততালি কম পড়ে না। আসুন কুঠিবাড়ির সাথে পরিচিত হই।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে বিরাহিমপুর পরগনাভূক্ত গ্রামটি ভাবের রাজ্য নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। মুর্শীদকুলী খান থেকে পরগনাটি নাটোরের রাজা রঘুনন্দ ইজারা নেন। ১৮০০ সালে রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর বিরাহিমপুর মৌজা নিলামে কিনে নেন। শেলী নামের নীলকর থেকে ক্রয় করে জমিদারের বাসস্থান তৈরি করেন। সেই কুঠিবাড়ীসহ শিলাইদহ গ্রামটিকে পদ্মা গ্রাস করলে ১৮৬২ সালে পুনরায় ‘খোরসেদপুর’ মৌজাতে নতুন কুঠিবাড়ী তৈরি করেন। যা বর্তমানে শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী নামে পরিচিত। পদ্মা ও গড়াই এর মধ্যবর্তী শিলাইদহ ছিল কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের জমিদারী এস্টেট। ১৮০৯ সালে ঠাকুর পরিবার এই জমিদারী এস্টেট কিনেন। ১৮৭৬ সালে কিশোর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথম শিলাইদহে আসেন। জমিদারিত্বের ভারপ্রাপ্ত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে আসেন ১৮৯২ সালে। শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন- যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন, সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর, আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি প্রভৃতি। শিলাইদহে ছিলেন ১৯২২ সাল পর্যন্ত। ঠাকুর পরিবারের জমিদারী ভাগাভাগি হলে শিলাইদহ জমিদারী সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অংশে পড়ে। ফলে ১৯২২ সালে রবীন্দ্রনাথ কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ত্যাগ করেন। এরপরও তিনি দু’বার শিলাইদহে বেড়াতে এসেছিলেন ।
কুঠিবাড়ি বর্তমানে প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের একটি পর্যটন কেন্দ্র। কুঠিবাড়ির পাশে সরকারি ডাকবাংলোসহ থাকার নানা ব্যবস্থা আছে। মোট ১৭টি কক্ষের কুঠিবাড়ির তিনতলার চিলেকোঠা ছিল কবির লেখার ঘর। প্রদর্শনীতে আছে একটি পালঙ্ক, পড়ার ও লেখার টেবিল, গদিচেয়ার, সোফাসেট, আলমারি, আলনা, হাতপালকি, ৮ ও ১৬ বেহারার পালকি, চঞ্চল ও চপল বোট, ঘাস কাটার যন্ত্র ও পানি ফিল্টার যন্ত্র। এছাড়াও কবির নিজ হাতে আঁকা ছবি, চিঠি, পান্ডুলিপি ও বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি ও বেশ কিছু বই।
বেশ তো হলো কুঠিবাড়ি দর্শন। তারপর পুকুরপাড়ে বসে কুলফি খেয়ে ভ্যানে চেড়ে ছড়ে পদ্মার ঘাটে। মিনিট পাচেঁক পর ঘাটে হাজির হলাম। টিকিট কেটে ইঞ্জিনের নৌকায় উঠলাম। চলছিল নানান খুনসুটি।
