অসুখের দিন

পর্ব শুরুর আগে

আর সব গল্পের মতো নিজের গল্পটাও দ্বিধা সমেতই বলতে এলাম। মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে ভাবি, আমি ও আমার চারপাশ দ্বিধার জাল থেকে কেন মুক্তি পায় না। যেন এক আবশ্যিক আবহ। এমনও মনে হয়, প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো বৃত্তে আবদ্ধ, একই অলি-গলিতে নিত্য যাতায়াত, কখনো কখনো পুনরাবৃত্তির ফাঁকে নতুন কিছু চোখে পড়ে। তা শুধু তার নিত্যদিনের বলয়েই না, তাকে নিয়ে আর যা যা ঘটে ও অন্যদের বোঝাপড়া বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় তাও একই রকম। এর মানে কি এই যে— আমি আসলে ঠিক করে দিচ্ছি, বা আমরা এমন কিছু নিয়ে আবির্ভূত হই, যা ঠিক করে দেয় দুনিয়াটা আমার সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করবে।

যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি, এ সব ছবি দেখে ভাবি আবারও ঘুরতে পারবো অনেকে অনেক/ উড়ির চর, ডিসেম্বর ২০২১/ নামলিপি: নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

হয়তো ব্যাপারটা পুরোপুরি এমন নয়, আমার দেখার একটা ছাঁচ দুনিয়াটাকে আর অন্যভাবে দেখতে দেয় না। মাঝে মাঝে তো ভয় কাজ করে, যার কারণ আমরা সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে ফেলি। কিছুদিন আগে তুমুল ঝড় হচ্ছিল বাইরে। আমরা সব দরোজা-জানালা বন্ধ করে বসে আছি। তখন একটা লাইন মনে হলো— সব কিছু উড়ে যাচ্ছে, শুধু দ্বিধা ছাড়া। আসলে আমার গল্প এটাই। মামুলি রোগ-শোকের ভেতর লড়ে যাওয়া, যার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে আটকে গেছে দ্বিধা।

এ লেখাটার কথা যখন ভাবছিলাম, তখন দুটো ঘটনা মনে পড়লো। প্রথমত, সেটা কারণ-অকারণে মনে পড়ে, ইন্টারনাল কোনো হারমোনি নিশ্চয় আছে। যখন স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার একটা রাস্তা ছিল শহীদ মিনারের পেছন দিক হয়ে, রাস্তাটা স্কুলের পেছনে এসেই মিলতো। কোনো একদিন বিকেলে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হয়তো ছুটির দিন ছিল। যখন লম্বা লম্বা একাশি গাছের ছায়া দীর্ঘ হয়ে পুবদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তীর্যকভাবে সারি সারি ইট বিছানো পথ। হঠাৎ মনে হলো, পেছন থেকে আমাকে কে যেন ডাকছে। ফিরে দেখে কেউ নেই। এ কণ্ঠস্বর আমাকে নানা সময় তাড়া করেছে। যদিও আজকাল আমি শুনি না। মাঝে একটা টুংটাং শব্দ শুনছি বলে মনে হয়। এর সঙ্গে শৈশবের সেই ঘটনার তুলনা চলে না। আর এত এত গিয়ার-গ্যাজেটের আশপাশে থাকতে হয়— কোত্থেকে কোন শব্দটা আসে বোঝা দায়। আচ্ছা, এসব কেন বলছি। আমার কেন যেন মনে হয় এই যে পথ চলা, নানান দুর্বিপাক, আমাকে হয়তো এমন কোনো শব্দের উৎসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যা হয়তো আমার আরও গভীর থেকেই ডাক। যেখানে নিজের দিকে তাকানোটা ঠিক আয়না দেখা নয়, অন্য কিছু।

