জো ভার্সেস দি ভালকানো

মাঝে মাঝে এমন হয় যে, আপনার দিনটা খুব বাজেভাবে শুরু হলো। আপনার যদি শেভ করার অভ্যাস থাকে। শেভ করতে গিয়ে গাল কেটে গেল। ঘর হতে বাইর হতে গেছেন দুয়ার লাগল বেমক্কা ধাক্কা। বেচারা আর কি? রাস্তায় সবাই দিব্যি চোখ বুঝে হেঁটে যাচ্ছে, আর আপনি দেখে শুনেও উষ্টা খাইলেন। কেমন লাগে বলেন তো। মেজাজ নিশ্চয় বিলা হয়ে যায়। এবং আপনার মনে হতাশা জম্মাবে। ভাববেন আমার কেন এমন হয়? শালার কপালটাই খারাপ। নিজের অস্তিত্ব নিয়া শংকা জাগে। এমন একটা কাহিনী দিয়া শুরু হয় টম হ্যাংকস অভিনীত মুভি জো ভার্সেস দি ভালকানো।

অনেকদিন আগে মুভিখোরদের মুখে টম হ্যাঙ্কস আর মেগ রায়ানের তিনটা মুভির কথা শুনছিলাম। এটা হলো সেই তিনটা মুভির প্রথমটা। বাকি দুটার নাম হইল স্লিপলেস ইন সিয়াটল আর য়ু হ্যাভ গট মেইল। এই দুটা খুবই হিট মুভি। জো ভার্সেস দি ভলকানো’রে কওয়া হইতেছে অস্তিত্ববাদী মুভি। ক্যান? নিজেরে নিয়া হতাশতা বিমর্ষতা আর মৃত্যু ভাবনার সাথে অস্তিত্ববাদের সম্পর্ক কি। অস্তিত্ববাদের স্রষ্টা কির্য়েকেগার্দ বা অন্যান্যদের দিকে তাকালে কেমন যেন বিকেল বেলার নিসঙ্গ এবং আশাতীত বেদনার সাথে সাক্ষাত ঘটে। সেইসব বেচারারা জীবনকে মোকাবেলা করছেন সবকিছুর বাইরে ব্যক্তি মানুষের হয়ে উঠা দিয়া। এটা কি জীবন জয়ের গল্প? অস্তিত্ব সত্ত্বার পূর্বগামী। সার্বিক মানুষ বাদ দিয়া বিশেষ মানুষ নিয়াই তাদের আগ্রহ। যেটারে নিজের পছন্দ দিয়া গড়ে তোলা যায়। আবার এটাও বলে যেন, মানুষ দুনিয়াতে চরম অশান্তির মাঝে পতিত জীব।

জো’র ডাক্তার বলতেছেন ত্র অসুখখানার নাম ‘ব্রেন ক্লাউড’। সে বড়ো জোর আর মাস ছয়েক বাঁচবে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একখান অসাধারণ উপন্যাস আছে। নাম পারাপার। সেখানে বিমান নামের একলোকের মাথায় নাকি আকাশ ঢুকে পড়ে। ফলাফল স্বরূপ লোকটা পাগল হইয়া যায়। সেই যাই হোক জো পাগল হয় না। ডাক্তার কই, ‘তোমার জীবনের সামান্য অংশই অবশিষ্ট আছে…. সেটারে ভালোভাবে যাপন করো’। জো সেদিনই তার বজ্জাত বসরে যথেষ্ট হেনাস্থা কইরা চাকুরী থেকে ইস্তফা নেয় । কলিগ ডেডে’রে সাথে একটা ডেট করার আশা পোষণ করলে, সেটা মঞ্জুর হয়। পানাহারের পর ডেডে তার বাসায় আসলে জো জানায় বেশি দিন বাঁচবে না। সাথে সাথে আর দেরি নাই। ডেডে ঘর ছেড়ে বাইর হইয়া যায়। বলেন তো কেমন লাগে। দর্শক হিসেবে আমার যে দীর্ঘশ্বাসটা বাইর হইছে, জো’র অবস্থা বলার কি আর দরকার আছে।

পরদিন গ্রেনোমোর নামে এক ইন্ডাষ্টিশিয়ালিস্টের সাথে জো’র সাক্ষাত হয়। সে জো’রে কয় প্রশান্ত মহাসাগরের একটা দ্বীপ হইতে সুপারকন্ডাকটার বানানোর জন্য একটা খনিজ দ্রব্য নিয়া আসতে হইবো। যেটার এক নাম বুবারু। অন্য নাম আনঅবটেনিয়াম। মানে যা এখনো অর্জন করা হয় নাই। যারা এভাটার মুভিখান দেখছেন তাদের নিশ্চয় মনে আছে এই জিনিসখানের জন্য মানুষ প্যানডারা গ্রহে হামলা করছে। সেই যাই হোক, কল্পিত পদার্থ নিয়া আসতে হইলে দ্বীপের অধিবসীদের মনোবাসনা পূরণ করতে হবে। সেইটা হইলো দ্বীপে যে আগ্নেয়গিরিখান আছে সেটাতে ঝাঁপ দিতে হবে। জো যেহেতু বেশিদিন বাঁচবে না, ঠিক করে যতোদিন বাচি দারুণভাবে বাঁচি, নো চিন্তা ডু ফুর্তি। সে কয় রাজি। এরপর পধিমধ্যে দুই রমনীর সাথে দেখা। এই দুজন আবার গ্রেনোমোর এর কন্যা। এঞ্জেলিকা আর প্যাট্টেসিয়া। সে যাইহোক একসময় নানা কাহিনী শেষে জো আর প্যাট্টেসিয়া আগ্নেগিরির সামনে বিয়ে করে, এরপর আগুনে ঝাঁপ দেয়। মুভির শেষে লেখা আসে তারা এরপর সুখে শান্তি বসবাস করতে লাগিল। কেমনে? সেটাই মজা।

