টিভিতে যে অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখার চেষ্টা করি এখন। জোশ গেটসের ‘এক্সপেডিশন আননোন’। গত হপ্তার একটা এপিসোডে গেছিলেন যিশু ক্রিস্টের জন্মস্থান খুঁজতে। মানে সেই গুহাটা- যেখানে মেরি ও যোসেফের আশপাশে ছিল একপাল পশু।
জোশ গেছিলেন ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের তিনটা আলাদা আলাদা জায়গায়। এর মধ্যে বেশি পরিচিত ফিলিস্তিন অংশের চার্চ অব নেটিভিটি। তো, চমৎকার একটা চার্চের পর যাওয়া হলো সেটার মাটির নিচে একটা গুহায়। ধারণা করা হয়, এখানেই যিশুর জন্ম। মাটির আরও নিচে দেখা গেল গণকবরের চিহ্ন। যেটা থেকে ধারণা করা হয় রোম সম্রাট ভবিষ্যত শত্রুকে বধ করার জন্য ইহুদিদের শিশুদের মেরে ফেলার উপকথা।
যাই হোক, এই বেথেলহামে যিশুর জন্মের সাপেক্ষে আসলে তেমন কোনো প্রমাণ নাই। কিংবদন্তি এবং জায়গার নাম ছাড়া মূলত আর কিছু নাই। জোশ গাধার পিঠে চড়ে বোঝার চেষ্টা করছিলেন প্রায় সত্তর মাইল পথ একজন গর্ভবতী নারীর পক্ষে যাওয়া সম্ভব কিনা। এরপর যোশ গেলেন বেথেলহাম নামের আরেক জায়গায় যেটা মেরির বাসস্থান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরত্বে। সেখানে পুরোনো আমলের দেয়ালের কিছু ধ্বংসস্তুপ পাওয়া গেল। সেটা প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করা হলো। কিন্তু গসপেলে পাওয়ার নাম ছাড়া আর কোনো প্রমাণ নাই যে যিশুর জন্ম এখানে।
পরে আসা হলো নাজারেথে (যে কারণে খ্রিষ্টানদের নাসারা বলা হয়), যেখানে যিশুর শৈশব কেটেছিল বলে বলা হয় তার শিষ্যদের লেখা গসপেলে। মাটির নিচের খনন করে পাওয়া ঘর-বাড়িতে ঘুরলাম জোশের সঙ্গে। যেটা ভাবছিলাম, দেখি জোশও বলছিল- এই রাস্তায় হয়তো শিশু-কিশোর যিশু হাঁটছিলেন- যার সঙ্গে আজকের নাজারেথের কোনো মিল নাই।
নাই তো, বাট যিশু ব্যাপারটা তো আছে। যার জন্মদিন বিষয়টাও আসছে আকাশে উড়াল দেওয়ার তিনশ’ বছর পর। যোসেফের সঙ্গে মেরির বেথেলহাম যাওয়ার ব্যাপারটা এমন- রোম শাসকরা শুল্ক গণনার জন্য চাইতেছিল- সব নাগরিক যেন নিজ নিজ এলাকায় থাকে। জোশ অনেক পণ্ডিত ও গবেষণার বরাত দিয়া জানাইতেছিলেন শুল্ক গণনার জন্য আসলে লোকজনের দেশের বাড়ি যাওয়ার দরকার নাই (আগে ভোটার তালিকার ক্ষেত্রে আমাদের লাগতো না)। যেমনে আমাদের স্মার্ট কার্ডের জন্য দরকার পড়তেছে (টেকনোলজি আরেকটু উন্নত হইলে হয়তো দরকার পড়তো না)।
ইসলাম ধর্ম পালনকারী হিসেবে হযরত ঈশা (আ.)-কে আমরা স্বীকার করি। আরও বড় দরকারি বিষয় হলো- এই যে সভ্যতা তৈয়ার হইছে বর্তমানে যেটারে মূলত পাশ্চাত্য সভ্যতা বলি- তা তার নামে প্রবর্তিত ধর্মের একটা সিলসিলা বা পর্যালোচনার ধারাবাহিক পর্যায়, যারে আধুনিকতা নামে ডাকতেছি। ধর্ম যেখানে না থাইকাও ভীষণভাবে হাজির। দেখেন, তবে যিশু কত দরকারি। সুপারহিরোর যে ধারণা সেটা মানুষের রক্তের মধ্যে রয়েছে। যেটার একটা স্টিরিওটাইপ ধারণা তৈরি করছেন যিশু। কিন্তু খোদার সাথে তার যে সম্পর্ক সেটারে বিকৃত করে ফেলছি আমরা হয়তো। কমিকস বুক বা সিনেমায়ও। খোদার সঙ্গে রক্ত-মাংসের শরীর দিয়া ডিল করা একটু জটিল। এই কারণে যিশুর ধারণা আমাদেরই নির্মাণ করতে হয়। সে কারণেই তার শহীদ হওয়ার ধারণার মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তি হইতেছে না। সেটা আর মানবতার মুক্তি থাকে নাই। আর বিশেষত শহীদানের ব্যাপারটা আত্মার খোরাক, অথচ অপূর্ণাঙ্গ সত্তার মর্যাদা দিয়া এক ধরনের করুণ ও দয়ার উদ্রেক করা হয়।
এমনকি খোদার মৃত্যু সম্ভব করে তোলা হয় (নিটশে বলা আগেও), পুত্রের বরাত দিয়া। তা, সেটারে মর্যাদাবান করে তুলতে হয়। যেমন মানুষের পাপমুক্তির। বাট, আমরা তো পাপ করেই যাচ্ছি। আর যিশু তার উর্ধ্বে তো, নাকি…! আর হেদায়াত আর দায় নেওয়া তো আলাদা ব্যাপার। তো, যিশু নিয়া আমার বোঝাপড়া হযরত ঈশা (আ.)-কে বুঝতে গিয়া। যেটা আসলে সেই সভ্যতার গুণগান গাইলাম তার ধারে কাছেও নাই। যে মানবিক হওয়ার সব সম্ভব হারায়া ফেলছে।