মুভি রিভিউ: কখনো আসেনি,কখনো আসে নাই

কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের ডিভিডি  কভার

কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের ডিভিডি কভার

কোন এক দেবীর কথা ভাবুন, যাকে পার করতে হয় অভিজ্ঞতার দুঃসহ চক্র। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাতাল থেকে দুনিয়ায় তার আবির্ভাব। তিনি যৌবনে উর্ত্তীণ হন। তারপর শস্য-শ্যামলা দুনিয়ার জন্য নিজেকে উৎসর্গিত করেন। এরপর তার পাতাল যাত্রা। আবার নতুন ঋতুতে তার আবির্ভাব। ভারতীয় মিথে আছে সময়ের চক্র। সেই চক্রে শুধু মানুষের পুনজন্ম ঘটে না ভাগ্যেরও বদল হয়। মরিয়ম তেমন কোন দেবী নন বা তেমন ধারার মানুষও নন। এই দুনিয়ার বিশেষ একজন মানবী।একটাই তার জীবন। কিন্তু তাকে বেছে নিতে হয়েছে সময়ের এই চক্র। এই চক্রে একবার সে নতুন জীবন লাভ করে আবার মাটির পুতুলে রূপান্তরিত হয়। এই মরিয়ম হলেন জহির রায়হান (আগস্ট ১৯, ১৯৩৫ – জানুয়ারি ৩০, ১৯৭২) পরিচালিত ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র। মরিয়ম নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুমিতা দেবী। এই মরিয়মকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রটির কাহিনী।

আরেকটি চরিত্র সুলতান। তিনি একজন সৌখিন সংগ্রাহক ও শিল্প সমঝদার। দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা অতিমূল্যবান শিল্পদ্রব্য তার ব্যক্তিগত জাদুঘরে রক্ষিত আছে। তার কথা অনুসারে তিনি এই শিল্পের জন্য যেকোন কিছু করতে পারেন। তিনি যেখানে কোন কিছু টাকার বিনিময়ে কিনতে পারেন নাই, সেখানে ছল, চুরি এমনকি খুন করতেও পিছ পা হন নাই। শিল্প আর সৌন্দর্য তার প্রাণ ভ্রমরা। এই চলচ্চিত্র হলো মূর্ত আর বিমূর্তের মধ্যকার দ্বন্ধ। যে দ্বন্ধের কোন মীমাংসা নাই- চলতেই থাকে।

সুলতানের সবচেয়ে মূল্যবান সংগ্রহটি মাত্র পঞ্চাশ টাকায় কেনা। তিনি পঞ্চাশ টাকায় কিনেছিলেন সুন্দরী শ্রেষ্টা মরিয়মকে। মরিয়মকে তিনি ব্যক্তিগত জাদুঘরে সাজিয়ে রেখেছেন। মাঝে মাঝে সামনে দাঁড়ানো মরিয়মের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। কি অপরূপ সৃষ্টি। তিনি মরিয়মকে সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা করে কামনা-বাসনামুক্ত দেখতে চান। এই হলো জরাহীন শৈল্পিক বিমূর্ত জীবন।তার মতে, ‘সুন্দর চিরকাল স্থির থাকবে, মানুষের হাতে সে নড়বে না। তুমি সেই সুন্দর, তুমি স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকো আমার সামনে, আমি দেখি। আমি তোমাকে ছুঁবো না, ফুলের গায়ে হাত দিলে পাপড়ি ঝরে যায়’।  কিন্তু শিল্পে কি ক্লান্তি নাই? মরিয়ম কি সেই জীবন প্রত্যাশা করে? সে মূর্তি হয়ে থাকতে চায় না। তার সৌন্দর্যের ভেতর জন্ম নেয় কামনা বাসনা। মরিয়মের সেই সৌন্দর্যে বলি হয় সৌন্দর্যের কারিগররা। সুলতানের অনিমনীয় শিল্পনিষ্টতার বিপরীতে আছে একজন নিমগ্ন চিত্রশিল্পীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী।

