এক.
একটা কৌতুক বলি! ‘এক্সট্র্যাকশন’ দেখার পর হলিউডের জ্যারেড লেটো বুঝতে পারবে- তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে সাবিলা নূরের চেয়ে আসলেই কম জানতেন! হুদায় পাড়া-মহল্লারে জায়ান্ট বইলা ভাব নিতেছিল।
দুই.
আমরা যারা ভাবমূর্তি নিয়া এমন সরব- বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা কেমন চলে, কীভাবে চলে- আমরা জানি না বা বেখবর আছি। যেহেতু ‘এক্সট্র্যাকশন’ সিনামায় যা দেখাইছে তা ভুল কি-না তাও জানি না। শুধু জানি সম্মানহানি হইছে।
আমরা এই রাষ্ট্র সম্পর্কে ভাসা ভাসা, গালগল্প, গুজব, ঐতিহ্য নামে জানি। ইভেন একরামের মেয়ের ‘বাবা তুমি কাঁদতেছো যে’কে, শত শত গুম-খুনকে আমরা বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করি না, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন বা অন্যকিছু! এ দিক থেকে বিদেশি নির্মাতার দায় নাই চোখ বন্ধ করে থাকা বা বর্তমানরে অবিশ্বাস করা লোকরে সন্তুষ্ট করা।
বাট, সিনামা হিসেবে এটা খুবই অউপভোগ্য! এটা স্বীকার করতে অসুবিধা নাই।
তিন.
আপনি একজন বিদেশি। বাংলাদেশ হইলো আপনার জন্য ক্রাইম ড্রামা লেখার ফরমাইয়েশি জায়গা। কী করবেন? এই দেশের আইন-শৃংখলা নিয়ে যে সব ডেটা ইন্টারন্যাশনাল সংস্থাগুলো প্রোভাইড করবে সাধারণত সেটা দিয়েই কাহিনি লিখবেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের কোনো বাহিনি নিয়া প্রশংসার কথা না। এখানেও তা হইছে। আর যেহেতু কল্পনা করে নিতে হয়- কল্পনার বিস্তার ঘটাইছে। সিনামায় একটা খারাপ শহর যেমন যেমন হয়, তেমন তেমন হইছে। যেমন অভিযোগ ছাড়াই প্রচুর খারাপ দেশ নিয়ে বানানো হলিউড সিনামা আমরা উপভোগ করি!
চার.
এ সিনামায় রাষ্ট্রে রাজনীতির কোনো হিস্যা নাই। তাইলে বোঝেন এই রাষ্ট্র কারা চালায় বলে প্রচার হইছে? কেমনে এমন হইলো মুক্তিযুদ্ধ করে পাওয়া দেশের?
পাঁচ.
গণতন্ত্র না থাকা আমাদের জন্য সমস্যা না। সমস্যা হলো- কোনো কিছুর খারাপ দিক দেখানো। যেমন এক সময় দুনীতিবাজ পুলিশ দেখানো সমস্যা ছিল না বাংলা সিনামায়। হরেদরে পুলিশ মারা অসম্ভব ছিল না। এখন সেটা সম্ভব না। এতে কি ভাবমূর্তি চেঞ্জ হইছে? ফলত, আপনি বাংলা সিনামা বানাইলেন লম্বা লিস্টি পড়ে বানাইতে হবে। যেখানে বলা আছে কী কী দেখাইতে পারবেন না। তো, আপনি আর কী কী কল্পনা করতে পারেন!
ছয়.
এ সিনামা দেখতে এমন যেন। মানে ঘোলা ঘোলা। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়া (এই লকডাউনেও) ইউএনবিতে প্রতিদিন খবর প্রকাশ হয়। খেয়াল করতে পারেন। অন্য সবকিছু দূষিত হওয়ার লগে লগে পরিবেশ কীভাবে দূষিত হইছে।
সাত.
এই সিনামা দেখে আমাদের অবশ্যই খারাপ লাগে। এর লগে আছে- একটা ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট আমার শহর বা দেশ হইলেও সেখানে আমার কোনো অংশগ্রহণ নাই। ইভেন অল্পখানিকটা থাকলেও পরামর্শ দেওয়ার সুযোগও নাই।
আট.
আমরা ভাবমূর্তি নিয়া কাতর হইলেও আমাদের নিয়া সিনামা বাইরের দুনিয়ায় বাংলাদেশরে কীভাবে দেখায় খেয়াল করা যাক। উদাহরণ আপনারাই ঠিক করুন। খেয়াল করার বিষয় এও- এ সিনামা নিয়া দর্শকই বেশি ক্ষ্যাপা। শোবিজের লোকেরা ততটা না।
নয়.
রেফারেন্স দেওয়া ছাড়া একটা কৌতুক করা যাক। ধরেন, নেটফ্লিক্সের একটা সিনামায় বাসের নাম ‘মোদি পরিবহন’। এটা নিয়া মজা নিতে ভুলবে না টুইঙ্কেল খান্না। চটজলদি ইনস্টাগ্রামে হাস্য-রসাত্মক একটা পোস্ট দিয়া বসবে মোদিজির ছবি সমেত। বাসের যাত্রী তিনি ও মোদি। অন্যদিকে কঙ্গনা রনৌত বলবে, ভারতে নেটফ্লিক্স নিষিদ্ধ করা হোক!
দশ.
চিন্তা করেন ভারত কত বড় দেশ। আর বাংলাদেশ? প্রায়ই সীমান্তে বিএসএফের গুলি খায়া পাখির মতো বাংলাদেশি মারা যায়। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সব জায়গায় আমরা কোনঠাসা বা নিজেদের বর্গা দেওয়া। সেখানে মুম্বাইয়ের মাফিয়ার ছেলেরে ঢাকায় কিডন্যাপ করে আনা হইছে। খুশি হওয়ার কথা না! হাততালি দেন।
এগারো.
ওভারঅল সিনামা নিয়া বলা যাক। গতানুগতিক হলিউড সিনামা হিসেবে ঠিক আছে। খেয়াল করতে হবে ক্রিস হেমসওয়র্থের জায়গায় নায়ক হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিলেন ডোয়াইন জনসন! বানান ঠিক কিনা কে জানে। সে হিসেবে কোনো কাহিনি থাকার কথা না সাধারণত। খুব সরলরৈখিক! ঢাকা যেহেতু পরিচিত জায়গা- বিরক্ত লাগছে চিত্রায়ণে। এটা চেপে রাখতে পারলে নানান জায়গা হো হো করে হেসে উঠা যায়।