দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তিকে জিতিয়ে দেয়া বই ‘দ্য ম্যান ইন দ্য হাই ক্যাসল’

ফিলিপ কে ডিকের অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি জনরার উপন্যাস ‘দ্য ম্যান ইন দ্য হাই ক্যাসল’। ২৯০ পৃষ্টার মতো পেপারব্যাক, খালেদ নকীবের অনুবাদ। উনার অনুবাদ ভালো, সেটা জুলর্ভানের একটা ঢাউস কিতাব থেকে অনুমান করছি। এবারেরটা পড়তে খানিকটা বেশি সময় লাগছে। নানান কিছু ফাঁকে ফাঁকে একটু একটু পড়ছি। এ কারণে অনেককিছু বোঝা যায় নাই।

আবার খেয়াল করলাম, যেটা বুঝি নাই ভাবতেছি— সেটা একটা অবস্থায় তরতর করে পড়ে যাচ্ছি। প্রশ্ন ও স্মৃতির কারিকুরি ছাড়াই। মানে জোর করে যেমন প্রেম হয় না, পড়াপড়িও হয় না। পড়া সব সময় একটা সিরিয়াস মনোযোগ দাবি করে।

উপন্যাসের প্রেক্ষাপট, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ও জাপান জিতছে, তারা দুনিয়ারে ভাগাভাগি করে শাসন করছে। ষাট দশকের তেমন সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা উপন্যাসে আরেকটা বইয়ের রেফারেন্স আছে। ‘দ্য গ্রাসহুপার লাইজ হেভি’ নামের বই একটা অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি দেখায়, যেখানে অক্ষশক্তি হেরে গেছে। বইটার লেখক রহস্যময় আবেনসেন। এই রকম একটা ধুন্ধুমার প্লটের উপর কাহিনি।

কিন্তু গল্প অনেক (সহজ বলেই) জটিল হয়ে আগায়। একজন আর্ট ডিলার, একজন নকল জিনিস তৈরিকারী ও তার সাবেক বউ, এক জাপানি দম্পতি, ট্রেড কমিশনের কর্তা, রহস্যময় ব্যবসায়ী ও এক আততায়ী নিয়া কাহিনি। অদ্ভুত প্লটের সঙ্গে এই বইয়ের অভিনবত্ব হইলো, প্লট আকারে যথাটা থ্রিল ঠাসা থাকার অনুমান করবেন, সেটা যেন ভুলে গিয়ে লেখক নরমাল কিছু ঘটনা তুলে ধরতেছে। যেখানে বিজিত ও বিজয়ীর মনস্তাস্ত্বিক সংঘাত ওঠে আসতেছে মূলত। মানে মানুষের মন পড়ার মধ্য দিয়ে একেকটা সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হিসেবে পড়া যায়।

এমনও মনে হয়, এ দুনিয়ায় মানুষের আসলে কিছু করার নাই। সে হয়তো অনেক কষ্ট করে বা একদম জীবন দিয়াই দুনিয়ারে ধ্বংস হওয়া ঠেকায়া দিলো, কিন্তু আলটিমেটলি ঠেকাইতে পারলো? তাইলে মানুষের কাজ কী? মানুষের কাজ হলো তার কাজটাই করে যাওয়া। একটা চরিত্রের বরাতে এই উপলব্দিটা আমার মনে ধরছে।

লেখক ফিলিপ কে ডিক

যাই হোক, বইয়ের শেষ পর্যন্ত ‘দ্য গ্রাসহুপার লাইজ হেভি’-এর লেখকের পেছনে আমরা দৌড়াইতে থাকি। প্রশ্ন ওঠে, এ বইটা আসলে তিনি কীভাবে কল্পনা করলেন (উল্টো করে বললে ফিলিপ কে ডিক নিজের বইটা কীভাবে কল্পনা করলেন)? সেখানেই দারুণ টুইস্ট শুধু না, মানুষের অনুপ্রেরণা কোত্থেকে আসে তার একটা উত্তর! এ ছাড়া প্রশ্ন হইতে পারে, মানুষের ইতিহাস বা সভ্যতার দ্বন্দ্ব শেষতক কি আমেরিকার ইতিহাসই হবে; এমন কল্পনা আছে লেখকের। সেটা অল্টারনেটিভ ভার্সেও। তাইলে দুনিয়ায় আপনি যাই করেন, আমেরিকা বলে একটা জিনিস সুপ্রিম বলে থাকতেছে। আসলে এটা হইলো আমরা যে দুনিয়ায় আছি তার একটা কন্ডিশন। যারে আর এড়ানো যাচ্ছে না।

আসলে দুনিয়াতে ওইটা না ঘটলে কী হইতে, সেটার তেমন সমাধান নাই। যাই ঘটুক, মেনে নিতে হয় যে, এই রকম কিছু হওয়ার কথা। যেহেতু কারণগুলো এত এত ব্যাপ্তির যা আমাদের হাতে থাকে না। প্রচুর হিডেন কজ থাকে, যেটা আমরা কখনো জানতে পারবো না। কিন্তু সেটা ভাবতে ভাবতে গিয়া কী কী জিনিস আসতে পারে, এবং বিপরীত পক্ষও একই ধরনের অবস্থার ভেতর খাবি খায়, সেটা জানা যায় আরকি!

এই উপন্যাসে চরিত্রগুলার বড় একটা অংশ ইহুদি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে গল্পগাখা তার থেকে তাদের আলাদা করা যাবে না। বাট, ইসরায়েল রাষ্ট্রের কোনো হিস্যা ওই উপন্যাসে নাই। ইহুদিরা তখনো পালায়া বেড়াচ্ছে। বিপ্লবও করছে! এক অর্থে তাদের হাতে ওই দুনিয়ার ভাগ্য অনেকটা বন্দি আছে। আধ্যাত্মিক দুনিয়াও।

ওহ! এই বইয়ে প্রাচ্যের একটা বিরাট হিস্যা আছে। ই চিং। ‘বুক অব চেঞ্জ’ নামের চীনা ক্ল্যাসিক কিতাব। যেখান থেকে আপনি ভাগ্য পড়তে পারেন। ই চিং-এ লিখে দিছে ‘দ্য ম্যান ইন দ্য হাই ক্যাসল’। এটাও ভাবা যায়। তারপরও লেখকের কৃতিত্ব খাটো হবে না নিশ্চয়!

Comments

comments