আরো পড়ুন : ইচ্ছেশূন্য মানুষ। মুভি

খান আতাউর রহমান ও সুমিতা দেবী

খান আতাউর রহমান ও সুমিতা দেবী

১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর জহির রায়হানের ‘কখনো আসেনি’ মুক্তি পায়। এটি তার প্রথম চলচ্চিত্র। এর আগে তিনি এ জে কারদারের বিখ্যাত ‘জাগো হুয়া সাভেরা’সহ এহতেশাম, সালাউদ্দীনের মতো নামী পরিচালকের কয়েকটি চলচ্চিত্রে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এই চলচ্চিত্র সাফল্য নিয়ে তার অনেক আশা ছিল। চলচ্চিত্রের কাহিনী,ভাষা নির্মাণও তাই বলে। এই চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দেশের জনগণ বিশ বছর পরে যে ছবি দেখবে বলে আশা করেছিল বিশ বছর আগেই দেশের তরুণরা সে ছবি তাদের উপহার দিল’।

তরুণদের সেই প্রয়াস বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় নাই, কিন্তু কাহিনী ও শিল্প মানে আজো স্মরণযোগ্য। জহির রায়হানের পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলো সফল হয়েছিল। কিন্তু এই প্রথমটি হয় নাই। বাহ্যিকভাবে এই চলচ্চিত্রের সাথে পরেরগুলোর অনেক তফাত রয়েছে। প্রশ্ন আসে, এই চলচ্চিত্রকে দর্শক কেন গ্রহন করে নাই। দর্শকদের চোখ ফুটে নাই নাকি তাদের কাছে এটাকে অনাত্মীয় মনে হয়েছিল। প্রশ্নটা ফেলে দেবার মতো না। সে প্রশ্ন এখনো অপ্রাসঙ্গিক নয়। আশা করি সেই প্রশ্নটা আপনাদেরও আলোড়িত করবে। আসুন আমরা আবার কাহিনীতে ফিরে যাই-

একজন চিত্রশিল্পী আর তার দু’বোন একসঙ্গে রহস্যজনকভাবে মারা যায়।পুলিশ আবিষ্কার করে দু’বোন পাশাপাশি শুয়ে আছে এমন ছবি। একই বাড়িতে কিছুদিন পর বসবাস করতে আসে আরেকজন চিত্রশিল্পী, নাম শওকত আর তার দু’বোন। তাদের সামনের বাড়িতে  থাকেন অদ্ভুত আত্মভোলা সেই সৌখিন শিল্প সংগ্রাহক সুলতান। তার মতে, ‘সৌন্দর্যকে কাছে পাওয়া যায় না, অনুভব করা যায় মাত্র’। তার সংগ্রহের তালিকায় আছে সৌন্দর্যের প্রতীক অমর মানবী মরিয়ম। শওকতের  সাথে মরিয়মের পরিচয় হয়। শওকত তার ছবি আকতে চায়। একসময় তারা দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে। কিন্তু সুলতান বলে, ‘কোটি কোটি মানুষ ঘাসের মতো গজায়, সাধারণ মানুষের মতো বিয়ে করে একগাদা বাচ্চা পয়দা করার মধ্যে কি আছে? মাতৃত্ব? মাতৃত্ব তো গরুর দুধের মতো কোলে কোলে হয়’।  মরিয়ম ও শওকত ঠিক করে একটা নির্দিষ্ট দিনে তারা দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে।

আরো পড়ুন । উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে

সেই দিনেই শওকত ও তার দু’বোন রহস্যজনকভাবে মারা যায়। মৃত্যুর আগে সে এঁকে যায় পাশাপাশি শুয়ে থাকা দু’বোনের ছবি। মৃত দু’বোন অবিকল সেভাবে শুয়ে থাকে। সময় প্রবাহে সে বাড়িতে নতুন লোক উঠে। চিত্রশিল্পী আর দু’বোন। ব্যালকনিতে মূর্তির মতো দাড়িয়ে সে দৃশ্য দেখে মরিয়ম। আবার কি নিয়তির পুনরাবৃত্তি! আবিষ্ট দর্শকের মনে এমন প্রশ্ন জাগিয়ে শেষ হয় ‘কখনো আসেনি’। চলচ্চিত্রের নাম যদিও কখনো আসেনি তারপরও দর্শক ভাবে মুক্তি আসবে।এটা শুধু মরিয়মের মুক্তি নয়। পঞ্চাশ বছর পর যখন বাংলা চলচ্চিত্রকে বাচানোর লড়াই সংগ্রাম হচ্ছে, সে দিকে তাকালে দেখি এই মুক্তি আমাদের চলচ্চিত্রের, শিল্পের, জীবনবোধের। সেটাও কখনো আসেনি। গুটি কয়েক নির্মাতা আমাদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তা বাস্তবতার জমিনে পয়দা হয় নাই।