অন্য ঘটনাটা হলো এই, যখন নাইন বা টেনে পড়ি। এক শিক্ষক বলছিলেন, আজ তোমাদের হাত দেখবো। সবার মাঝে কী যে মজা। যদিও পরে কারো কাছে ভাগ্য দেখাতে যাই নাই আর। ওই স্যার বলছিলেন, অনেকগুলো ঝামেলা আছে জীবনে। ইন্টার লাইফে একটা। এরপর বয়স যখন চল্লিশের কাছাকাছি হবে। ইন্টারটা বাজে কাটছিল অবশ্য। টাইফয়েডের ভুগে পরীক্ষায় ফেল। তারপর ভর্তি হওয়া নিয়ে নানান টানাপোড়ন। আর চল্লিশের কাছে? এটাই যে গল্প। যদিও আমার বন্ধু মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু বলে, আমরা নিজেদের নিয়ে যা যা খারাপ কিছু ভাবি, তা ফলে যায়। হয়তো তাই। কারণ আমি চারপাশে এমন জগৎ দেখি। বিমর্ষ, রোগশোক; আর ব্যর্থতা। যাই হোক, এই গল্প শুধু আমার না। আমার বন্ধুদেরও গল্প। আমাকে নিয়ে পরিবারের লড়াইও। সমান্তরালে আমার এক বন্ধুর অসুস্থতার গল্প আসবে, যা হয়তো আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে। তবে শুরু হোক ব্যথার গল্প।

প্রথম যে ব্যথার কথা মনে পড়ে সেটা সম্ভবত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের দিকে। আমরা মাত্র ২৩ বছরের পুরোনো বাসা ছেড়ে বেশ দূরের একটা বাসায় এসেছি। একদিন সন্ধ্যার পেটে ব্যথা শুরু হয়। সাধারণ বদহজম, গ্যাস বা অন্য ক্ষেত্রে যেমন হয় তেমন ব্যথা না। পেটে গ্যাসের সমস্যা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু মূল ঝামেলা অন্য একটা ব্যথা। যা কোনোভাবে ডিফাইন করা যাচ্ছে না। বুক আর পেটের মাঝামাঝি কোথাও। যা না যাচ্ছে খামচে ধরা বা বালিশ দিয়ে চেপে ধরা। এক মুহূর্তও সুস্থিরভাবে বসা, দাঁড়ানো বা শুয়ে থাকার জো নেই। সোজা হয়ে থাকা যায় না। শুয়ে বা বসে থাকি, কুঁকড়ে থাকতে হয়। এমন যে গতিক দশার মধ্যে দুলাভাই কাছের ফার্মেসিতে ফোন দিলেন। সেখান থেকে একজন ঔষধ দিয়ে গেলেন। গুলে খাওয়ায় যায় সেকলো’র প্যাকেট। আরেকটা ট্যাবলেট। তো, সেকলো খাওয়ার কিছুক্ষণ পর ভাত খাইলাম, এরপর ব্যথার ট্যাবলেট। এর এক বা দুই ঘণ্টা পর আস্তে আস্তে ব্যথা কমলো, টয়লেটেও গেলাম।

একই সময়ে অন্য একটা সমস্যায় ভুগছিলাম। যা কল্যাণপুরের বাসায় প্রথম ঘটে। একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে টের পায় ডান পায়ের এক পাশে হালকা ব্যথা। বিছানা থেকে পা নিচে থাকতে গিয়ে ব্যথা হলো। সেদিন ছিল ১৪ বা ১৫ আগস্ট। তারপর অফিস গেলাম। ব্যথা বাড়তে বাড়তে এত তীব্র হলো যে, চেয়ার থেকে পা ঝুলিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। আমি অনেক সময় চেয়ার পা ভাঁজ করে বসি বা সিপিইউ’র ওপর পা রেখে বসি। এ দিন সবকিছুতে সমস্যা। পরে রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেল ডেকে বাসায় চলে যাই। পা ঝুলিয়ে রাখার কারণে কী যে অসহ্য ব্যথা। যাই হোক, এখানে একটা বিষয় বলি— স্বঃস্বপ্নের কথা। আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখতাম কলেজবেলা থেকে, মাঝ রাস্তায় হুট করে পা অবশ হয়ে গেছে। কোথাও যেতে পারছি না। কান্না করছি হয়তো বা। এটা হলো গন্তব্যহীন একটা জীবনের স্বপ্ন, তা-ই ভাবতাম। যাই হোক, পরদিন বাসার কাছে হাসপাতালে গেলাম। অনেকগুলো টেস্ট করে কোনো ঝামেলা পাই নাই। শুধু প্রশ্রাবের ইনফেকশন, যদিও গেছিলাম পায়ের সমস্যা নিয়ে। আর অস্বাভাবিক ব্ল্যাড প্রেশারের কারণে সেই যে ঔষধ খাওয়া শুরু করলাম, এখনো চলছে।

