রাজ্জাক। শেষ জীবনে অবশ্য পুরো নাম ‘আব্দুর রাজ্জাক’ই বেছে নিয়েছিলেন পর্দার জন্য। নাম আর কর্ম দুই মিলিয়ে হয়ে গেল উপাধি— নায়করাজ। যদিও দুই ‘রাজ’ ভিন্ন ব্যাপার। মানুষ তো এক!
নায়করাজ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্রথম যে লাইনটি মাথায় এলো— তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। মানে পুরো বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রডিউস হওয়া ১০ ভাগ সিনেমা। না, সংখ্যার হিসেবে তো চলছে না! গুঞ্জন আছে, এক মিশা সওদাগরই অভিনয় করেছেন আট শতাধিক সিনেমায়— মানে ২৫ ভাগ! সালমান শাহ করেছেন ২৭টি, মানে এক ভাগেরও কম।
এক.
দাঙ্গার কবলে পড়ে ১৯৬৪ সালে কলকাতার টালিগঞ্জ (যেখানে স্থানীয় সিনে ইন্ডাস্ট্রি) থেকে ঢাকায় আসেন রাজ্জাক। সহকারী, সহশিল্পী হিসেবে কাজ করার পর জহির রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। জহির বলেন, ‘আপনি তো এখানকার মানুষ নন। কোত্থেকে এসেছেন?’ রাজ্জাক বলেন, ‘কলকাতার।’ ঝটপট জহির বলেন, ‘রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে সোজা আমার কায়েতটুলির বাড়িতে চলেন।’
জহির রায়হানের সঙ্গে বাতচিতের অংশটি প্রথম আলোয় প্রকাশিত রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া। এ ‘ঝটপট’ আর ‘কলকাতা’র সম্পর্ক ‘পূর্বগ-অনুগ’ কিনা জানি না। ছোটখাট অনুমান তো করা যায়!
তখনকার জনপ্রিয় জুটি রহমান-শবনমকে দেখলে কলকাতার উত্তম-সুচিত্রার কথা মনে পড়তেও পারে। বোম্বেও যে মনে পড়ে না— তা না। এই যেমন; দীলিপ কুমার-মধুবালা। রাজ্জাক তো খাঁটি কলকাতার মাল, মুম্বাইও গিয়েছিলেন ফিল্ম করতে! শেষমেষ থিতু হন ঢাকায়।
শুধু অভিনেতা নয়, প্রযোজক-পরিচালক-চিত্রনাট্যকারও ছিলেন রাজ্জাক। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ‘চাপাডাঙ্গার বউ’ (১৯৮৬) ও ‘উত্তর ফাল্গুনী’ (১৯৯৭) (এটা কি কারো উপন্যাস/নাকি সুচিত্রার সেই সিনেমা অবলম্বনে) বানাতে দেখবেন তাকে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বৈকুন্ঠের উইল’ গল্প থেকেও বানাবেন ‘সন্তান যখন শত্রু’ (১৯৯৯)। সেই একই কাহিনীর ‘সৎ ভাই’ (১৯৮৫), সেটাও রাজ্জাকের পরিচালনায় নির্মিত। এগুলো কী তার সাবেকি মানসিকতার চিত্র? আবার এ ঘরানার ‘বাবা কেন চাকর’ কিন্তু শেষমেশ ভিন্ন অর্থই তৈরি করল। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ প্রভাবিত ‘অনন্ত প্রেম’ (১৯৭৭) বা সৈয়দ শামসুল হকের অন্যরকম কাহিনীর ‘অভিযান’-এর (১৯৮৪) কথাই বা ভুলব কেমন করে!