এই চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে সৌন্দর্য, শিল্প – এই নিয়ে। এগুলোর সাথে জীবনের কি সম্পর্ক। আমাদের প্রতিদিনকার যাপন, প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, হাসি-কান্নার ভেতর সেই শিল্পের বসবাস। জীবন্ত শিল্প মরিয়ম জীবনে প্রেম আসে,আসে বিরহ। এই কামনা বাসনাময় জীবনের নিজস্ব শিল্পিত রূপ আছে। যা সুলতান বুঝে না। শওকত যখন শুনে একলোক ভ্যানগগের দোহাই দিয়ে বলছে, ‘শিল্প করলে তার মতো পেটে পাথর বেঁধে করতে হবে’। বাস্তব জীবনের সাথে শিল্পী জীবনের ফারাক থাকতে হয়। তখন সেই লোকের সানগ্লাস নিজ হাতে খুলে নিয়ে শওকত বলে, ‘জীবনটাকে চশমা খুলে দেখুন’। রঙিন চশমা খুলে দুনিয়াকে দেখার এই জনপ্রিয় সংলাপের উৎস কি এই চলচ্চিত্র? এই আবিষ্কারে এইকালের দর্শক মুগ্ধ!

কখনো আসেনি সেটে জহির রায়হান

কখনো আসেনি সেটে জহির রায়হান

‌১৯৬১ সালের সদ্যবিকশিত গুটিকয়েক মধ্যবিত্তকে লক্ষ্য করে নিশ্চয় এই চলচ্চিত্র তিনি বানান নাই।  সে তুলনায় এই জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশের কাছে এই বিনোদনের চাহিদা ছিলো। তারা গল্পে কোন খামতি লক্ষ্য করেছিলেন অথবা সেটা তারা বুঝেন নাই বা আপন মনে করেন নাই। এই বিচারে, প্রচলিত কাহিনী­-আখ্যানের তুলনায় এই চলচ্চিত্রের কাহিনীতে অপরিচিত একটা ভাব আছে। পুরোটায় কি অপরিচিত? কিন্তু জহির রায়হান সংবেদনশীল মানুষ। তিনি এই গল্পে তুলে এনেছেন ছা-পোষা খেটে খাওয়া মানুষ শওকতের বাবা আর তার সন্তানদের জীবন। সে জীবনের যাতনা।

‘কখনো আসেনি’র পর জহির রায়হান অনেকগুলো ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এগুলো দর্শকদের সাথে সাথে সমালোচকদের সুনাম কামিয়েছে। যেমন- কাচেঁর দেয়াল,জীবন থেকে নেয়া (তার সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় পূর্ণদৈঘ্য কাজ) বেহুলা বা উর্দুতে নির্মিত বাহানা, সংগম। প্রযোজনা করেছেন সুয়ো রাণী দুয়ো রাণী, শেষ পয্যন্ত ইত্যাদি চলচ্চিত্র।এর কোনটাই প্রাণহীন শিল্প বা জীবন ঘনিষ্ট এমন বড়াই করে নাই। তাই লৌকিক বা অলৌকিক গল্পের প্রেজেন্টেশনে সমাজের ভাব-ভাষা প্রয়োগের জরুরত আছে। সে কারণেই সালাউদ্দিনের রূপবান আর জহির রায়হানের বেহুলা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল।

মরিয়ম চরিত্রের ঔজ্জ্বল্য (বাংলা চলচ্চিত্রের ফার্স্ট লেডি সুমিতা দেবী) ছড়িয়ে ছিল সমগ্র কাহিনীতে। নায়কের যে ভাব ভঙ্গি এখন অনেকটা অপরিচিত মনে হলেও সে সময়ের একটা স্মার্ট প্রেজেন্টেশন। খান আতাউর রহমানের সাবলীল অভিনয় দারুন লাগে। খলনায়ক সুলতান চরিত্রে একদম অন্যরকম অভিনয় করেছেন সঞ্জীব দত্ত। তার দেহভঙ্গি ও কথার ধরণ চরিত্রটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। সঞ্জীব দত্তের সাথে আমরা খুব একটা পরিচিত নই। ইংরেজী পত্রিকার সাংবাদিক সঞ্জীব দত্ত ‘যে নদী মরু পথে’ নামে আরেকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। নায়কের দুই ছোটবোনের একটিতে ছিলেন পরবর্তী কালের জনপ্রিয় নায়িকা শবনম, আরেকটি চরিত্রে কণা।

