যাত্রী

অদ্ভুত নৈঃশব্দ্যের মাঝে
শেষ গাড়িটা আসবে কখন
তার প্রতীক্ষায়  রই।
অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে
কাঁটার বিছানায় ফুল ছড়িয়ে
বিরানে পাড়ি দিই।
মৃত্যু নিজের মাঝে স্থিতু হওয়া
ব্যাখ্যার অব্যাখ্যাত বর্ণনার নাম
বাবার হাত আল পথে হেঁটে
সূর্য্যটা ছিনিয়ে আনার নাম…
তারে জড়ানো শেষ বিকেলের কাক
কৃষ্ণ পোশাকে মোড়ানো জরীর গা
একটি বিস্ফোরণের অপেক্ষায়
চোখ মেলে মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে রই।
তাকিয়ে রই ঘর ফেরত সূর্যের দিকে
তাকিয়ে আছে একটি উজ্জ্বল দিন।
এমন ভোর কখনো আসে নাই
মৃত্যু সংগীতে-
নতুন আলাপ জুড়ে দেয়া
আলোক উজ্জ্বল দিবসের নাম
আমি শুয়ে শুয়ে
শেষ গাড়ির হেডলাইটের দিকে তাকিয়ে রই।

 

> মাহমুদ হাছান। খুব কাছের কেউ ছিলো- এমন নয়। চলতিপথে বা আড্ডায় অনেক গল্প করেছি। তার মৃত্যু খুবই স্পর্শ করেছে। মাহমুদ হাছান ভালো থাকুক।

(পিতা নাম রাখিয়াছিলেন মাহমুদ হাসান। তারেক তাঁহার ডাক নাম। নিজ নাম তিনি লিখিতেন মাহমুদ হাছান। জন্ম ১৫ আগস্ট, ১৯৮৭ । পিতা হাবিবুর রহমান পেশায় ডাক্তার এবং প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। মাহমুদ হাছানের বাল্যকাল খাগড়াছড়ির পানছড়ি গ্রামের কাটিয়াছে। পানছড়ি বাজার স্কুল এবং কলেজ হইতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিয়াছেন। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হন।

দর্শন, সাহিত্য, রাজনীতি ছাড়াও বিবিধ বিষয়ে মাহমুদ হাছানের সম্যক জ্ঞানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্বৎসমাজে তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। তবে তিনি কবি হিসাবেই অধিক সমাদৃত ছিলেন। তাঁহার সমসাময়িক আরো ছয় কবিকে নিয়া ‘মিথের পাখিরা’ নামে তিনি একখানা কবিতার বই সম্পাদনা করিয়াছিলেন। আদর্শ প্রকাশনী হইতে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় গ্রন্থমেলায় উক্ত বইখানি প্রকাশিত হয়।

হাছান বরাবরই রাজনীতি সচেতন ছিলেন। ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে তাঁহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। লড়াইয়ের নতুন ধরণ নিয়ে ভাবিতেন হাছান। “ছাত্র আন্দোলনের ইউটোপিয়াঃ অগাস্ট অভ্যূত্থান ২০০৭” শিরোনামে সেই ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতার ইতিহাস তিনি লিখিয়াছেন। ইহা মূলত মাহমুদ হাছান কর্তৃক আয়োজিত ক্রিটিক বক্তৃতামালার পুস্তিকা হিসাবে প্রকাশিত হইয়াছিল।

মাহমুদ হাছান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু প্রবন্ধ, আলোচনা ও কবিতাও লিখিয়াছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আমেনা মহসিনের ‘দ্যা প্রব্লেম অফ ন্যাশনালিজম – দ্যা কেইস অফ চিটাগং হিল ট্রাক্টস বাংলাদেশ’ বহি উপর সুদীর্ঘ আলোচনা লিখিয়াছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস লিখায় রত ছিলেন। আসিতেছে বই মেলায় সংবেদ প্রকাশনী থিকা তাঁহার একখানা পুস্তক প্রকাশের কথা ছিল।

গত ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখ রাত আনুমানিক ১১টা নাগাদ কারওয়ান বাজার মাছ বাজারের পাশে রেল ক্রসিংয়ে পারাবত এক্সপ্রেস নামক ট্রেনের ধাক্কায় কবি মাহমুদ হাছানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তিনি চলতি মাসের শুরুতে ইংরাজি পত্রিকা নিউ এজে শিক্ষানবিশ হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

তাঁহার অসংখ্য লেখা বিভিন্ন জায়গায় ছড়াইয়া আছে। সমস্ত লেখা একত্র করা ছাড়াও তাঁহার পূণ্যাত্মার স্মরণে এই ফেসবুক পাতাখানা খোলা হইল। আপনাদের অংশগ্রহণ আশা করিতেছি। আমেন। – সুত্র: মাহমুদ হাছান: ফেসবুক পাতা।)

Comments

comments

6 thoughts on “যাত্রী

    • জেনে ভালো লাগল। আমার তোলা ফটো থেকে ব্যানারটি বানিয়ে দিয়েছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। তার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা।

      ভালো থাকুন।

Comments are closed.