এই রাজ্জাককেই পাবেন যিনি ‘ছুটির ঘণ্টা’য় (১৯৮০) স্কুলের ঘণ্টাবাদক, ‘অশিক্ষিত’-এ (১৯৭৮) চৌকিদার বা ‘মাটির ঘর’-এ (১৯৭৮) সাদাসিদে মানুষটা। ঠিক ঠিক উল্টো দিকে ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ (১৯৮৪) সিনেমার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে যে কিনা বাবার পীরালিকে বিশ্বাস করে না, অথচ তার উপরই ভর করে পরম্পরা রক্ষার দায়িত্ব। এ সিনেমায় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব যেভাবে আসে, তা অন্য কোথাও দেখি না। অবশ্য এ সব সিনেমার যে গল্প তা বাংলাদেশের পপুলার বা অন্য সিনেমায় এক্সপ্লোর করা হয় নাই পরে। তা সত্ত্বেও এগুলোই দিয়ে হয়তো রাজ্জাক চেনা যায় নির্ভরযোগ্য অভিনেতা হিসেবে। সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে এ সব সিনেমার আলাদা হয়ে থাকা ও তার নায়ক হওয়া একটা প্রাসঙ্গিক আলোচনার অবতারণা তো করেই।
দুই.
সম্ভবত রাজ্জাকের সর্বশেষ স্মরণীয় সিনেমা ‘বাবা কেন চাকর’। মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। পরের বছর কলকাতায় রিমেক করেন স্বপন সাহা। দুই সিনেমায় নাম ভূমিকায় ছিলেন রাজ্জাক। যার চিত্রনাট্যকার ও বাংলাদেশি সংস্করণের প্রযোজক ও পরিচালক তিনি। সিনেমাটির শেষ দৃশ্যে মৃত স্ত্রীকে নিয়ে বাবা ফিরে যান ‘শান্তিপুর’ নামের গ্রামে। সাংসারিক গঞ্জনার উল্টো পিঠে শান্তিপুর। এ সিনেমা যখন তৈরি হয়, তখন ঢাকাই সিনেমার নামে ‘কেন’ শব্দটি পুনঃপুনঃ ব্যবহার হতে থাকে। যেমন; স্বামী কেন আসামি, শান্ত কেন মাস্তান, বাবা কেন আসামি (এ সিনেমায় রাজ্জাকও অভিনয় করেন)। বাংলাদেশের সিনেমা, নাটক বা সংগীত ইন্ডাস্ট্রি বিবেচনা করলে নব্বই দশক বিস্তারিত আলোচনার দাবি করে। সে সব আপাতত উহ্য রেখে বলা যায়— দশকের শেষদিকে সেই স্বাদ, গন্ধ ও সৌন্দর্য ধীরে ধীরে গলতে শুরু করে! তার বদলে চিত্র ভাষায় নতুন সুর আসে। পপুলার সিনেমায় পরবর্তীতে ‘অশ্লীল’ যুগের আগমন ঘটে— তার ধারাবাহিকতাও এখানে। অর্থাৎ, ওই সময়ে শৈল্পিকতার আড়ালে অনেক অনেক ‘কেন’কে আর চাপা দেওয়া যাচ্ছিল না। কেন যাচ্ছিল না— তা-ই যেন বুঝতে ব্যর্থ হলেন নির্মাতারা। খেয়াল করবেন প্রথমদিকের বাংলা সিনেমার নামগুলো কত কাব্যিক!
এখানে একটা ব্যাপার হলো— শান্তিপুর থেকে রাজ্জাকের ফেরত না আসা। হয়তো পুত্রদের ক্ষমা করেছেন সিনেমার বাবা। অথচ ফিরে আসছে না একসঙ্গে থাকার জন্য। আবার তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে না। (রূপক অর্থে সেরা নির্মাতারাও ইন্ডাস্ট্রি ছেড়েছেন এ দশকে)। চিন্তা করেন আরো কয়েক দশক আগের কথা। ‘ক খ গ ঘ ঙ’ বা ‘টাকা আনা পাই’ (১৯৭০) বা এ ধরনের রাজ্জাক অভিনীত সিনেমায় আমরা গৃহবিবাদ পাই। অতঃপর সবাই সুখে শান্তি বসবাস করতে লাগল সিদ্ধান্ত পাই, অথচ ‘বাবা কেন চাকর’-এ তা থাকছে না।
