এই ভূ¬জগতে অস্তিত্ত্ব নিজেই নিজেরে জানান দেয়। এটাই অস্তিত্ত্বের মর্ম। এটা তার গুণ নয়। কিন্তু গোলমেলে বিষয় হলো, অস্তিত্ত্ব সবসময় কোন কিছুর সাপেক্ষে হয়। নানা কিছুর উপর ভর দিয়ে থাকে। আবার অনেক কিছু তার উপর ভর দিয়ে থাকে।
সেটা সময়ের ধারণার মধ্যেই এবঙ পুরো বিষয়টার একটা নৈব্যক্তিক চলন আছে। এর ফলে কখনো কখনো অস্তিত্বের নিজের ভাব-ভাষাটাই চাপা পড়ে যায়। আল্লাহকে যে অর্থে অস্তিত্ত্ববান জ্ঞান করা হোক না কেন, সেটা সাপেক্ষের স্থানে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। যা আল্লাহর ধারণার সাথেই অমিল তৈরী করে। আবার মনুষ্য জগতে এই স্ববিরোধীতার পাশ কাটানোর বিষয়খানা আত্নগত। অর্থ্যাৎ, ভিনজগতেরই কারবার। কিন্তু মোকাবেলা কোন জগতে হচ্ছে।
সেই আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস-অবিশ্বাসে জগত সংসারে নানা যুক্তি-তক্কো গবেষণা জারি আছে। যুক্তি-তক্কো, প্রমান, জ্ঞান , বিশ্বাস যে অর্থকেই সামনে নিয়ে আসি না, তারা কেউ সম্পূর্ণ না। যদি আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা বা সর্বজ্ঞানী হন, তাহলে এই যুক্তির জগত তার ধারণাগত কোন চিত্র তৈরী করতে পারে কি? অথবা খোদ সেই অস্তিত্বে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস বিষয়টাকে। সেটা ধারণা বা সাপেক্ষ বাস্তবতার বাইরের বিষয় নয়। সেই অর্থে পরমকে জানা বুঝা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
তো স্বাক্ষী-সবুদ খোজনেওয়ালা এই মানুষের মধ্যে একটা অদ্ভুত বিষয় আছে। মানুষ বলে, সে নিজে নিজেরেও বুঝে নাই। এখানে সে নিজে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ব্যক্তি মাত্র আধা-আলো আর আধা-অন্ধকারে। সেই অজ্ঞানতাকে সে ছোট পাত্রে নিয়ে বুঝতে পারে না। তাই যুক্তি এবঙ বিশ্বাস করার প্রবণতা তাকে বড় কিছুর সন্ধান দেয়। এটাকে সে যুক্তি-তক্কে সপেঁ দিয়ে নিজের একটা সংজ্ঞার্থক মূর্তি তৈরী করে। কিন্তু অন্য বাস্তবতাকে মোকাবেলা করতে গেলে নিজের বাস্তবতার অতিক্রম করতে হয়। এখন কাজের প্রশ্ন হলো, এটা কেন করতে হবে? কুয়োর ব্যাঙ কুয়োর থাকলে মন্দ কি?
কারণ কিছু না, কুয়োর ব্যাঙ সমুদ্দুরের হদিস পাইছে। সেই হদিস কেমনে পাইছে? তার আকলের ভেতর কেউ একজন তারে এই সমুদ্রের ঠিকানা দিয়ে দিছে। যে ভাবটা পরম, তা আপেক্ষিক জগতে আপনা-আপনি প্রকাশিত হয় কেমনে?
