অলিম্পিক খেলার জন্য অলিম্পাস পর্বতরে চেনা-জানার দরকার নাই। সেই পর্বতখানি না চিনিয়া না জানিয়া আপনি ডিগবাজি দিয়া আসিতে পারেন। কারণ ডিগবাজির সাথেই আজকের অলিম্পিকের কায়-কারবার। এর সাথে অলিম্পাস পর্বতের যোগাযোগ অতি ক্ষীণ। সুতারাঙ, অলিম্পাস কি বস্তু ইহা না চিনিলেও কারো দোষ দেয়ার নাই।
আলাপটা নৈতিকতার সাথে ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে। বিষয়টা মোটাদাগে নয়। এই শিরোনাম না দিয়ে অন্য কিছু দেয়া যেত, কিন্তুতে ইহাতেই যথেষ্ট আরামবোধ হইতেছে। বলছি না ধর্মের নৈতিক দায়-দায়িত্ব নাই। ধর্ম সম্পর্কে যেকোন অবস্থান থেকে নৈতিকতার ধারণা যোগ করা সম্ভব। এখানে যে বিষয়টাতে জোর দেয়া হয়েছে তা হলো, মানুষের তার বোধ-বুদ্ধি থেকে নৈতিক জীব হিসেবে নিজেকে হাজির করতে পারে কিনা। যদি পারে তবে ধর্মের সাথে নৈতিকতাকে এক করে দেখার জোরটা কি করে টিকে থাকে। তাছাড়া নৈতিকতা একটা উপরি বিষয়। ধর্মকে বুঝতে হলে বা অনুশীলন করতে হলে এর বাইরে অন্য অর্থগুলোর দিকে জোর দিতে হবে। মোটাদাগে কোনটা প্রাথমিক আর কোনটা প্রাসঙ্গিক সে বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ।
বিষয়টাকে গুরুত্বপূর্ণ ও জোর দিয়ে আলোচনার স্বপ্রাণ চেষ্টা আছে আলবত। কিন্তু এটা গভীর কোন দার্শনিক আলোচনা না। এইসব বিষয়ে খুচরা আলাপ মাত্র। কবজির জোর হোক গলার জোর অথবা বুদ্ধির জোর বা ঈমানের জোরের কম – সেটা স্বীকার করে নেয়া যাক।
কেন এই আলাপ
নৈতিকতা বিষয়ে ধর্মে গড়াগড়ি দিয়া দেখা যায়, শুধুমাত্র নৈতিক-কর্তা আকারে ধর্ম আমারে পূণ্যবান বান্দা বানাইতে পারতেছে না। বরঙ, ইহা মানুষকে কিছু নীতি-নিয়মে অন্ধ দুবর্ল বানাইতেছে অথবা মানুষের দুর্বলতাকে আশ্রয় করিয়া নিজের বাসা তৈয়ার করছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ কিছুই করার নাই এই সুযোগ নিতেছে। যেহেতু দেখা যাচ্ছে এই যে দুনিয়া সেখানে মানুষই ঘটনা ঘটায়। ঘটনা না ঘটালে তার বিচার করা যাইতেছে না। কিন্তু ঘটনা ঘটনেওয়ালা মানুষের ঘটনা ঘটানোর কোন শক্তিই কাজে লাগে না। কারণ সে অভ্যাসের দাস। অথচ এই ঘটনা ঘটনেওয়ালাকে নিয়া পুরাকাল থেকে এই পর্যন্ত কতো বাতচিত। তাই হাত জোর করে নিজেরে বলিলাম, এর বাতচিত অন্য কিছু। সেই বাতচিতের খানিকটা এইখানে তুলিলাম।
নৈতিকতা ও মানব সমাজ
নৈতিকতা বিষয়টা কি? বা এর কেন্দ্রিয় ধারণা কি। একটা মানদন্ড দিয়া ভলো-মন্দের তুল্য বিচার করা। সেই পথ ধরে আমরা যতদূর দেখছি, দেখি সামাজিক মানুষই নৈতিক হয়। আবার বলছি সামাজিত মানুষ। সনাতনী সংজ্ঞাটাই ধার নিলাম। এটা করলেই কি সব খালাস। আপনি ভালো-মন্দের সনদ পাইয়া গেলেন। না, সব খালাস না। কারণ আপনি কোন কিছুকে পরম নৈতিক অবস্থা মনে করলে আপনাকে স্থান-কালের নানা শর্তের মধ্য দিয়ে আগাইতে হয়। যদি আপনি সেই পথে চলেন, তখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেহেতু আপনি নির্দিষ্ট মানুষ, নির্দিষ্ট স্থানে-কালে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করেতেছেন। এই ক্রিয়া-প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে করলেও সেখানে যতই কম হোক আপনার যুক্তি-বুদ্ধি ও বেছে নেয়ার মতা স্বীকার করতে হয়। সেই হিসেবে নৈতিক কর্তা আর নৈতিকতা বানানেওয়ালা একই মানুষ, আলাদা আলাদা না। অবশ্যই একই মানুষ। সেই সামাজিক মানুষ। ধর্মের প্রসঙ্গই বাদ দিয়া এই প্রশ্নের উত্থাপন করা যায় কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। সেই প্রশ্নে পরে যাবো।