এর ২১ বছর আগের সিনেমা ‘আগুন’ (১৯৭৬)। মোহসীন পরিচালিত সিনেমাটি সম্প্রতি রাজ্জাক স্মরণে মুক্তি পায় মধুমিতা হলে। এ সিনেমার শেষ দৃশ্যে মৃত মায়ের লাশ কোলে নিয়ে সৎ বাবার অত্যাচারের দুর্গ ছাড়ছেন রাজ্জাক। এ দ্রোহে মেলোড্রামা অবশ্যই আছে। গল্প সরল-প্রাণবন্ত, প্রত্যেকটা চরিত্রের নিজস্ব যাপন ও পূর্ণতা আছে। হয়তো গল্প বলার সেই ধরনটা আমরা পরে হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও ‘বাবা কেন চাকর’-এর সঙ্গে এর কোথায় যেন মিল আছে। আরো থাকে অন্তর্গতভাবে সরলতার বিন্যাসটুকু হারিয়ে ফেলার বেদনা! এটা নিছক সময়ের পরিবর্তন নয়। তবে মনে হয়, সালমান শাহর বিখ্যাত সিনেমা ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ (১৯৯৬) ‘আগুন’-এর সেই গল্পকেই তার সময়ের মতো করে ধারণ করেছিল। কিন্তু ‘বাবা কেন চাকর’-এর মতো সার্থক হয় না এ আবিষ্কার। হ্যাঁ, গল্পের দিক থেকে ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ও ‘বাবা কেন চাকর’কে মিলিয়ে ফেলবেন না। বলছিলাম, দ্রোহের রূপান্তরের কথা।
চলতি বছর বলিউডে মুক্তি পাওয়া একটি সিনেমা ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’। সেখানে দেখলাম সিনেমা নিয়ে একটা পাজলে চলে এলো ‘বাবা কেন চাকর’-এর নাম।
তিন.
উপরের উদাহরণ কেন? যদিও ‘বাবা কেন চাকর’-এর গল্প রাজ্জাকের। তারপরও আমরা জানি সিনেমার গল্প ও নির্মাণের দায় অভিনেতার নয়, অভিনয়ে তার একটা পছন্দ বা অপছন্দের ব্যাপার থাকে মাত্র। ঠিক আছে, এটাই মনে রাখি।
রাজ্জাকের মৃত্যুর পর সাধারণত যেমন হওয়ার কথা স্মৃতিচারণের বাইরে দুই-একটা লেখা দেখা গেছে। যা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে স্বাধীনতার আগে রোমান্টিক ও পরের অ্যাংরি অবতারের রাজ্জাককে। তাতে কলকাতার ইমেজ, সামাজিক-রাজনৈতিক কারণ, শহর-গ্রাম সম্পর্ক ও শ্রেণীগত তাৎপর্য তো ছিল। সমাজে বিদ্যমান অসন্তুষ্টি ছুইয়ে পড়ছিল সিনেমায়ও। সেই কথাও পেলাম।
এটা ঠিক যে রোমান্টিক সিনেমা ‘শেষ পর্যন্ত’ (১৯৬৯) বা ‘স্বরলিপি’র (১৯৭০) রাজ্জাককে দেখার পর ‘আগুন’ হয়ে জ্বলে উঠার ব্যাপারটা খাপ খায় না। কিন্তু দেখেন ঢালিউডের প্রথম অ্যাকশন মুভি ‘রংবাজ’-এর (১৯৭৩) রংবাজ তিনি। এটা গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর। সিনেমা আরো বেশি জনবান্ধব হচ্ছে।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ববিতার সঙ্গে অভিনীত ‘স্বরলিপি’ নিশ্চয় অনেকেই দেখেছেন। সে ছবির সাথে উত্তম কুমার-তনুজার ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’র অসম্ভব মিল। তো, ওই ছবিতে সঙ্গীত পাগল অভিমানী রাজ্জাককে পাওয়া যায়। মিষ্টি স্বরে কথা বলা সঙ্গীতিক রাজ্জাক আমাদের মুগ্ধ করে। তার তিনবছর পর ‘রংবাজ’। বাঈজী বাড়িতে রাজ্জাক। আসরে বাঈজী ঠুমরি গাইতে গেলেন। এই বাঈজী যদিও লখনৌ থেকে আসে নাই। কিন্তু রাজা-বাদশা বা বাবুদের বিলকুল অনুকরণ! রাজ্জাক মুখ ঝামটি দিয়ে সে গান ছুড়ে ফেলতে বলেন। গাইতে থাকেন ‘রূপ দেখে চোখ ধাঁদে মন ভোলেনা’। রূপ আর মনের তফাৎ করতে গিয়েই আলাদা আলাদা হয়ে যাচ্ছে আগের আর পরের দৃশ্যাবলী। যে কারণে রংবাজের আবির্ভাব ঘটছে।
চার.