পরের মাসে আমরা অনেক দূরে নতুন বাসায় চলে আসি। সেখানে আসার কিছুদিন পর আবার পায়ে সেই অদ্ভুত ব্যথা। এবার ইমরান ইমু ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি তখন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক। তার সঙ্গে কিশোরগঞ্জে দারুণ একটা ভ্রমণ হয়েছিল। তখন পরিচয়। ইমরান ভাই দু-তিনদিনের মাথায় দুইজন চিকিৎসকের ঠিকানা পাঠালেন। এর মধ্যে আল হামরা হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করলাম। সব শুনে তিনি বললেন, আমার ধারণা আমার কাজের সঙ্গে আপনার সমস্যার কোনো যোগ নেই। তবুও কিছু টেস্ট দিচ্ছি নিশ্চিত হওয়ার জন্য। একটু বেশি খরচ পড়বে। তবুও করে দেখেন। চার-পাঁচ হাজার টাকার টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে দু-একদিন পরে গেলাম। উনি বললেন, এটা ভিটামিন ডি জাতীয় সমস্যা। তিনি ধানমন্ডির আল আজহার হাসপাতালে পাঠালেন। সেখানেই প্রায় বছর খানেক চিকিৎসা নিলাম। অনেক ওষুধ খাইলাম, দুই মাস পরপর চেকআপ। ডাক্তারের দেখা পাইতে পাইতে রাত ১২টা-১টাও বাজতো। কী যে হ্যাপা।

ভিটামিন ডি-জনিত সমস্যা নিয়ে দৌড়ের উপরে থাকায় হয়তো পেটের ভয়ংকর ব্যথার ওপর জোর দেওয়া হয় নাই, আরেকটা বিষয় হলো— এ ব্যথার সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন, ব্যথা না ওঠা পর্যন্ত বিশ্বাস করা যায় না বিষয়টা কত ভয়ংকর। আমার যা রোগ, কোনো বিষয় ঘটে যাওয়ার পর ভুলে যাওয়া বা ফিরে না আসা পর্যন্ত বিশ্বাস না হওয়া।