মানব প্রকৃতি ও নৈতিকতা
মানব প্রকৃতি নিয়া তর্কের শেষ নাই পুরাকাল থেকেই। কেউ কেউ জোর দিছেন প্রজাতিবাচক গুণের উপর। তারা মানুষকে চিন্তাশীল আকারে হাজির করছেন। তারা দেখছে মানুষের চিন্তার দৌড় তামাম দুনিয়ার উপর খবরদারী করতে পারে। তার চেয়ে বড়ো কথা সে নতুন নিয়ম তৈরি করে আবার ভাঙ্গে। সেইটা বিমূর্ত মানুষ ধারণার হিসেব নিকেশ। যদি সেই হিসেব সত্য হয় তবে আমরা দেখি সব মানুষে সেই গুণ স্বপ্রাণ হাজির নাই। রসালো করে বলতেসি এই গুণের তাৎপর্য ও লক্ষণ অব্যক্ত থাকে। যেহেতু তার কোন মনদন্ড হাজির নাই তাই এভাবে বলা বিপদজনক। কখন কে কিভাবে চ্যালেঞ্জ করে ঠিক নাই। তারপরও সেই অব্যক্ত থাকাটাই কি কিছু মানুষরে বাধ্য করে ধর্ম বা অন্যদের নিয়ম মেনে নিতে। সেখানে শক্তি বা বলপ্রয়োগের বিষয় থাকাটা অনিবার্য নয় ।
এই কালে এসে আমরা বিমূর্ত ধারণা বাদ দিয়ে হাটা-চলা করে, কথা কয় এমন মানুষ ধরে বলতেছি একটাই মানুষ। আগাম ধরে নেয়ার কিছু নাই। এর বাইরে মনুষ্য ধারণা বলে কিছু নাই। কিন্তু সে ক্রিয়াশীল হোক আর চিন্তনশীল হোক তার ভালো-মন্দ সবকিছু ঠিক করে দেয়ার দায় কি অপর কিছু নিতে পারে। তাইলে ক্রিয়াপরতার মানুষ না যন্ত্র পাওয়া যাইতে পারে। যে মানুষ কোনটা ভালো কোন খারাপ সেটা ঠিক করতে পারল না, তারে কি বলা যায়। আল্লাহর সৃষ্টিরুপে শরমিন্দা হইলাম। তারে কি আল্লাহতায়ালা এতো অথর্ব করে পাঠাইছেন। এমন এমন অথর্ব বিষয়াদি প্রতিনিয়ত চোখে দেখি। তারপরও জোর দিয়ে বলা যায়, ভালো-মন্দের নির্ধারক মানুষই নিজেই হইল। তবে যে ভালো-মন্দ মানুষ নিজেই চিন্তা করে বের করে, তার জন্য ধর্মের দরকার কি? এই কথার পেছনে ঢের কারণ আছে। কারণ আমি ঠিক এইসব কথা সেটা বলতে চাইতেছি না।
পছন্দ মানেই সাবজেক্টিভ
মানুষের যে কোন চয়েজই সাবজেক্টিভ। এটারে নৈব্যক্তিক মনের করার সুযোগ কম। এই পছন্দ-অপছন্দের দোহাইরুপে অনেক কিছুর কথা বলা যায়। কিন্তু যদি আপনি ঘুষ না খান, তাতে আপনার মুসলমানিত্ব জায়েজ বা না-জায়েজ হয়ে যায় না। কেন না, ইত্যিমধ্যে আপনি চাইলে সেই প্রশ্ন তুলতে পারেন- আমারে চাকুরী দিছে মানে হেন-তেন করার মতা দিছে কিন্তু ঘুষ খাওয়ার জন্য না। নিয়মানুযায়ী আমি তা মানতে বাধ্য। অথবা আপনি নিয়মের অধীনে থাকাকেই ঝুকিহীন মনে করেন। ইতিমধ্যে এমনিতে দেখা যাচ্ছে এই ঘুষ খাওয়ার মতা না দেয়ায় ভালো। এতে নানা বিশৃঙখলা তৈরী হয়। আর যদি ঘুষ খাওয়াটাই সমাজের মনের ভেতর ঢুকে যায়, আপনি কোন ধর্ম দিয়ে ঠেকাইতে পারবেন না [যদি রাজনৈতিক ফোর্স আকারে ধর্ম কাজ করে, তখন কি হয় বলা মুশকিল]। এইখানে ধর্মে ঠেক দেয়ার ঠেকা নাই। এই কর্তব্য-কর্ম ঠিক করতে ধর্মের দরকার পড়তেছে না। যদি বলে ঐ লোকটা সৎ, ঘুষ খায় না। ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল- ঐলোক তো এইটা বইলা ঢুকছে। আমি এটা করব সেটা করব না। এই করা না করা তারে মূল্য দিতেছে। এইখানে ভালো বা মন্দ আসলে কি। কিছু নিয়ম যেগুলা চাইলে মানতে পারেন। নিজের পক্ষে আপনার দোহাইয়ের অভাব নাই। এগুলা আসলে গভীর কিছু না। কারণ, ফল হিসেবে উপরের জিনিসটাই হাজির।