আগেরবার সাধ হয়ে ছিলো দাড় বাওয়া নৌকায় পদ্মা পেরুবো। সন্ধ্যা নেমে যাওয়ায় তা হয় নাই। আফসোস হচ্ছিল ঐ তো পাড় দেখা যাচ্ছে। দাউদ রাজী হচ্ছিল না। পরে ইঞ্জিনের নৌকায় যাওয়া হলো।অনুমান করেন কতো সময় লেগেছিলো। আর যেটাকে আমরা পাড় বলছিলাম সেটা ছিলো কাশফুলে ঢাকা চর। এখন অবশ্যই চর না বলে দ্বীপ বলা যায়। হ্যাঁ পদ্মা পেরুতে আমাদের চল্লিশ মিনিট লেগেছিলো। এইবারও চল্লিশ মিনিট লাগল। সোজাসুজি নয় আড়াআড়ি। যাওয়ার পথে স্রোত প্রতিকূল । আসার সময় সামান্য কম লাগে। সেই বারে ঐ পাড় থেকে রওয়ানা দিয়েছিলাম গাঢ় অন্ধকারে। আকাশে চাঁদ ছিলো না। এ যেন তারার আলোয় পথ চলা। অবশ্য সন্ধ্যায় মিললেই তারা মেলে এমন না। কোন ধরণের আলোর নিশানা ছাড়া চরের ফাঁকে ফাঁকে নৌকা নিয়ে এই পাড়ে কেমনে নিয়ে এসেছিলো আমরা ভেবে অবাক হই। সে অন্ধকার বেশ উপভোগ্য। মানুষকে নিরব করে দেয়।
এবার তো অন্ধকার নাই, আছে মধ্যদপুরের গরম। যাকে বলে ছাতি ফাটা অবস্থা। সাতজনের একেকজন একেক কারণে ব্যস্ত। যেমন- রুপম মোবাইলে অনবরত কথা বলে যাচ্ছে, কোন বর্ণনায় বাদ দিচ্ছে না। বুঝা যাচ্ছে ধারাবর্ণনা ভালোই রপ্ত করেছে। তানিম মোবাইলে একই গান শুনছিল বারবার ‘বাইনদুয়ারদি নু আইসসো বন্ধু নিশিরোকালে…’। স্বদেশের শরীর খারাপ, তাকিয়ে আছে দূরের কাশবনে। রোকন মোবাইলে নিজেকে ভিডিও করছিলো। আমি আর দাউদ এটা সেটা বলছিলাম। নানা সময়ে চলছিলো ফটো তোলা। তবে সবার আগ্রহ পদ্মার চর নিয়ে।
নদীতে মানুষ যা করুক এক সময় চুপচাপ করে নদীর দিকে তাকাতে হয়। সেই নিয়ম মেনেই যেন আমরা সবাই চুপচাপ। আমরা দেখছিলাম আর দেখছিলাম। আসলে কি দেখছিলাম, জানি না। আর কি ভাবছিলাম। নদী কি ভাবনা দেয়? এটাও একটা প্রশ্ন। সহজ প্রশ্ন নদী কোথা থেকে আসে কোথায় নিয়ে যায়। মানুষ তার উৎস জানতে চায়। সে জানতে চাওয়ার সাথে নদীর উৎস খোজার মিল আছে। আবার কেউ কেউ বলেন জীবন নদীর মতো বয়ে চলে। যারা সচরাচর নদী দেখে না তাদের জন্য নদী মুগ্ধতা নিয়ে আসে। হয়তো খানিক রোমান্টিকতা, খানিক ভাবুলতা অথবা ভাবুকতা। আর যারা সবসময় নদী দেখতে অভ্যস্ত তাদের কেমন লাগে। এটা হলফ করে বলতে পারব না। সবই অনুমান। কারো কারো মাঝে ক্ষনিক নিমগ্নতা দেখে ভাবি এটা নদীর অনেক দানের মধ্যে একটা।
একসময় অন্যপাড়ে ভাসমান প্লাটুনে ভেড়ে নৌকা। আমরা নেমে পড়ি। আমরা এখন আর কুষ্টিয়ায় নাই, অন্য একটা জেলায় চলে আসলাম। পাবনা। মজার না। তবে পাবনা হলেও বৈশিষ্ট্যসূচক আলাদা কিছু চোখে পড়ে নাই। যতদূর চোখে পড়ে ঘাসে ঢাকা মাঠ। সে মাঠে ঘাস খাচ্ছে দুটো ঘোড়া। হাড্ডিসার ঘোড়া। গরম থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিলাম ঘাটের ইজারাদারের চালায়। তিনি আমাদের তাড়াতে পারলেই বাঁচেন। অথচ কত মানুষ কত ভাব নিয়ে তাকাচ্ছে। তাদের চোখে মায়া টের পাওয়া যাচ্ছিল। এই লোক আসলে কোন ঘাটের ইজারাদার!
নানান ধরণের লোকজন আসছে। মটর সাইকেল আর সাইকেলও আছে। এই পাড় থেকে ঔপাড়ে তরকারি থেকে শুরু করে বিস্কুট-কেকসহ নানান পণ্য যাচ্ছে। দাউদ বলে উঠল সাইকেল কোম্পানী যদি দেখে সাইকেল এতো এতো পণ্য পরিবহন করতে পারে- তাইলে তারা কোয়ালিটি কিছুটা ডাউন করে দিতো। চাহিদা আর যোগানের মধুর সম্পর্ক নাকি এই!