এরপরের যে ঘটনা, সেটা সম্ভবত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে। হঠাৎ একদিন ফোন দিল রাসেল মাহমুদ। আমার কলেজ জীবনের বন্ধু। ওর সঙ্গে দারুণ সব স্মৃতি আছে, কিছু খারাপ লাগাও আছে। ব্রিটেনের গ্লাসগোতে থাকে। ওর বিয়ে। আকদের দিন গেলাম। অফিসে ব্যাগে করে পাঞ্জাবি নিয়ে গেলাম। কাজ শেষে ওই পাঞ্জাবি পরে বিয়েতে গেলাম। সাধারণত দুই ঈদের জামাত ছাড়া এ পোশাক পরা হয় না। আকদের দিন ভালোই খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। আমার বৈশিষ্ট্য মতো খুব একটা খাইতে পারি নাই। এরপর দুই পক্ষের গায়েহলুদ, রিসেপশন কয়েকটা অনুষ্ঠান। গায়েহলুদ এভয়েড করছি, রিসেপশন দুটোতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কনে পক্ষের রিসেপশন উত্তরা ক্লাবে। অনেকটা সময় হাসি হাসি মুখে থাকার কসরত করে রাইড ডেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত একটার মতো। এসে হাত-মুখ ধুয়ে সোফায় বসে আছি। আস্তে আস্তে পেটের মধ্যে কিছু একটা টের পেলাম। যেটা ক্রমশ বাড়ছে তো বাড়ছে। প্রথমে মনে হলো, ভারি খাবার, তেল-চর্বির চাপ। হতেও পারে। কিন্তু সেকেন্ড-মিনিট পার হতে হতে ব্যথা বাড়তে থাকলো। এ দিকে বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে। ভাগনে জেগে থাকলেও সে ব্যাপারটায় পাত্তা দিল না। বরং, তার রুমে বারবার যাওয়ায় বিরক্ত হলো। সারারাত ছটফট করলাম। একবার নিজের আরেকবার ডাইনিং বা ড্রয়িং রুম, এভাবে হাঁটাহাঁটি করছি। না পারছি শুয়ে থাকতে, না বসে থাকতে, হাঁটলেও মুশকিল। কখনো মেঝেতে বসে পড়ছি। এর মধ্যে অনলাইনে ঘাটতে থাকলাম পেটে ব্যথা কুইক রিলিফ। প্রচুর পানি খাইলাম। নতুন যা হলো- লবঙ্গ চিবুতে থাকলাম। দেখলাম লবঙ্গ চিবুলে একটু স্বস্তি লাগে। এই করতে করতে ভোর ছয়টার দিকে সম্ভবত একটু স্বস্তি পাইলাম। তারপর ঘুমাতে গেলাম। আর অফিসে মেসেজ করে দিলাম। শরীর খুবই খারাপ, রবিবারের ডে অফ শনিবারে কাটাবো। কিন্তু সেই অসুস্থতার রেশ আরও কয়েকদিন থাকলো। এরপরও আমার যত মনোযোগ ভিটামিন ডি’র দিকে। মাঝে মাঝে খোড়া হয়ে হাঁটি, মাটিতে পা রাখলেই ব্যথা। নিজেকে ক্ষুরা রোগ আক্রান্ত গরুর মতো মনে হয়।

এর মাঝে সম্ভবত দুই-একবার পেটের ব্যথায় ভুগলাম। যেটা স্পষ্ট মনে আছে। সেবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাসায় হাঁস ভুনা আর পরোটার আয়োজন হবে। ছোটবোন রুমি ও তার মেয়ে মায়েদাও আছে। ঘরে বেশ হৈচৈ ব্যাপার। সেদিন বৃহস্পতিবার ছিল। চারটায় অফিস শেষ হলে মিরপুর দশ গেলাম নাজমুল হাসান দারাশিকো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। উনাকে বললাম, চলেন হালিম খাই। এ জিনিস আবার কিছুদিন পরপর না খাইলে কেমন যেন লাগে। অথচ ছোটবেলায় আম্মার দেখাদেখি হালিম খুব অপছন্দের ছিল। কতদিন বাবার আনা হালিম মাটির পাতিলসহ বাইরে ছুড়ে মারছেন। সে দিন খুশি মনে দশ নাম্বারের মুসলিমের দুই তলায় বসে হালিম খাইলাম। আসতে আসতে বাসে বসে কেমন যেন অস্বস্তি শুরু পেটে। বাসায় ঢুকে বুঝলাম, বাজে ব্যথাটা উঠবে আজ। সে কথা শুনে আপা ভীষণ বকা দিলেন, উনি বেশ কয়েকবার ডাক্তারের কাছে যাইতে বলছিলেন, যাই নাই বলে।