রাজ্জাক প্রযোজিত উল্লেখযোগ্য একটি সিনেমা ‘ঢাকা ৮৬’। একটা নির্দিষ্ট সময়কালকে এভাবে শিরোনামের মধ্যে ধরে রাখার প্রবণতা বাংলা সিনেমায় আর নাই। ওই সিনেমার একটা গান ‘আউল বাউল লালনের দেশে মাইকেল জ্যাকসন আইলো রে সবার মাথা খাইলো রে আমার সাধের একতারা কান্দে রে আমার সাধের দোতারাও কান্দে রে’। গানে গানে বাতচিত করছেন মামা-ভাগ্নে রাজ্জাক ও বাপ্পারাজ। অন্যদিকে, একবছর আগে ‘চোর’ সিনেমায় সাবেক চোর, বর্তমান রিকশাচালক রাজ্জাক প্রত্যাখ্যাত হন ছেলে জাফর ইকবালের কাছে। বর্তমান আর সাবেকি মূল্যবোধের একটা দ্বন্দ্ব থাকে। মূল্যবোধের জটিল সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। তো, বাবাকে চিনতে না পারা জাফর ইকবাল একজন ক্লাব সিঙ্গার। গাইছে, ‘ও বাবারে দেইখা যারে ডিস্কো ঘোড়ার লাফ, আউল বাউল জারি সারি করে বাপরে বাপ’। সেই কথার প্রতিধ্বনি মিলছে আবার রাজ্জাকের ‘চোর’-এর গানে। মানে হচ্ছে দুটো সুরই রাজ্জাকের আশপাশ থেকেই আসছে। তো, পরের বছর ‘ঢাকা ৮৬’-তে এসে ‘আউল বাউল’দের হয়ে তিনিই উত্তর দিচ্ছেন। খেয়াল করলে শুনতে পাবেন, ‘ও বাবারে দেইখা যারে ডিস্কো ঘোড়ার লাফে’র সুরের সঙ্গে মিল পাবেন ফকির আলমগীরের ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইলা আমারে’র। অর্থাৎ, স্থানীয় গানকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে তাকেই পশ্চিমাকরণের মধ্য দিয়ে।
পাঁচ.
আবার ধরেন জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’র (১৯৭০) গল্পটা। প্রেমিক প্রেমিক চেহারা রাজ্জাক যাচ্ছে প্রতিরোধে-মিছিলে-মিটিংয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সে চিত্রটা বদলে যাচ্ছে। মিতার সেই সিনেমা ‘আলোর মিছিল’ (১৯৭৪), যাতে আছে মিষ্টি একটা গান ‘এ পৃথিবীর পড়ে কত ফুল ফোটে আর ঝরে’। সেখানে যুদ্ধফেরতদের দুটো দল পায় আমরা। একদল সদ্য স্বাধীন দেশের সীমাবদ্ধতা ও অভাবকে পুঁজি করে আখের গোছাচ্ছে। অন্য একটি পক্ষ তার প্রতিবাদ করছে। যেহেতু রাজ্জাক হিরো, সিনেমার ভালো কাজগুলো তাকেই করতে হবে— দ্বিতীয় দলে তাকে পাওয়া যায়। পুরো সিনেমায় একমুখ দাড়ি-গোঁফ নিয়ে হাজির রাজ্জাক।
স্বাধীনতা ও জনমানসের আকাঙ্ক্ষা পূরণের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে এসে অদ্ভুত ব্যাপার মনে হচ্ছে, তখনকার প্রায় নামি নির্মাতাদের সিনেমায় অভিনয় করেছেন রাজ্জাক। বাদ থাকলেন আলমগীর কবিরের সিনেমা থেকে। কারণ কী? প্রশ্নটা থাকলে, উত্তর জানা নাই।
ছয়.