কখনো আসেনি’তে সংগীতের ব্যবহার ভালো। কথা ও সুর আধুনিক। সুর ও সংগীতে ছিলেন খান আতাউর রহমান। তার সাথে আরো গান গেয়েছেন কলিম শরাফী ও মাহবুবা রহমান। মোট পাঁচটি গান আছে। শুনতে ভালো লাগে। ক্যামেরার কাজ কিছু কিছু দৃশ্যকে অসাধারণ করে তুলেছে। সেট আর দৃশ্যায়নে মুন্সীয়ানা আছে। পঞ্চাশ বছর আগের ঢাকার যৎসামান্য দৃশ্য আর গ্রামের বৃষ্টির দৃশ্য, বিশেষ করে বৃষ্টিতে দৌড়ে আশ্রয় খোঁজার দৃশ্যটি চোখে লেগে থাকে।

জহির রায়হান বিশ বছরের কথা বলেছিলেন। তা-ই তার ব্যবসায়িক ক্ষতি বড়ো কিছু না। সেই প্রস্তুতি নিশ্চয় তার ছিলো। কিন্তু বিশ বছর পর কি হলো। বলতে হচ্ছে এই যেন উল্টো যাত্রা। কারণ, জহির রায়হানের চলচ্চিত্রে শিল্প আর জনপ্রিয়তা যেভাবে হাত ধরাধরি করে আছে, এটাকে ঠিক মতো বুঝা হয়ে উঠে নাই।একই সাথে সবকিছুর ভার দর্শকের সাথে ছাড়া যায় না। এই জায়গাটা তিনি ধরতে পেরেছেন্ দর্শকদের এক ধরণের চাহিদা আবার জীবন সম্পর্কে নিজের অনুভূতি ও দর্শনকে কিভাবে এক করতে হয়। তাই জহির রায়হানের চলচ্চিত্রকে মূলধারার বাইরে অন্য কোন নাম ধারণ করতে হয় নাই। কখনো আসেনি’তে শিল্পের এক ধরণের দ্বন্ধ সংঘাতময় ধারণা থাকলেও তা আমাদের বোধ আর উপলব্দির কাছাকাছি। সেটা বাংলা চলচ্চিত্রের গতি-প্রকৃতিও বটে। কিন্তু সেটা সুস্থ্য ধারা-অসুস্থ্য ধারা, মূলধারা-বিকল্প ধারার বিভাজনের দাপট নয়। যে দাপটে আজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পই ধ্বংসের মুখে।

কখনো আসেনি মুক্তি পেয়েছিলো পঞ্চাশ বছর আগে। এই পঞ্চাশ বছরেও বিভেদহীন চলচ্চিত্র নির্মাণের চিন্তায় সুস্থির হতে পারি নাই। জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, সালাউদ্দিনের পর এই ধারা ক্ষীণ থেকে ক্ষীনতর হয়েছে। আলমগীর কবিরে সেই চেষ্টা ছিলো। এরপর থেকে সকলি বিকল্প হবার উচ্চবর্গীয় বাসনা।  তারেক মাসুদ বিকল্প কোন কিছুর স্বীকার না করে ভালো চলচ্চিত্র আর মন্দ চলচ্চিত্রের ভাগ করেন।সেই লক্ষ্যে তিনি জেলা শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে দর্শকের চোখ তৈরি করতে তার নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে ঘুরেছেন।তিনি সিনেমা হল রক্ষার বিষয়েও জনমত তৈরির চেষ্টা করছিলেন।  সে প্রয়াস তার প্রয়াণে অসমাপ্তই থেকে গেল। ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান বাংলা চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিয়ে তোলপাড় আমরা দেখছি।

পাকিস্তানী আমলের কঠিন পরিবেশে ‘কখনো আসেনি’ দিয়ে জহির রায়হান শুরু করেছিলেন,যার শেষ ‘জীবন থেকে নেয়া’ দিয়ে।তারা উর্দু চলচ্চিত্রের আগ্রাসন ঠেকিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের একটা ধারা তৈরি করেছিলেন। এটা রাজনৈতিক প্রশ্নও বটে। আজো সেটা রাজনৈতিক। আজ নানা প্রশ্নে সমস্যা আরো বেড়েছে। কিন্তু এই কলিকালে আমাদের সামনে কে বা কি আছে? ঘুরে ঘুরে একই ইতিহাসে ফিরে আসাই কি নিয়তি।