এই মুভির অসাধারণ একটা দৃশ্য হলো বোটডুবির পর অদ্ভুত একটা ভেলায় করে জো আর প্যাট্টেশিয়া ভাসতে থাকে। সমুদ্দুরে মইধ্যে চাঁদ দেখে জো বিহ্বল হয়ে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে, আমি বাঁচতে চাই। অসাধারণ, মনে গেঁথে রাখার মতো দৃশ্য। জাগতিক নিসঙ্গতার মধ্যে ব্যক্তি মানুষ কিছু অসামান্য রূপের মুখোমুখি হয়। যেটা তার বেঁচে থাকাতে অনির্বচীন স্বাদ এনে দেয়। সে তার প্রতিষ্ঠিত নিয়তিকে বদলে দিতে চায়। ভালোবাসা মানুষকে বাচাইয়া দিতে পারে এই জিনিসখান দেইখা মাসুদ রানা সিরিজের অনন্ত যাত্রা বইয়ের কাহিনী চোখের সামনে জ্বলজ্বল করতে ছিলো। আহারে, ডাক্তার কই, ‘রানা তুমি বাচবা না, তোমার ব্রেন ক্যান্সার হইছে’। রানা দুগর্ম এক জায়গা গিয়া নিজেরে সবার কাছ থেকে আড়াল করে। ওমা, পরে দেখা যায় ক্যান্সার সাইরা গেছে। ডাক্তার কই, ‘তোমার অসুখ সারাইছে প্রেম’। এই হলো প্রেমের মহত্ব। সেই যাই হোক মানুষ আসলে কি করতে পারে, সেটা নিয়া আমার দ্বন্ধ আছে। তবে এই বোধ বিলকুল কবুল করি, মানুষ নিজেরে দেখা নিজেরে আরো আরো উচ্চতায় নিয়া যেতে পারে।

এই মুভিতে ডেডে, এঞ্জেলিকা আর প্যাট্টেসিয়া এই তিন চরিত্রেই অভিনয় করছেন মেগ রায়ান। কেন না, জো’র মনে নারী সবসময় একইরূপে ধরা দেয়। জো আগুনে ঝাপ দেয়ার আগে বলে, ‘আমি কি তোমারে কইছি ‘ এই প্রধম তোমারে দেখছি। কিন্তু মন কইতেছে আগে তোমারে কোথাও দেখছি?’ আহা যারে আপনে মন দিছেন, তারে তো আগে দেখবেনই। সেই স্বর্গ আসেৃ আবার নাকি সেইখানে যায়।

যে মুভি নিয়া এতো প্যানপ্যানানি সেটা একটা ফ্লপ মুভি। কিন্তু এটা কাল্ট মুভির মর্যাদা পাইছে। এই কাল্ট মুভি উপাধি এমন এক কিসিমের মুভিরে দেয়া হয়, যেগুলা হিট বা ফ্লপ হোক সেগুলার একদল ভক্ত থাকে তারা এইসব মুভি বার বার দেখে, দেখতেই থাকে। যেমন- আমির খান আর সালমান খানের আন্দাজ আপনা আপনা, এই মুভিটা আমার একদম ভালো লাগে নাই। কিন্তু পরিচিত লোক আছে হুদাই এইখান দেখে। কি মজা পায় কে জানে? আমি ভাবতেছি সময় সুযোগ করে ‘জো ভার্সেস দি ভালকানো’ আরো একবার দেখব। আপনারাও দেখতে পারেন।

১৯৯০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত এই মুভি কাহিনী ও পরিচালনায় জন প্যাট্টিক শনলি। প্রযোজনা স্টিফেন স্পিলবার্গসহ আরো দুইজন। আর এই মুভিতে চমৎকার দুই’একটা গান আছে।

Comments

comments

7 thoughts on “জো ভার্সেস দি ভালকানো

  1. হুম।
    ভালো লিখেসেন, লাইক।
    শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, মজুমদার নয়। ঠিক করে দেবেন, নাহয় কদিন পর পর এই সংশোধনী আসতে থাকবে, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি 🙂

    • ঠিক করে দিলাম।
      ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
      হা হা হা অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক।

      শুভ কামনা।

  2. রিভিউ পইড়া দেখার ইচ্ছা হইলো। টম হ্যাংকস আর মেগ রায়ানের বাকি ২টা দেখছি; এইটাই দেখা হয় নাই।

    – ইমরুল হাসান।

Comments are closed.