শিকারি পুরুষের বিয়ে ও কিশোরের স্বপ্নভঙ্গ

ফ্রেড জিপসন ও ‘হাউন্ড-ডগ ম্যান’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘শিকারি পুরুষ’

২০১৯ সালের শেষ দিন। সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে মনে হলো, ‘বড়দিনের পানি এত ঠাণ্ডা কেন?’ যদিও সে দিন আগের কয়েকদিনের তুলনায় ঠাণ্ডা না-ই। আসলে এই কথাটা বড়দিনের সকালে মনে পড়ার কথা। এত বছর ধরে তা-ই হচ্ছিল। এবার পাঁচ দিন দেরি হয়ে গেল পাঞ্জেরি!

কাহিনিটা হলো- এটা একটা বইয়ের প্রথম বা প্রথম পৃষ্টার লাইন। এসএসসি পরীক্ষা দিয়াই পরদিন ঢাকা চলে আসি। তখন এক ফুফাতো ভাই জগন্নাথে পড়তেন। উনার সঙ্গে দেড়দিন পুরান ঘোরাঘুরি করছি। যদিও তেমন ভালো লাগে নাই, সারাক্ষণ মনে হচ্ছিল কখন বাসায় যাবো। অথচ উনি যত্ন-আত্তির কোনো ত্রুটি রাখেন নাই।

আসার সময় বললাম, সেবা প্রকাশনীতে নিয়া যান, বই কিনে দেন। সেখান থেকে রবিনহুড ও শিকারি পুরুষ বই দুইটা কিনে দিছিলেন ভাইয়া। এর মধ্যে ‘শিকারি পুরুষ’ হারিয়ে ফেলার আগে পর্যন্ত কতবার পড়ছি মনে নাই। বড়দিন নিয়ে লাইনটা ওই বইয়ের। সেখানে ছেলেটা মাকে বোকা বানানোর জন্য চুলে সামান্য পানি লাগিয়ে দিতো।

ফ্রেড জিপসনের ‘হাউন্ডডগ ম্যান’ বইয়ের অনুবাদ এটা, করছিলেন রকিব হাসান। মূলত এক কিশোরের কাহিনি। যে বাবার বাউণ্ডুলে বন্ধুকে খুবই পছন্দ করতো। যে কিনা বন-বাদড়ে ঘুরে বেড়াতো। তার প্যান্ট ছিল ফুটো, কোনো পার্টিতে গেলে বন্ধুর কাছ থেকে জামা ধার নিতো। এই হলো ব্যাপার। তার সঙ্গে কিশোর ছেলেটা শিকারেও গেছে কয়েকবার। উপন্যাসে শেষে একজনে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যায় সবাই। সেখানে একটা ঘটনা আছে। বাবার বন্ধু ভিলেন টাইপের এক লোকের তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে আড়ালে কথা বলে। এই নিয়ে মহাক্যাচাল। তখন একটা মেয়ে বলে, ওই বউ ছিল না, ছিলাম আমি। কিশোর ছেলেটাকে মানা করে দেয়- আসল ঘটনা যেন কাউরে না বলে। কারণ ওই-ই একমাত্র সাক্ষি। ও বুঝতে পারে না, মিথ্যা বলার মতো খারাপ কাজ কেন করে? পরে সবাই অতিউৎসাহে তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। এই নিয়ে ছেলেটার মন খারাপ হয়ে যায়। তখন বাবা বোঝানোর চেষ্টা করে যে- সংসার কেন দরকার। ছেলেটাও কথা আদায় করে নেয়- আগের মতো জঙ্গলে ঘুরতে যাবে। যদিও সে বোঝে ব্যাপারটা তত সহজ না।আমারও খুব মন খারাপ হইছিল! এই ব্যাপারগুলো আমাদের নিজেদের জীবনেও মিলাতে পারি। বা সোসাইটিতে বিবাহিত মানুষ নিয়ে এই পূর্বধারণা আছে শক্ত ভিত্তিসহ, যা কারো কারো ক্ষেত্রে পূর্বগ-অনুগ সূত্র মেনে চলে বা কারো ক্ষেত্রে উল্টো। এবং মনে করার চেষ্টা করছি, আমার কিশোরবেলার নায়করা কে কোথায়?

যে কথা দিয়ে শুরু করছিলাম। তা হলো- বড়দিনের পানি ঠাণ্ডা হওয়ার রহস্যটা বুঝতে আমার অনেক সময় লাগছিল। বড়দিন যে শুধু শীতে আসে এটা আমার ধারণায় ছিল না। একই রকম ধাঁধা ছিল- শবে বরাতে কেন মাঝ রাতে মাঝ আকাশে চাঁদ দেখা যায়। পরে বুঝতে পারছি- চাঁদের হিসেবেই শবে বরাত হয়। সূর্যের হিসাবে উৎসব হয় না বলে মুসলমানদের এই দিবসের চিত্র একেক বছর একই রকম হয়ে ধরা পড়ে।

ওয়াল্ট ডিজনির ক্ল্যাসিক ‘ওল্ড ইয়েলার’ সিনেমার দৃশ্য

তো, ফ্রেড জিপসনের আরেকটা উপন্যাস পড়ছিলাম। ‘ওল্ড ইয়েলার’, অনুবাদ সেই রকিব হাসানই। এখানকার গল্প সিভিল ওয়ারের শেষ দিকে। ট্রাভিস নামের এক কিশোরের বাবা গরু বেচতে যায় অনেক দূরের এলাকায়। এ সময় মা ও ভাইয়ের দেখাশোনা তাকেই করতে হবে। ক্ষেতে কাজ করা, বাড়ি পাহারা দেওয়া, শিকার করা নানা ব্যাপার। একটা বেওয়ারিশ কুকুরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায় মেবি। পরে কুকুরটা সাপের কামড়ে মারা যায়। ব্যাপারটা খুবই কষ্টকর। এ দিকে তার বাপ নির্দিষ্ট সময়ের বেশ পরে ফেরে। ততদিন ছেলেটা বয়সে কিশোর হলেও মনের দিক থেকে অনেক বড়। এই বইটাও মেলাবার পড়ছি। এখনো মেবি পুরোনো বইয়ের মধ্যে রয়ে গেছে।

Comments

comments