নানা বিভাজন উতরিয়ে ‘কখনো আসেনি’ যে অচলায়তনের কথা বলছে তাকে ভাঙ্গায় এখন মূল কাজ।

Comments

comments

8 thoughts on “মুভি রিভিউ: কখনো আসেনি,কখনো আসে নাই

  1. ১৯৬১ সালের মুক্তি পাওয়া এই ছবিটা কি এখন পাওয়া যায়। আপনি কিভাবে দেখেছেন।
    আপনার লেখা পড়ে ছবি না দেখলেও চোখের সামনে সব ভেসে উঠে। চমৎকার।

  2. সিম্পল গল্পটির ভিতর অন্তর্নিহিত অনেক ম্যাসেজ ছিল। শেষ দৃশ্যটি খুবই হৃদয়বিদারক ছিল। অভাবের তাড়নায় টিকে থাকার সংগ্রাম তখনকার মধ্যবিত্ত বাস্তবতার স্বার্থক প্রতিচ্ছবি।

  3. একই সাথে সবকিছুর ভার দর্শকের সাথে ছাড়া যায় না। এই জায়গাটা তিনি ধরতে পেরেছেন্ দর্শকদের এক ধরণের চাহিদা আবার জীবন সম্পর্কে নিজের অনুভূতি ও দর্শনকে কিভাবে এক করতে হয়। তাই জহির রায়হানের চলচ্চিত্রকে মূলধারার বাইরে অন্য কোন নাম ধারণ করতে হয় নাই। কখনো আসেনি’তে শিল্পের এক ধরণের দ্বন্ধ সংঘাতময় ধারণা থাকলেও তা আমাদের বোধ আর উপলব্দির কাছাকাছি। সেটা বাংলা চলচ্চিত্রের গতি-প্রকৃতিও বটে। কিন্তু সেটা সুস্থ্য ধারা-অসুস্থ্য ধারা, মূলধারা-বিকল্প ধারার বিভাজনের দাপট নয়। যে দাপটে আজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পই ধ্বংসের মুখে।

    এর কোনটাই প্রাণহীন শিল্প বা জীবন ঘনিষ্ট এমন বড়াই করে নাই। তাই লৌকিক বা অলৌকিক গল্পের প্রেজেন্টেশনে সমাজের ভাব-ভাষা প্রয়োগের জরুরত আছে। সে কারণেই সালাউদ্দিনের রূপবান আর জহির রায়হানের বেহুলা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল।

    আজকালকার জমানার লোকেরা এইসবকে এড়াইয়া যাইতে চায় সুজন ভাই।দারুন কিছু কথা বলেছেন মুভির কাহিনী বলার ফাকে ফাকে…

    এরপর থেকে সকলি বিকল্প হবার উচ্চবর্গীয় বাসনা।

    এরথিকা বাইরাইতে না পারলে কামের কিছুই হইবোনা…

    ধন্যবাদ সময়োপযোগী এইদারুন লেখনীর জন্য!

    • ধন্যবাদ ভাই।

      বাণিজ্যিক এবং শিল্প এমন বাদানুবাদ আমাকে ইদানিং খুবই বিরক্ত করছে।
      আমরা যদি মহান নির্মাতাদের কাজগুলো বিবেচনা করি – তাইলে এখনো শেখার অনেক কিছু আছে।
      তারা মুভিকে কিভাবে সেনসিবল করে তোলে এই ভাবনাটা ভাবা জরুরী।
      একই সাথে যে বিন্দুতে এসে অনেক কিছু মিলে- সেই দিগন্তরেখা খুজেঁ বের করতে না পারলে সমস্যা ও বিতর্ক চরমই হবে।

  4. আমরা যদি মহান নির্মাতাদের কাজগুলো বিবেচনা করি – তাইলে এখনো শেখার অনেক কিছু আছে।

    এখন কাউরে যদি বলি ভাই আপনে তাদের মুভি দেখেন…তাইলে বুঝতে পারবেন আমাদের নির্মাতারা কেমন ছিল…আর সে যদি উত্তর দেয় ঐ সাদাকালো মুভি আমি দেখতারুমনা…বোরিং লাগবে আমার কাছে…

    তো তারে আপনে কি কইয়া বুঝাইবেন?

    আমাদের এখনকার দর্শকেরা এই পদের হইয়া যাইতেছে……আফসুস করা ছাড়া আর কিছু করার নাই…

    ধহন্যবাদ!

Comments are closed.