উপল বড়ুয়ার ‘মহাথের’ বইটার মূল ঘটনা হলো সততা। বয়ানের সততা। কোনো ধরনের টুইস্টের বালাই নাই। প্রচুর ঘটন-অঘটন নাই। বরং যা আছে, অতিশয় করে তুলে নাই সে। বরং জীবনটা এমনই।
একজন মহাথেরর জীবনে যা ঘটে, মানে ভিন্ন ভিন্ন জন্মরে তিনি যেভাবে স্মরণ করতে পারেন ও অন্যদের জন্ম-পরিচয় স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন বলে মনে হয়; সেটার বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা। সেটা ফিকশন করারে আরামদায়ক করে।
আরামদায়ক’ শুনে ততটা ক্ষেপার কিছু নাই মূলত। কারণ একজন ‘মহাথের’র জীবনে যা যা ঘটে, তা আসলে বিশ্বাস করার মতো করে আমরা আমাদের জীবনে দেখি না। যেহেতু সেই জীবনটা এক ধরনের কল্পনা ছাড়া অস্তিত্বশীল থাকে না বা বিশ্বাসের ভিন্নতার কারণে অসম্ভব।
এখন সেই ব্যাপারটাকে সত্য করে তুলে ধরার ভেতর দিয়ে সাহিত্য হয়ে উঠে। বরং এখানে অস্বস্তি জায়গা এটা থাকে যে, একটা নৈতিক যাপন বা দ্বিধার ভেতর দিয়ে আমাদের জীবনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। এই কাজ সাহিত্য করতে পারে। একইসঙ্গে মহাথের যখন আমাদের মতো মানুষ হয়ে থাকেন। সাধনার কারণে উনি অনেক অসাধারণ হওয়ার কারণে নিচে যখন নামতে থাকেন, তখন তারে আমরা করুণা করতে পারি! জীবনের এই যে উত্থান-পতন, সেটারে ততটা নাটকীয় না করে, অনেকটা পূর্বানুমান যোগ্য করে উপল তুলে আনছেন, সেটা মজাদার একটা বিষয়। তার সাহিত্যিক উৎকর্ষের প্রমাণ।
রকমারিতেও পাওয়া যাচ্ছে মহাথের
আকার-প্রকাশে উপন্যাস ভীষণ ছোট। এক বসায় পড়ে ফেলা কোনো ব্যাপার না। লেখার গুণ, এত ঝরঝরা গদ্য ও পৃষ্টা সংখ্যা এই সাহায্যটুকু করে। এছাড়া এত অল্প জায়গায় কী চমৎকার একটা গতি ধরে রাখছে। খুব বেশি দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চায় নাই বলে (হয়তো) উপল কলেবর ও ঘটনায় এক ধরনের পরিমিতি দেখাইছে। তবে এটা কোনো ধরনের সমস্যা তৈয়ার করে না। বরং একই সরলতার ভেতর আমরা যখন নিজের প্রতি করুণাপ্রবণ হয়ে পড়ি, তখন আসলে কিছু সত্য আমরা বুঝতে পারি। যে কারণে দুনিয়াটা আরেকটু সহজ হয় এবং মানুষকে আরেকটু সহজভাবে দেখতে পারি। বোধহয় ভালোও বাসতে পারি।
মহথেরর জয় হোক!