আশির দশকে ঢালিউডে রাজত্ব করেছে যেমন সাহিত্যধর্মী সিনেমা, আবার পাবেন ফ্যান্টাসির বাহারি ঝিলিক। অবশ্য এ জাকজমকের শুরু সেই সত্তরেই। এ সময়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শুভদা’ (১৯৮৬) অবলম্বনে নির্মিত একই নামের সিনেমায় রাজ্জাক ‘ঢোল’ বাজিয়ে গাইছেন ‘তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে’। পরের বছর ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’-এ শ্রীকান্তের জমিদার বন্ধু। আরো আছে ‘চন্দ্রনাথ’ (১৯৮৪) ও বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’ অবলম্বনে ‘বিরহ ব্যথা’ (১৯৮৯)। ১৯৬৭ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় করেছিলেন নজিবর রহমানের ক্লাসিক উপন্যাস অবলম্বনে ‘আনোয়ারা’। ১৯৮৩ সালে দেখবেন এফডিসিতে মরুভূমির সেট সাজিয়ে ‘লাইলী তোমার এসেছে প্রিয়া, মজনু গো আঁখি খোলো’ গাইতে। তবে ‘বেহুলা’ (১৯৬৬) ও ‘সুয়োরাণী দুয়োরাণী’ (১৯৬৮) ছাড়াও অল্প কিছু ফ্যান্টাসি ঘরানার সিনেমায় দেখা যায় রাজ্জাককে। তা আবার ঢালিউডের ফ্যান্টাসির জোয়ার ও রাজ্জাকের ক্যারিয়ার বিবেচনায় কমই বলতে হবে। এখানেও প্রশ্ন। কেন? মানে এ ধরনের গল্পের সঙ্গে কোথাও একটা দুরত্ব রয়েছে রাজ্জাকের। অন্যদিকে শহুরের চরিত্রের মতো গ্রামীণ আবহের সিনেমায় মানিয়ে গিয়েছিলেন।
সাত.
এ টুকরো টুকরো গল্পগুলো রাজ্জাকের। এ গল্প ঢালিউডের রূপান্তরেরও। এটা ঠিক সময়ের ছাপ পড়ে, বয়সের ছাপ পড়ে হিরোগিরিতে। আলবত! আমরা এই বলছি এমন পালা বদলে হিরো কী কী রূপে হাজির হন। গল্পের নানা বাঁকে তিনি কী রূপ ধারণ করেন। আর একটা ইন্ডাস্ট্রির অর্ধ শতকের বাঁক বদলে কোনো অভিনেতাকে সঙ্গী হিসেবে পায় কিনা! পরিবর্তনটুকু তার ভেতর হাজির কিনা! বাংলা সিনেমায় সম্ভবত রাজ্জাকই একমাত্র অভিনেতা (পরিচালক-প্রযোজকও বটে) যিনি এমনটা পেয়েছেন। অর্থাৎ, কিছু ব্যতিক্রম বাদে রাজ্জাকের ভেতর দিয়ে পুরো বাংলা সিনেমার অনেকটাই দেখতে পাওয়া যায়।
তার সমসাময়িক রহমান, বুলবুল আহমেদ বা জাফর ইকবাল বা পরবর্তীকালে মান্না বা ইলিয়াস কাঞ্চন— মৃত্যু বা অন্য সীমাবদ্ধতার কারণে এমনভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারেননি। ফলত একই গল্পের ভিন্ন ভিন্ন দিক তার বরাতে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। অথবা সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন গল্পই!
তো, সেই রাজ্জাকই নায়করাজ হবেন— উল্টো হওয়ার কিছু নাই। ‘আব্দুর রাজ্জাক’ হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ বয়সের সমর্পণের চিত্র তার মধ্যে পাওয়াই যেতে পারে। সেটা সম্ভবত আত্মতৃপ্তির। মানুষের গন্তব্য তো এমনই। সসীমের সীমা পার হতে হতে অনন্তের দিকে যাত্রা করে।
তথ্য সূত্র : বাংলা মুভি ডেটাবেজ, উইকিপিডিয়া, প্রথম আলো ও মাহবুবুল হক ওয়াকিম। ছবি : দিলশাদুল হক শিমুল ও ফেসবুক।
লেখাটি বানান ডট স্পেসে পূর্ব প্রকাশিত