হেমিংওয়ের প্রিয় বই

7441_1আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (২১ জুলাই, ১৮৯৯ – ২ জুলাই, ১৯৬১) তার ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দি সী’, ‘ফর হুম দ্য বেল টলস’ ও ‘ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’-র মতো উপন্যাসের জন্য সমাধিক পরিচিত। আরো বইয়ের জন্য তিনি আছেন বিশ্বের অগণিত বইপ্রেমীর পছন্দের তালিকায়। নোবেলজয়ী হেমিংওয়ে ১৯৩৫ সালে এসকুয়ার ম্যাগাজিনে তার কিছু প্রিয় বইয়ের নাম প্রকাশ করেন। এর মধ্যে অতিপরিচিত ‘আন্না ক্যারেনিনা’, ‘ওয়ার এণ্ড পিস’ ও ‘হাকলবেরি ফিন’-এর মতো বই যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে এমন কিছু বই যা আধুনিক পাঠকদের একদম অজানা।

‘রিমেম্বারিং শুটিং-ফ্লাইং : এ কী ওয়েস্ট লেটার’ শিরোনামের লেখায় তিনি বলেন যদি আবারও বইগুলোর কোন একটি প্রথমবারের মতো পড়ার সুযোগ পান তা হবে বাৎসারিক এক মিলিয়ন ডলার আয়ের মতো।

তালিকার ১৭টি বই হলো

আন্না কারেনিনা – লিও তলস্তয়
ফার আওয়ে অ্যান্ড লং এগো – ডব্লিউ এইচ হাডসন
বাডেনব্রুকস – টমাস মান
ওয়েদারিং হাইটস – এমিলি ব্রন্ট
মাদাম বোভারি – গুস্তাভ ফ্লোবেয়ার
ওয়ার অ্যান্ড পিস- লিও তলস্তয়
আ স্পোর্টস ম্যান স্কেচস – আইভান তুগার্নেভ
দি ব্রাদার্স কারামজভ – ফিওদর দস্তয়ভস্কি
হাইল অ্যান্ড ফেয়ারওয়েল – জর্জ মুর
হাকলবেরি ফিন – মার্ক টোয়েন
উইনসবুর্গ ওহাইও – শেরউড এন্ডারসন
লা রেইনে মার্গট – আলেকজান্দার দ্যুমা
লা মেইসন টলিয়ার – গাই দে মোপাসাঁ
লে রুজ এট নে নায়ার – স্তাদাঁল
লা চার্টেরুজে দে পার্মে- স্তাদাঁল
ডাবলিনার্স – জেমস জয়েস
অটোবায়োগ্রাফিস – ডব্লিউ বি ইয়েস

আগেই বলা হয়েছে তালিকায় থাকা কয়েকটি বই আধুনিক পাঠকদের বড় অংশের কাছে একদম অজানা। কিন্তু লেখক ও লেখনির দিক থেকে বইগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যা হেমিংওয়েকে আরো জানতে সাহায্য করে। বুঝিয়ে দেয় তার মনোগটন। সেই সূত্র ধরে নিচে তেমন কিছু বই নিয়ে বলা হল–

যেমন টমাস মানের ‘বাডেনব্রুকস’। ১৯০১ সালে প্রকাশিত বইটির কাহিনিতে উঠে এসেছে উত্তর জার্মানির এক বুজোর্য়া পরিবারের চার প্রজন্মের কথা। তারা আধুনিক পৃথিবীর শুরুর সময়টা মোকাবেলা করছিল। যে সময়ে মানুষের অনিশ্চিত এক গন্তব্য ঠিক হয়ে গেছে। যেখানে পুরানা পরিবারিক বন্ধন ও প্রথাগুলো আস্তে আস্তে আলগা হয়ে আসছে। নোবেলজয়ী জার্মানির এই ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, লোকহৈতেষী, সমাজ সমালোচক ও প্রবন্ধকার বইটিতে তার নিজের পরিবারের গল্প বলেছেন।

hemingway_13আইভান তুর্গানেভের ‘আ স্পোর্টসম্যান স্কেচস’ ‘ফ্রম আ হান্টার্স অ্যালবাম’ নামেও পরিচিত। বইটি ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখ করা যায় হেমিংওয়ে নিজেও শিকার ও মাছ ধরতে পছন্দ করতেন। মৎস্যশিকারিদের সাথে তার বন্ধুত্বের প্রতিদান পাওয়া যায় ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ বইতে। তুর্গানেভের বইটিতে তার মায়ের এস্টেটে শিকারের অভিজ্ঞতা স্থান পেয়েছে। যেখানে তিনি অারো অনেক কিছু শিখেন। তিনি দেখতে পান রাশিয়ায় কি করে ছোট কৃষকদের জোর-জুলুম করে কাজ করানো হয়। এই ছোটগল্পের সংকলনটি ছাড়াও রাশিয়ান এই ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বই হলো ‘ফাদার্স অ্যান্ড সনস’। এই বইটির জন্য তিনি আধুনিক পাঠকদের কাছে বেশি পরিচিত।

আইরিশ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, কবি, নাট্যব্যক্তিত্ব ও শিল্পসমালোচক জর্জ মুরের ‘হাইল অ্যান্ড ফেয়ারওয়েল’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯১১ সালে। এটি তার বিখ্যাত তিনখণ্ডের আধা আত্মজৈবনিক রচনা। যেটি আইল্যান্ডের চমকপ্রদ অভিজ্ঞতার বর্ণনার জন্য পরিচিত।

ফরাসি দেশি লেখক আলেকজান্দার দ্যুমা অধিক পরিচিত ‘কাউন্ট অভ মন্টিক্রিস্টো’, ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার’ বা ‘মেন ইন দ্যা আয়রন মাস্ক’-র মতো ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসের জন্য। প্রায় অখ্যাত ‘লা রেইনে মার্গট’ প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। এই বইটিও ঐতিহাসিক উপাদানের বাইরে নয়। এতে আছে গণগত্যা, ষড়যন্ত্র, গোপন চুক্তি, বিপদজনক পলায়ন ও ডুয়েলসহ উত্তেজনাকর অনেক উপাদান। প্রেক্ষাপটও বরাবরের মতো ষোল শতকের ফ্রান্সের রাজ পরিবার।

ফরাসি দেশি গাই দ্য মোপাসাঁকে ধরা হয় হয় আধুনিক ছোটগল্পের জনক। হেমিংওয়ে তার ‘লা মেইসন টেলিয়র’ বইটি পছন্দ করেন। এটি মূলত বিভিন্ন ধরনের ছোট গল্পের সংকলন। প্রকাশিত হয় ১৮৮১ সালে।

উনিশ শতকের ফরাসি বাস্তববাদী ঘরানার লেখক স্তাদাঁল তার মনোস্তত্ত্ব বিশ্লেষণাত্মক গল্পের জন্য বিখ্যাত। ‘লা চার্টেরুজে দে পার্মে’ প্রকাশিত হয় ১৮৩৯ সালে। এই বইটিতে আছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও ইরোটিক দুর্ভাবনার মিশেলে মহাকাব্যিক বয়ান। যা লেখকের নিজের সময়ে পার্মা নামের রাজপুরুষের বিচারালয়ের দীর্ঘ কাল্পনিক বর্ণনা। এছাড়া তার ‘লে রুজ এট নে নায়ার’ বইটিও হেমিংওয়ের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

* লেখাটি আরটিএনএন.নেটে পূর্ব প্রকাশিত। ফটো: ইন্টারনেট।

Comments

comments