‘ছোটবেলায় পুত্র এটা কি সেটা কি একের পর এক প্রশ্ন করে আর পিতা ক্লান্তিহীনভাবে উত্তর দিয়ে চলেন। আর বৃদ্ধ বয়সে পিতা যখন প্রশ্ন করে পুত্র পিতাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়’।
শাবানা আলমগীর অভিনীত এককালের খুব জনপ্রিয় একটা মুভি (১৯৯১) পিতা মাতা সন্তান। দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। প্রাইমারী স্কুলে পড়ি বোধহয়। কিন্তু মুভি বিষয়ে কান খাড়া থাকত। মুভিটা যদিও দেখি নাই, গল্পটা শুনেছি। পরে পরে একই কাহিনীর কিছু মুভি দেখেছি। এই মুভির কথা কেন টানলাম-
গতকাল রাত মোটামুটি একটা। ঘুমাতে যাবার আগে টেলিভিশনের চ্যানেল ঘুরিয়ে দেখছিলাম কোথায় কি চলছে। স্টার গোল্ডে চলছিলো ‘ভগবান’ (২০০৩)। এই মুভিও আমার দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। তবে আপু আর আম্মা এই মুভি পছন্দ করেছিলো। এই প্রসঙ্গে রিফাত হাসানের একটা কথা মনে পড়ল। যে বছর ‘ভগবান’ মুক্তি পেয়েছিলো, উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেমন হয়েছে? তার উত্তর, সে তুলনায় রাজ্জাক পরিচালিত ও অভিনীত ‘বাবা কেন চাকর’ (২০০১/২০০২) অনেক বেটার। এই মুভিটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কলকাতায়ও নির্মিত হয়েছে। ‘বাবা কেন চাকর’র কিছু অংশ দেখেছিলাম। নাথিং স্পেশাল। তবে রাজ্জাকের শান্তিপুর যেতে চাওয়ার বিষয়টা ভালো লেগেছিল। এটা কোন প্রতীকি কিছু ছিলো না। ‘শান্তিপুর’ একটা গ্রামের নাম। কিন্তু আমার কাছে ‘শান্তিপুর’র বিভ্রম মাত্র।
‘ভগবান’ আর ‘বাবা কেন চাকর’এ আলাদা কি? বলিউডের মুভি খুব চকচকে ঝকঝকে। ভগবান তাই। অমিতাভ-হেমা মালিনীর গ্ল্যামারাস উপস্থাপন, বুড়া বয়সের প্রেম-কাতরতা, নাকের পানি-চোখের পানি ভালো লাগার কথা। আধুনিক জীবন-যাপন আবার সনাতনী বিরুদ্ধাচরণের এক জগাখিচুড়ী উপস্থাপন (এইখান মুভি নৈতিক বয়ান নির্ভর, কোন না কোনভাবে)- অনেকের ভালো লেগেছে। পুরাতন মূল্যবোধ যেমন আছে তেমনি আছে ভ্যালেন্টাইন ডে। কিন্তু আমার নিজের দিক থেকে ‘আকাশ কুসুম ভাবনা’ হলো মানুষ এই ধরনের অনাচার (এই মুভিগুলোতে যা দেখিয়ে ছিলো) অতিক্রম করে যাবে। বিচারটা ছিলো সময়ের দিক থেকে আমরা এগিয়ে গেছি। এটা আমার একার না। যেসব জিনিস আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য নয় সেটা সেকেলে, এক অর্থে এই প্রজম্মের কাছে এই মুভিও। তাই আমরা সময়কে কোন কিছু অতিক্রম করার মন্ত্র মনে করতে পারি। যেটা নিয়ে নানা তর্ক তোলা যায়, কিন্তু বাস্তবিক যখন নিজের কর্মের দিকে তাকিয়ে দেখি- অসারতায় নিমজ্জিত হই। নচিকেতা’র বৃদ্ধাশ্রম এই আধুনিক সময়কে নিয়ে নির্মিত, কেন যে ভুলে যাই!
আজ মাছরাঙা টিভি-তে একটা টেলিফিল্ম দেখছিলাম। নাম টা কি যেন ‘…..এস-টেলি’। কোরিয়ান চলচ্চিত্রকার কিম কি দুক’র মুভি অবলম্বনে নির্মিত। একটা দৃশ্য। ছেলেটা প্রেমিকার সাথে কথা বলছিল। তখন এক মেয়ে আসে। বলে, তোর সাথে কথা আছে। তারা কথা বলে, শেষে কোলাকুলি করে মেয়েটি চলে যায়। ভাবছিলাম, মাশাল্লাহ বেশ আধুনিক আর ফ্রি হইসে। কিসের কি! এই দেখে তার প্রেমিকা বলে, আমি চলে যাচ্ছি। কাজ আছে।
এই ঘটনা। সেই পুরানা ঈর্ষা। তাহলে নতুন কি যোগ হলো। এটা একটা পরীক্ষা বটে। সম্প্রতি বিয়ে হওয়া এক বান্ধবীর সাথে কি সম্পর্ক তা বুঝাতে কষ্ট হয়েছিল অনেককে। অবশ্য লাভ কিছু হয় নাই- তা নয়। যুক্তিগ্রাহ্য আর হৃদয়গ্রাহী কিছু যুক্তি তৈয়ার করে ছিলাম। শুনি নারী-পুরুষের সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে এই আগের চেয়ে সেই। শেষ পর্যন্ত নাটক-সিনেমায় সেই প্রেম বিয়েতে সীমাবদ্ধ। সেখানে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপান্তরিত হয়। এই কথা সমাজে সবসময় জারি ছিলো। তাইলে এই আধুনিক উদার খাসলত কি দান করে। সময় কি উত্তম নিবারক?
প্রেম বিপননের ভালো জিনিস। কেউ কেউ তো প্রেম দিয়ে দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান করতে চান। সেটা কি প্রেম আল্লাহ মালুম।যে প্রসঙ্গে টানছিলাম, সময় কি আমাদের আসলে শুদ্ধ কিছুতে নিয়ে যেতে পারে। এটা অনেকটা হয়তো আমরা ভেবে নিই। ফলে, এক দুনিয়ায় বাস করি চিন্তা করি অন্য দুনিয়ার। কিসের কি!
ছোটবেলায় বাবার কাছে একটা গল্প প্রায় শুনতাম। সংক্ষেপে এইরকম, ‘ছোটবেলায় পুত্র এটা কি সেটা কি একের পর এক প্রশ্ন করে আর পিতা ক্লান্তিহীনভাবে উত্তর দিয়ে চলেন। আর বৃদ্ধ বয়সে পিতা যখন প্রশ্ন করে পুত্র পিতাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়’। আজ সকালে নাস্তার টেবিলে দুলাভাই আমার ভাগ্নেকে একই গল্প বলছিলেন। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে, বাবাকে যখন মাঝে মাঝে ধমক দিই, তিনি আমার গোস্তাকীকে বালক সুলভভাবেই নেন।
আর এই ‘সুলভ’ ‘দুর্লভ’ হয়ে গেলেই সমস্যা।
>ব্যবহৃত চিত্রকর্মটি একেঁছেন কানাডীয় চিত্রকর অলিভার রে।