সেটা বিশ্বাস অবিশ্বাস দিয়ে হাসিল করা যায় না। যেহেতু এই বলে দেয়াটাই তার অস্তিত্ত্বের সাথে জড়িত তাই এই মীমাংসা তারেই করতে হবে। অপর দিকে বিশ্বাস করার ঘটনা হলো, নিজের ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো। সেই ক্ষেত্রে অপ্রচলিত যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রটাও তেমন হওয়া দরকার। এই ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ভরসা পুরোটা মীমাংসা হয় না, যতদূর পয্যন্ত না নিজের ভেতর থাকা আধ্যাত্নিক পরম ভাবে পৌছা না যায়, ততক্ষণ তারে বিশ্বাসের ঝান্ডা হাতে নিয়া দিন গুজরান করতে হয়। যখন সে আসলে সেই অস্তিত্ত্বের মুখোমুখি হয়, তখন সবকিছু তার সামনে পরিস্কার। তখন আর বিশ্বাস প্রমান যুক্তি তক্কের প্রয়োজন পড়ে না। এইসব কিছু অসারতায় পর্যবসিত হয়। আপনে এখন প্রশ্ন করতে পারেন, সেই বিদ্যা কেমন হাসেল হবে? এই প্রশ্নের মীমাংসা কেমনে হবে, সেটা আপনার যাত্রায় ঠিক হবে। সেখানে আপনে সামনে কাউরে রাখতে পারেন, নাও পারেন।
বিশ্বাস একখানা অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থক শব্দ। আর বিশ্বাসের উপর কোন ধরনের শ্রেণীকরণের প্রশ্ন থাকে না। বিশ্বাস কি? এরমধ্য দিয়ে কি আল্লাহকে ধরা যায়? মনে হয় না। বিশ্বাস বাস্তবকে কণ্পলোক এবং প্রয়োজন ও পরিপ্রেক্ষিতের সাথে যুক্ত করে। এটা নতুন বাস্তবতার আভাস দেয়। সবসময় প্রস্ফুটিত হয় এমন না। এটা পরমের কোন ধারণা দিয়ে সৃষ্টি নয়। এখানে সৃষ্ট ধারণা ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনীয়। কিন্তু এই জগত সংসারে এর মুল্য অনেক। বিশ্বাস হলো পরিবর্তনশীল জগতে বেঁচে থাকার মাধুয্য।
ধর্ম নিজেই ঈমানের মতো নিগুঢ় শব্দের পরিচয় ঘটায়। যা চুড়ান্ত বাস্তবতার সাথে পরিবর্তনশীল বাস্তবতার সম্মিলিন ঘটায়। এটা আত্নার খোরাক। একই সাথে নানা মাত্রাতে স্থিতি হওয়া। এখানে বিশ্বাসের মতো অনিশ্চিতির আগমন ঘটে না। জ্ঞান যখন কোন কিছুকে নিজের চৌহদ্দিতে যুক্ত করে, সাথে সাথে অতিক্রম্য-অনতিক্রম্য অনিশ্চিয়তাকেও নিজের সাথে জুড়ে নেয়।
আল্লাহতে কেউ বিশ্বাস করে কিনা তা অনিশ্চিতির সম্ভাবনাকেই সামনে নিয়ে আসে। তাই বিশ্বাস করি কিনা, এটা দিয়ে কোন সমাধান হয় না। এইজন্য প্রমান আর যুক্তি ছাড়া আল্লাহ ধরা দেয় না। সেই প্রমান আর যুক্তি শুরু বা শেষ নাই। এটা প্রাকল্পিক শেকল আকারে নতুন নতুন যুক্তিবাক্যে আবির্ভূত হয়। আর আমরা যদি ঈমানের প্রশ্ন মোকাবেলা করি, তবে বিষয়টা আলাদাভাবেই ধরা পড়ে।*
………………………………………………………………………………………………………….
