বিষয়: ইহুদী জাতির ইতিহাস

গত বছর অল্প কয়েকটা বই শেষ করতে পারছি। শেষ যে বইটা পড়লাম ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’।

ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, প্রত্মতত্ত্ব মিলায়া লেখা। পড়ে ভালো লাগল, মানে অনেক কিছু জানছি। তুলনামূলক জায়গায় দাঁড়ায়া ‘একেশ্বরবাদের’ মধ্যে লড়াই নিয়ে হয়তো মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াতে হবে।

কিছু কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতেই হলো। যেমন; অলৌকিকত্ব! আল্লাহ যদি থাকেন তাইলে কোনো কিছু করে বোঝায় না কেন? তাইলে কি লোকে ঈমান আনবে বা বিপদগামী হবে না? এর ভালো উদাহরণ ইহুদী জাতি।

তাদের ধর্মগ্রন্থই সাক্ষ্য দেয়— মাবুদ এতো এতো সাহায্য করার পর বা নিজের থাকাকে সরাসরি দেখায়া দেওয়ার পরও তারা বিশ্বাসত্যাগ করেছে। একটু অসুবিধা পড়লেই দোষ ধরা শুরু করে। নবী মুসা (আ.)-কে ফেরাউন যতটা জ্বালাইছে তার চেয়ে বেশি তো বনি ইসরায়েলিরাই যন্ত্রণা দিছেন!

এই বইয়ের বর্ণিত রাসুল (সা.)-এর কাহিনিতেও দেখা যায়, নানানভাবে মহানবীর আবির্ভাবকে ইহুদী-খ্রিস্টান ধর্মবেত্তারা সত্য ঘোষণা করলেও অন্যরা মেনে নেয় না। তাদের নিজ সম্প্রদায়ের মানুষেরাও। নানান প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও। সেই অর্থে, তোমার আল্লাহ যদি থাকে ওইটা করে দেখাক— এটা তত গুরুতর বিষয় না। বিশ্বাস, আস্থা বা ঈমান প্রমাণের বিষয় না। এ জন্য প্রমাণ কেন্দ্রিক ‘আস্তিকতায়’ নাচার কিছু এমনিতেই দেখি না।

বইটা তিনশ’ পৃষ্টার বেশি। প্রচুর ছবি ব্যবহার হইছে, যার বেশির ভাগেরই দরকার নাই। অল্প কিছু্র দরকার ছিল। মানচিত্রগুলো পৃষ্টাজুড়ে হলেই বোধগম্য হতো। সম্পাদনা ভালো হয় নাই। আরও সংক্ষিপ্ত হতে পারতো। কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্ন-উত্তর বলে ব্যাপার আছে। এটা প্রশ্ন-উত্তর ফর্মেটে না দিলেই স্বস্তিকর। কেমন যেন গাইড গাইড লাগে!

যিশুর আগমনের পর ইহুদী জাতির বিস্তারিত বিবরণ নাই। অর্থাৎ, ঐতিহাসিক সময়ে তাদের বেড়ে উঠা, পলায়ন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শনের বড় বড় ঘটনা আছে। আর হাল আমলের ইসরায়েলের ইতিহাসও অতি সংক্ষিপ্ত। সেখানে ফিলিস্তিনে তার দখলদারত্ব আরও খোলাসা দরকার ছিল। মধ্যযুগে জেরুসালেম নিয়া যে কাড়াকাড়ি সেটাও বাকি থাকে। ক্রুসেড বা রহস্যময় নানা গোষ্ঠীর বিষয়আশয় আছে। তারপরও খ্রিস্টপূর্ব সময় পর্যন্ত বিশেষত ধর্মীয় গ্রন্থের বরাতে যা জেনেছি— অনেক টানছে। লেখকও জানাইছেন সামনে অনেক কিছু জানাবেন আমাদের। ইনশাল্লাহ।

বইয়ের শেষে মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনীর ইঙ্গিত আছে। যার খানিকটা এই বইয়ের শেষ দিকে যোগ করা হয়েছে। এটা খুব ভালো লেগেছে। অল্পতেই তিনি এমন বিষয় তুলে আনছেন যা সচরাচর সিরাতগ্রন্থে আমরা পাই না। এ ছাড়া ধারণাগতভাবে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। বিশেষ করে ‘হানিফ’-এর ধারণা নতুন করে অনেক কিছু মনে করায়া দিল। মানুষ কীভাবে স্রোতের সঙ্গে চলতে চলতে বিশ্বাস হারায়া ফেলি, অল্প কজনই অটল থাকে …।

মজার বিষয় হলো— ইহুদী ধর্মগ্রন্থের হিজিকেল নবীর কাহিনি ছোটবেলায় অন্যভাবে পড়ছিলাম। সেটা ভিনগ্রহের প্রাণী আসার প্রমাণ হিসেবে পড়ছিলাম রকিব হাসানের বইয়ে! আর এখানে তো অন্য জিনিস।

গত বছর বইমেলায় যাই নাই। মোবাইলে রাশেদকে কিছু বইয়ের ছবি পাঠাইছিলাম। ও রকমারিতে অর্ডার করে দিছিলো। বই আসার পর দেখি ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’-এর সঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের আরেকটা বই, ‘অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে’। এই বই তো চাই নাই। পরে বুঝলাম ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’-এর যে ছবিটা ডাউনলোড করে পাঠাইছিলাম, সেখানে দুটো বইয়ের ছবি ছিল। খুব বিরক্তি লাগছিল। প্রথম বইটা পড়ে মনে হচ্ছে এই ভুলটা ততটা খারাপ না। দ্বিতীয় বইটা পড়া শুরু করবো।

ইহুদী জাতির ইতিহাস, আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ, প্রকাশক:     ছায়াবীথি, ফেব্রুয়ারি ২০২০, দাম ৬০০ টাকা

Comments

comments