মাছ নিয়ে নৌকা আসছে। ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে। একটা দেশি ইঞ্জিনের গাড়ি। পাশে দাড়ানো একজন মানুষ। আমরা এক লোকের দায়ের হাতল তৈয়ার করা দেখছি। একজন আসলো মোবাইলের সমস্যা নিয়ে। আরেকজন আসলো তার দেখাদেখি। দারুন গরম। ছায়ায় দারুন ঠাণ্ডা। কোলাহলহীন অদ্ভুত চঞ্চলতায় সবকিছু ডুবে আছে। এর মাঝে এই ঘাস, কচুরীপানা, লতা-পাতা, দূরের বাড়ি, দুটি ঘোড়া, জেলে নৌকা, নিখিল আকাশ- ব্রক্ষাণ্ড অথবা ছেউড়িয়ার লালন ফকির অথবা আমরা কজনা। আমাদের মধ্যে কোন বিস্ময় নাই, ভাবুলতা নাই। মিশে গেছে সবই। সবাই চুপচাপ। আমরা কেউ ফেরার নাম নিচ্ছি না। জানি ফিরে যাওয়ায় মানুষের নিয়তি।
ফিরতি পথ ধরতে হলো। আসার চেয়ে যাওয়ার পথে যাত্রী বেশি। না, যাত্রীর চেয়ে মালামাল বেশি। এবার সবাই চুপচাপ বসে আছে। কেউ কথা বলছে না। আমাদের মধ্যে গালিবের কৌতুহল বেশি। সে কথা জুড়ে দিলো রফিক নামের একজনের সাথে। যিনি চট্টগ্রামের ভেটেরিনারী কলেজ থেকে পাশ করেছিলেন। এখন থানা শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের কথাবার্তা শুনছিলাম।
যখন পানি শুকিয়ে যায়, তখন নদী পেরুতে নৌকায় পাঁচ থেকে দশ মিনিট লাগে। আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। তখন এই পথে ঘোড়ার গাড়ি চলে। এতক্ষণে ঘোড়ার রহস্য পরিষ্কার হলো। আমরা ভাবছিলাম মাঠের ঘোড়াগুলো কোন কাজে আসে। তিনি আক্ষেপ জানালেন দেশের রাজনীতি নিয়ে। এদেশের কোন সরকারই নদীর জল প্রবাহের জন্য কোন অবস্থা নিতে পারে নাই। আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে পারে না। অথচ ইন্ডিয়া ঠিকই তিব্বতের নদীর বাঁধ নিয়ে কথা তুলেছে। এখন নাকি নদীতে পানি থাকার কথা না। আকস্মিক বন্যায় এমন হয়েছে। কিন্তু আমি ভাবছিলাম গতবছরও এই সময়ও পানির স্তর এমন ছিলো। তবে উনিশ বিশ তো হয়। শুধু এপ্রিল মাস নয় চারবারের রাজশাহী ভ্রমনে সবসময় পদ্মায় সামান্য পানি দেখেছি। মজার বিষয়- আমরা পদ্মা সেতু বা দুর্নীতি নিয়ে কথা তুলি না। সব তো সয়ে গেছে।
তিনি মাছের কথা তুললেন। কিভাবে কারেন্ট জাল দিয়ে নিদিষ্ট এলাকা ঘিরে মাছ ধরা হয় তা জানালেন। জানালেন বিষ দিয়ে মাছ ধরার কথা। আমি আকাশের দিকে তাকাই। হালকা সাদা মেঘ। কি চমৎকার। অথচ কোন এক অভিশাপ আমাদের পুড়িয়ে দিচ্ছে। সে মেঘের কোন ছায়া নাই। নাকি আমরাই নিজেদের পুড়ায়। অভিশাপকে নিয়তি বানায়। পদ্মার পোড়া দিনগুলো কেমন? যখন জলশূন্য হয়ে পড়ে পদ্মা।
হয়তো একের হক্ব নষ্ট হলে সমগ্রের হক্ব নষ্ট হতে থাকে। বাদলা সবসময় কঠিনই হয়।