নির্বাচিত মন্তব্য:
অলস ছেলে বলেছেন: বাপরে। আপনারা শুধু বহুত উঁচু দরজার ভাবের কথা নিয়া থাকেন, আমরা সাধারণ মানুষ সেই চিন্তার নাগাল না পাইলেও ঘটনার মধ্য দিয়া বোধের কিছুটা কাছাকাছি যাই, ততটুকুই। আপনার স্যারের লেখাখানাও ভালো লেগেছে, আপনারটাও। আল্লাহর অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বের রুপ বিশ্বাস প্রসঙ্গে ইমাম মালিকের একখানা বক্তব্যই অনেক সার ধারণ করে। কোরআন শরীফে এসেছে ‘আল্লাহ আরশের উপর বসে আছেন’। তো এখন বিতর্ক শুরু হলো কিভাবে বসেন তিনি? আমাদের মতো পশ্চাতদেশের উপর? তাহলে তার আকৃতি আছে, সেই আকৃতির পরিপূর্ণ রুপ কি? এবং এই সেই অনেক প্রশ্ন।
ইমাম মালিক বিন আনাস (মালিকী মাযহাবের প্রণেতা) বললেন: ‘কিভাবে বসা হয়/উপবেশন করা হয় সবার বোঝা আছে। কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে এ বসার ধরণ কি তা মানুষের বোধের অজানা (সীমার বাহিরে)। এই বসার ধারণায় বিশ্বাস রাখাটা দায়িত্ব (ফরজ), আর এর প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন করা অনর্থক, বিদআতের রাস্তা খুলে দেয়।
বিষয়টা কঠিন অনেক, অনেক অবোধগম্য। আল্লাহ বারবার বলেছেন চিন্তাভাবনা করতে। আবার প্রমাণ মানতিক দিয়া আল্লাহর কাছে পৌছা মানুষের জন্য অসম্ভব। একদম অসম্ভব। আর নাহলে মুহাম্মদ সা: নবী হতেন না, নবী হতেন আফলাতুন। ৩০ শে জুন, ২০১০ রাত ৯:৪১
লেখক বলেছেন: অলস ছেলে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এখানে বিশ্বাস বলতে জ্ঞানতাত্ত্বিক জায়গা থেকে কি সমস্যা তৈরী করে তা বলার চেষ্টা করেছি। অপর দিকে দিকে বিশ্বাস তো স্থির কোন বস্তু নয়। তার উধ্ব বা অধো গতি তো আছে। তাই ঈমানদারদের মুশিবত বেশী। বিশ্বাস করতে হয় তাই করা এর থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে বিশ্বাসেরই সমস্যা। তখন বিশ্বাস করার প্রবনতার ফলে আল্লাহই বিশ্বাসের আড়ালে পড়ে যান। আমি অবশ্য ঈমান শব্দটার প্রতি গুরুত্ব দিতে চেয়েছি। কিন্তু জানার স্বল্পতার কারণে তেমন সুবিধা করতে পারি নাই। যখন জ্ঞানের অপরিহার্য উপাদান হিসেবি বিশ্বাসের কথা বলা হয়, তখনকার ফাঁদ নিয়েই সতর্ক হতে হয়। অপর দিকে আল্লাহ আর বান্দার মধ্যখানে প্রেম বলে একখান জিনিস নাক গলাইয়া থাকে । তারেও গন্তব্য মতো পৌছঁতে হয়, তা না হইলে সব কটকটা মরুভূমি। তাই বেশী রেশনাল না হইয়া বলতে চাইছিলাম, এই বিশ্বাস আমাদের সংজ্ঞায়িত বিশ্বাস না। তার চে বেশী কিছু। ইমাম মালিকের রেফারেন্সের জন্য আবারো ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
>আমার শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক’র পরম-সত্ত্বা, ঈশ্বর, জ্ঞান ও বিশ্বাস শিরোনামের পোষ্টে একখানা কমেন্ট দিয়েছিলাম। কমেন্টটা এডিট করে এই পোষ্টটি লেখা।
*সামান্য পরিবর্তিত। ব্যবহৃত ছবিটি একেছেন মিচেল কেইক।
আমার ব্লগসাইটে আসার আমন্ত্রন রইল।
ধন্যবাদ শেখ ফরিদ আলম।
আপনার ব্লগসাইট ঘুরে এলাম। বেশ সুন্দর।
অনেক কিছু জানার আছে।
ভালো থাকুন।
একটা কথা জানতে চাই। আপনার সাইটের দু-পাশেই বিভিন্ন ধরনের লেখার লিঙ্ক,ক্যাটাগরি দেন কিভাবে? আমার সাইটে তো শুধু ডান দিকেই হয়।
এটা থিমের উপর নির্ভর করে। যেমন, আমার ওয়াডপ্রেস থিম Digg 3 Column। এখানে দুইপাশে কলাম আছে। আপনারটা Spring Loaded । এই থিমে একটা কলাম দেয়া আছে, ডানদিকে- যেটা আপনি ব্যবহার করছেন। আপনি ড্যাশবোর্ডে গিয়ে প্রয়োজন মতো থিম পরিবর্তন করে নিতে পারেন।