অদৃশ্য প্ররোচনা

এক.
দূরেই দাড়িয়ে ছিলাম। প্রিয় বড়ই গাছটার নিচে। দুই দল মানুষ এদিকে আসছে। পাশাপাশি মিছিল। হাতে লম্বা লম্বা মোটা ছড়িগোছের কিছু একটা। আমি একটু পিছু হঠে গাছের আড়ালে গেলাম। ওফ, কতো মানুষ, তাদের নানান বিষয়ে চিল্লাচিল্লি, নানান পথ, নানান মত- অসহ্য। অসহ্য।

মিছিল দুটো কাছাকাছি চলে এসেছে। আমি একপাশে সরে এলাম। কে যেন বলল, ‘এই লোকটারে ছুয়ে দে’। দেখলাম একজন তার হাতের লম্বা লাঠিটা আমার গায়ে দিকে আনছে। আমি আরো সরে এসে রাস্তার সীমানা দেয়ালের সাথে নিবিড় হলাম। অনেকগুলো লাঠি এক সাথে তেড়ে এলো। দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা কারা আমায় আগে ছুয়ে দেবে।

‘আমি কোন দলের না, দয়া করে এদিকে এসো না’। কে শোনে কার কথা। একটা লাঠি এসে আমার ছুয়ে গেল। একজন বলল, ‘এই লাঠি ছুয়ে দিয়েছে, এখন থেকে তুমি আমাদের ধর্মের লোক’। আমি বলি, ‘আমার তো ধর্ম আছে’। এই বলে ছুটতে থাকি। ‘আহা, আমার ধর্ম আছে’। প্রচন্ড ভীতি গ্রাস করে।

ছুটন্ত অবস্থায় দ্বিতীয় দলটির লোকদের আমার সামনে পড়ি। একজন বলে, ‘একে ধর’। বলি, ‘আমায় মেরো না, আমি তো ইচ্ছে করে ওদের দলে যাইনি। ওরা নিজে থেকে আমায় তাদের একজন বলছে’। ওরা বলে, ‘তোমার ইচ্ছে বড় কথা নয়। তাদের লাঠি তোমায় আগে ছুয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। তোমায় শাস্তি পেতে হবে’।

আমি সাহায্যের আশায় এদিক ওদিক তাকাই। কেউ নাই। লোকগুলো আমার দিকে হিংস্রভাবে এগুতে থাকে। তাদের লাঠিগুলো বল্লমের চেহারা নেয়। একেকটা বল্লম আমায় আঘাত করে, আমি চিৎকার করে উঠি।

ঘুম ভেঙ্গে যায়। পাশের বিল্ডিংয়ের শার্সি থেকে সুর্যের আলো টিকরে আসছে। পাশে থাকা মোবাইলে সময় দেখে মনে পড়ে আজ ইউনিভার্সিটি যাওয়ার কথা। শাওয়ার নিতে নিতে স্বপ্নটার কথা ভাবতে থাকি। এটা কেমন স্বপন? আস্তে আস্তে নানা দ্বিধা-দ্বন্ধ চোখের সামনে ভাসতে থাকে। আমি নিজেকে ব্যাখ্যা করি, আবার নিজেকে দিয়ে অন্যকে ব্যাখ্যা করি। মনে পড়ে, স্বপ্নের মানুষগুলো বদলে যাওয়াতে আমার কেমন যেমন প্ররোচনা ছিলো। কি সেটা, ধরতে পারি না। ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা না দিয়েও বলা যায়, এই দুঃস্বপ্ন শুধু আমার না, আরো অনেকের।

দুই.
সন্ধ্যায় বের হলাম। কিছুটা হাটব বলে। বেশ এলোমেলো হাওয়া। পাঞ্জাবী-টুপি’পরা ছোট-বড় সব সাইজের মানুষ। আজ শবে-বরাত। ভালো বরাত মাগতে ইবাদতে শামিল হবে। আজ আতরের গন্ধটা কেমন যেন। আতর আর পবিত্রতার সম্পর্ক কি? এর মধ্যে কি এমন কিছু আছে যা পবিত্রতার অনুরূপ। জানি না। আমি সুগন্ধী তেমন একটা পছন্দ করি না। আজকের এলোমেলো হাওয়ায় এই গন্ধটা আমার জন্য কান্না নিয়ে আসে। কি যেন বলে, আমি ধরতে পারি না। কেমন যেন কান্না পায়।

আজ আমি অনেক পথ হাটব। সাদা পাঞ্জাবী, টুপি আর আতরের ভিড় ঠেলে অনেক অনেক দূরে আসি। এখন গন্ধটা নাই। কিন্তু সে অনবরত কথা বলে চলছে।

Comments

comments

2 thoughts on “অদৃশ্য প্ররোচনা

  1. হ্যা,আপনার সাইটটি খুব ভাল লেগেছে। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল পোষ্ট সকলেরই ভাল লাগবে।অনেক তথ্যপূন্য এই সাইটটি আমার অসংখ্য ভাল লেগেছে।ভবিষ্যতে আরো ভাল ও আরো উন্নত তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্ট চাই।

Comments are closed.