চিন্তা সম্পর্কে সহজ যে ধারনা আকাঁ যায়, চিন্তার রুপ হলো নৈর্ব্যক্তিক। এই ভাবনার ধরন অনেকটা অতীন্দ্রিয় বিশ্বাসের মতো। জাগতিক জীবনের প্রত্যাহিকতা কোন না কোন ঘটনায় মূর্ত হয়ে উঠে। তার বর্ণনা কিছু না কিছু প্রত্যয়ের মিলামিশা। আর বিদ্যমান পরিস্থিতি হলো এদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিচার। যা একাধারে দ্বান্দ্বিক আবার নির্ভরশীলতারও বটে। এখানে সাধারন কোন নিয়মের আওতায় সমরূপতা বা দ্বন্দ্ব বা যা ঘটে থাকে, তার বোঝাপড়া আসে চিন্তার ভেতর দিয়ে।
ঘটনার যে বর্ণনা এবঙ তার যে চিন্তা, তারা পরস্পর অভিন্ন নয়। যেমন, প্রয়োগিক বাস্তবতার (ধরে নিচ্ছি) আচরণ আর চিন্তার বাস্তবতার আচরণ হুবহু প্রতিরুপ নয়। চিন্তা ভাষায় প্রকাশিত হলেও তা ঠিক তা-ই নয়, যা আসলে চিন্তা। এভাবে বলা যায়, চিন্তা তাই সে নিজে যা। এই ধরণের ঘটনায় নৈর্ব্যক্তিকতার প্রতি মোহ থাকে। প্রশ্ন হলো ’নিজে যা’ (অথবা খোদ নিজ) এটা বলতে পারার হিম্মতটা কি জাগতিক কোন ঘটনা কিনা? হাঁ, তবে দাবী করতে পারার ক্ষমতার মীমাংসা আলাদা। নৈর্ব্যক্তিকতার যে আকষর্ণ তা মূলত: শব্দ হিসেবে, মোটেও নন্দনের দিক হতে নয়, নৈতিকতার দিক হতেও নয়। যদিও এমন বিশ্বাস বিদ্যমান। এটা এক ধরনের বিমূর্ত আকাংখা। বিশ্লেষণের দিক হতে এর মূল্য থাকতে পারে, স্বরুপের দিক হতে নয়। স্বরুপগতভাবে চিন্তায় গভীর অর্ন্তদ্বন্দ্বের দেখা মেলে, যা একাধারে বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ। বাহ্যিকভাবে জগতের সামনে সরলতার পর্দা ঝুলে থাকে, যেখানে চরিত্রগতভাবে মানুষ চিন্তনকর্তারুপে আবির্ভূত হন। আভ্যন্তরীণভাবে এক ধরণের জটিল উপলব্দি অস্বস্থিকরভাবে আমাদেরকে আশ্রয় করে, যা সহসা ঝেড়ে ফেলে আমরা স্বস্থি বোধ করি। বিশ্লেষণের দিক হতে চিন্তাকে স্থান-কালে স্থাপন করা হয়, যদিও একই সাথে স্থান-কাল ছাড়িয়ে যাওয়ার দুঃসাহস বিদ্যমান। আমাদের বিবেচনা হলো, নির্দিষ্ট চিন্তা কোন নির্দিষ্ট স্থান-কালে কি ভূমিকায় অবতীর্ন হয় অথবা কোন কালপর্বে কোন নির্দিষ্ট চিন্তার জম্ম নেয় বা কেন নেয়? তা কি ভবিষ্যদ্বাণী করে অথবা অতীতকে কিভাবে ব্যাখ্যা করে অথবা আমাদের অতীত মূল্যায়নের নতুন ব্যাখ্যা কি হতে পারে। তারপরও চিন্তাকে নিরাসক্ত কেন্দ্রে পর্যবসিত করার প্রবৃত্তি আমাদের মাঝে বিদ্যমান। যদিও মহত্বের একপেশে ভঙ্গি বিরল নয়। তবে মোটা দাগে ন্যায্যতা, ন্যায়পরায়নতা প্রভৃতির সাধারন সংজ্ঞায়নে এর ভূমিকা অস্বীকারের উপায় নাই।
আবার জ্ঞানের সত্যতা বিচারে জোরালোভাবে নির্মোহ সত্য জ্ঞানের কথা আসে, যা সত্যের মানদন্ডরুপে কাজ করে। এই অর্থে, চিন্তারুপ সত্যের সাথে এমন কিছু থাকতে পারে যা স্বরুপতঃ আমাদের অস্পর্শ্য। সরল বিচারে, একইভাবে সত্যের সাথে আমাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র ব্যবহারিক অর্থ বিচারে, আমরা সবসময় চুড়ান্ত কিছুর অন্বেষণ করি মাত্র, যার পরিসীমা আমাদের চিন্তার ভেতর।
জগতের সাথে ব্যক্তির পরিচয়ের উপরকার মাধ্যম হলো অভিজ্ঞতা, অপরদিকে তার মানস (বৌদ্ধিক চেতনা, যা শর্তহীন নয়, এবং এই ধারণার মধ্যেও যথেষ্ট বিপত্তি। শুধুমাত্র সহজ ধারণার স্থান হতে এর যাত্রা) কাঠামো সেই অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করতে উম্মুখ হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতার আবির্ভাবে আমরা পাচঁ ইন্দ্রিয়ের কথা বলি, মানস কাঠামোর কথা বলতে ষষ্ট কোন কিছুতে দ্বারত্ব হই। আপাতত অপেক্ষা করা যাক। অভিজ্ঞতা এবঙ বৌদ্ধিক চেতনার মাঝে তৃতীয় কোন কাঠামোর অস্তিত্ব প্রশ্ন সাপেক্ষ, সেই প্রশ্নের সম্ভাবনা একেবারে ফেলনা নয়। এই সবকিছু মিলে প্রাথমিক প্রত্যয় তৈরী করে। এখানে আমাদের চিন্তার খেলা। সাধারণত: ধারণা করা – এটি বৌদ্ধিক ক্ষমতা বলে নির্ণিত হয়। পারিপার্শ্বিক ঘটনার দায়ও আমরা এড়াতে পারি না। কারণ আমি নিজে যা, তা আমার ভেতর স্তরীভূতভাবে সাজানো হলেও তার একটি উৎস বিদ্যমান, এটা কোন নির্দিষ্ট প্রতিবেশে লালিত হয়। এটা মনে রাখুন জগতের সকল কিছু পরিবর্তনশীল। তাই ব্যক্তিক বিকাশের বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে চিন্তার সমরূপতা, তা শুধুমাত্র ব্যক্তিক বিকাশের বৌদ্ধিক ক্রিয়াই নয় সমরূপ যৌক্তিক প্রতিবেশে লালনের ঘটনাও বটে। এখানে কোন কিছুকে শুধুমাত্র সার্বিক বা বিশেষ হিসেবে দেখার অবকাশ নেই, একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন আছে, যা আবার সম্বন্বয়ের মতো দুস্প্রাপ্য এবং অলীক বস্তুও নয়।
(সম্পূর্ণ লেখাটি পাওয়া যাবে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত, দাউদুল ইসলাম সম্পাদিত সুত্রপাঠ পত্রিকার নতুন সংখ্যায় )
দর্শনে বরাবরই আমি আনাড়ি। খুব ভালো লাগল চিন্তাপাঠ। অনেক শুভ কামনা 🙂
বুঝেন না… একটু বেশি বলে ফেললেন।
আশা করছি ভালো আছেন। শুভ কামনা।