বাসায় এসেই দারাশিকো ভাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তার পেটে কোনো ঝামেলা? উনি বললেন, না। ব্যথা খুব বাড়তে থাকলে নিচে ফার্মেসিতে গেলাম, এরপর ডা. ইমরান ইমু ভাইকে ফোন দিলাম। সব শুনে কিছু কয়েকটা ঔষধ লিখে পাঠালেন মেসেজে। এরপর বললেন, আশা করি ব্যথা সারবে। কিন্তু যদি ব্যথা না কমে সোজা হাসপাতালে চলে যাবেন। বিষয়টা সিরিয়াস কিছু পারে। এ সব যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে রাত বারোটা নাগাদ ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। ততক্ষণে সবাই হাঁসের মাংস খাওয়া শুরু করছে। আমি নয়টার দিকে ওষুধ খাওয়ার জন্য পানি দিয়ে কচলিয়ে দুই মুঠো ভাত খাইলাম। এবার পণ করলাম, শুধু ভিটামিন ডি’র পেছনে টাকা খরচ করলে হবে না। এবার পেটের সমস্যার জন্য ডাক্তারের কাছে অবশ্যই যেতে হবে।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর আপা-দুলাভাই গেলেন নোয়াখালী। আমার চেয়ে কম বয়সী এক চাচার বিয়েতে। বাসায় আমি, ভাগ্নে নিশান-ভাগনি নিপুণ। ওহ, আপা ডাক্তার দেখানোর জন্য টাকা দিলেন আমাকে। সেদিন ছিল ১০ জানুয়ারি, শুক্রবার। বিকেলে অফিস থেকে বের হলাম। সহকর্মী পাভেল ভাই টেনে নিয়ে গেলেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে, আরে ভাই কিছু খেয়ে যান। ছোলা-মুড়ি খাইলাম, সঙ্গে অন্য কিছুও থাকতে পারে। বাসায় ফিরতে ফিরতে পুরোনো অস্বস্তি ফিরলো। নিচে নেমে কিছু ঔষধ কিনলাম। খেয়েও কোনো কাজ হলো না। ইমরান ভাইয়ের আগে লিখে দেওয়া একটা সিরাপ কিনতে নিচে বের হলাম। এর আগে এক ফুপাতো ভাই ফোন দিলেন, ইজতেমায় আসছেন, আমাদের বাসায় থাকবেন। কাছের ফার্মেসিগুলোতে ঔষধ না পেয়ে বাজারে গেলাম, কিনে আনতে আনতে ফুপাতো ভাইয়ের খবর নিলাম, বাসা চিনবে তো! ওই ঔষধ খেয়েও কোনো কাজ হয়নি। ব্যথা অসহ্য অবস্থায় চলে গেলে ভাগনিকে বললাম, হাসপাতালে যেতে হবে। দ্রুত প্যান্ট পরে নিলাম। একটা লুঙ্গি ব্যাগে নিলাম, টাকাও। দুজনে বের হলাম। দ্রুত সিএনজি নিয়ে কাজের এফএফসি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকলাম।

ডেস্কে একজন ডাক্তার ছিলেন। তিনি বললেন বেডে শুয়ে পড়তে। পেটে হাত দিয়ে দেখলেন। তারপর পাশের রুমে সেই যে গেলেন আর আসার নাম নাই। আমি বেড থেকে ওঠে গেলাম। গিয়ে বললাম, কিছু একটা করেন খুব ব্যথা করছে। সেখানে থাকা আরেকজন বলল, জরুরি বিভাগে বেশিক্ষণ রাখার নিয়ম নেই। বেড খালি রাখতে হয়। আপনাকে ভর্তি হতে হবে। আমি বললাম, আপনি কে? উনি ডাক্তার শুনে বিস্ময় চেপে রাখতে পারলাম না, ‘আপনি ডাক্তার?’ এটা নিয়ে পরে আমরা বাসায় হাসাহাসি করেছি। কিন্তু লোকটা যেভাবে কথা বলছিলেন, তার মধ্যে কোনো সহানুভূতির লেশমাত্র নাই। বিশ্বাসই হতে চায় না, এমন একজন মানুষ ডাক্তার হতে পারে। আমি বললাম, ভর্তি হতে হলে তাড়াতাড়ি করান। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

লেখাটি বেশ দীর্ঘ। গল্পের শুরু ২০২০ সালের জানুয়ারি, ২০২২ সালের মার্চের শেষ নাগাদ চলমান

Comments

comments