আবার শিলাইদহ ঘাট। বাঁশঝাড়ের ছায়ার বসে দুনিয়ার সবচেয়ে জটিল আখ নিয়ে বসেছি। দাঁত থাকবে কিনা সন্দেহ। এরপর ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে আবার আলাউদ্দিন নগর। সেখান থেকে দবির মোল্লা। ইতিমধ্যে দিবসের ছায়া দীর্ঘ হতে শুরু করেছে। আমরা সেই ছায়াকে আরো দীর্ঘ করে তুলি। দীর্ঘ করে তুলে পদ্মার স্মৃতি। সবার চোখে গাঢ় তৃপ্তি। দুপুরের না খাওয়া, তীব্র গরম, রাস্তার কষ্ট কোনটাই আমাদের মলিন করতে পারে নাই।
আর পদ্মা- সে কি দিয়েছে? পদ্মা আমাদের পদ্মের মতো স্থির হতে বলে নাই। বলেছে ছুটতে। বুক জুড়ে ফুটাতে বলেছে পদ্ম। ভালোবাসার পদ্ম। আমরা ছুটে চলেছি জীবনকে ভালোবেসে। সে ভালোবাসা নদী আমাদের বুকে গুপ্তধনের মতো গোপন কোটরে বন্দী করে দিয়েছে। হোক গুপ্ত, আমরা রাশি রাশি মোহর প্রকাশ করব জীবনের প্রবাহে।
হে পদ্মা, তোমার জন্য আমাদের হৃদয় পদ্ম।
উৎসর্গ: শাহাদাত উদরাজী ভাই। যিনি আমার প্রতিটি লেখা পড়েন। এটাই প্রধান কারণ না, আমার প্রতি তার মমতা বেশ টের পাই।
লেখাটা পড়ে নিচে নেমে কিছু লিখতে কি বোর্ডে হাত রাখছিলাম এবং চরে ঘাস খাওয়া দুটো ঘোড়া দেখছিলাম। অন্যদিকে ভাবছিলাম ছবিটা সেইভ করে রেখে দেব।
কিন্তু এখন বসে কাঁদছি!
আজ বিকাল ৩।৩০ মিনিটে আমাদের কয়েকজন ব্লগার একটা আড্ডার আয়োজন হচ্ছে। অনেকেই আসবেন। আপনিও সময় পেলে চলে আসুন। আড্ডার আয়োজক চট্রগ্রামের ডা ফয়সল ভাই (শব্দপুঞ্জ ব্রাদার)। ধানমন্ডি ২৭ নম্বারের সাম্পান রোস্তারায়। চলে আসুন, আপনাকে সবার সাথে পরিচয় (অনেককে আপনিও চিনেন) করিয়ে দেব। ০১৯১১৩৮০৭২৮
আমন্ত্রণ পেয়ে খুশি হলাম। এক্ষুনি বেরুচ্ছি।
চমৎকার সময় কাটল। অশেষ শুকরিয়া। এখন অবস্থা হবে- ‘ডাকলে আসি, না ডাকলেও আসি’।
হা হা হা…। আড্ডায় হারানো কিছু নাই!
আড্ডা কেমন লাগল!
http://wp.me/p1KRVz-ue
আড্ডা পোষ্ট!
অসম্ভব রকম ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে আমার সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলো। গুড লাক ওয়াহিদ সুজন। 🙂
সুজন ভায়া, আমিও এক সময় কারো সাথেই দেখা করতাম না। এতে মনে হয় অনেক কিছু থেকেই নিজকে বঞ্চিত হয়েছি। এখন আর সেই নেই!
🙂
অনেক আড্ডাবাজি হল, না? বেশ বেশ 🙂
ইয়া, বেশ বেশ।।
হুম।
শিলাইদহ যাওয়া হইছিল ২০০৭ সালে। কুষ্টিয়া যাওয়ার অভিজ্ঞতাই অন্যরকম ছিল তখন।
আর পদ্মা দেখেছি রাজশাহীতে। পদ্মার বালুতে হাটছি রাতের বেলা।
আর হ্যা,পদ্মা পাড়ি দেই মাওয়া হয়ে। প্রথমবার পাড়ি দিয়েছিলাম ছাদখোলা ট্রলারে, বাকীসববার ছোট লঞ্চে। ঘন্টা দেড়েক লাগে।
হুমম… ইস্টিমার, স্পিডবোট আর ফেরিতেও পার হইছি। লেখা পড়ার জন্য শুকরিয়া।
অসাধারণ একটা পোস্ট। খুব ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ ভাই।