আকেলের মধ্যে যে হাজির
এই মানুষ ঘটনার পিছনে যে কথা, সেটা বলতে চাই। ঐ যে নিয়মনীতি বানানোর কিচ্ছা- মানুষের মধ্যে কি নৈতিক হবার জিনিস পত্র মজুদ নাই। তার বুদ্ধি-আকেলের মধ্যে। সমাজের মধ্যে। সেইটা কতটা অপরের ভালো চাইলেন তার সাথে সাথে উপরি কোন আচরণটা আপনার জন্য দরকার সেই বিবেচনাও বটে। আপনি সামাজিক নমস, সম্পর্ক এইসব বিচার করে দেখেন- আপনি যদি মিথ্যা কথাও বলেন, আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন সত্য কথা বলাটাই স্টান্টার্ড । আবার মাঝে মাঝে বলেন টেকনিক্যালি সত্যকে এড়াইয়া যেতে হবে। আলবত, এগুলোর পেছনে কিছু কন্ড্রিশান থাকে। অন্যদিকে বিমূর্ত ভালো-মন্দের ধারণা প্রায়শ কন্ড্রিশনকে পাশ কাটাইয়া যায়। তাইলে যেখানে আপনি নির্ধারণ করতে পারতেছেন কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। এইতো আপনি বুঝতে পারতেছেন কোনটা নৈতিক অবস্থান। যদিও আমল করবেন কিনা সেখানে সমস্যা থেকে যায়। কিন্তু কথা হইল আপনি একখান নৈতিক অবস্থান চিহ্নিত করেছেন। এইসব মেনেও বলতে পারেন আজকাল নৈতিকতার কোন বেইল নাই।
নৈতিকতা ও ধর্ম
কেন বলতেছি নৈতিকতায় ধর্মকে জড়াইলে ধর্মেরই সমস্যা। দার্শনিক অর্থে এটা কোন ধর্ম। সেই ধর্ম যেটাকে মানুষ আপন আপন বুদ্ধি ভিত্তি দিয়া নির্ণয় করে। সেটা আসমানী ধর্মও বটে। যেমন কিছু কিছু দার্শনিক কিছু না থাকার চেয়ে নামে ধর্ম থাকা ভালো এইভাবে আরকি। ভালো-মন্দের সাথে বেহেশত দোজখ জড়াইলে মানুষ সুবোধ আচরণ করে। কিন্তু তাতে এমন কি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। আপনে মাঠে গিয়া দেখেন, ধর্মের দোহাই দিয়া অনেকক্ষেত্রে কাজ উদ্ধারে সুবিধা। ইদানিং, আবার মরমী শান্তিবাদের চর্চা হইতেছে ঢের। কিন্তু, মানুষ যেমন নিয়ম পালন করতে নিষ্ঠার পরিচয় দেয়, তেমনি সুযোগ পাইলেই নিয়ম ভাঙ্গে। এটা মানুষ সম্পর্কে মোটা দাগের ধারণা এমন না। কারণ এর সাথে সে যুক্তি-বুদ্ধি ও পরিবেশগত নানা শর্তের বাধা ও ধাধা তৈরি আছে। সেইসব দোহাই দিয়া মানুষকে মাফ করার বিষয়ও এখানে আসতেসে না।
নাগরিক জীবনে ধর্ম ও নৈতিকতার ফেনা
শেষ বিচারে নৈতিকতা মানে নিয়মের সমষ্টি। কোনটা ভালো-কোনটা মন্দ, কোনটা করবেন-কোনটা করবেন না। এর বাইরে নৈতিকতা অনেক উপরের জিনিস বলে প্রচার করা যায়। কিন্তু মানব সমাজে এই নৈতিকতার যে ভাব-ভঙ্গি তাতে এটা নিছকই নিয়ম। নমুনা আকারে দেখা যাক এখনকার দিনের নাগরিক ধর্মচর্চার পরিসর। এখানে যে হাজির বাস্তবতা তা উল্লেখ করলেও সমস্যা নাই। তারা নিজেরাও সেই বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তাতে নিয়ত বা উদ্দেশ্য নামক হংস ডিম্ব নিয়া নানা উল্লম্ফন গর-হাজির না। আজকের দিনের শিক্ষিত ইসলামিস্টদের সাথে ধর্মের সম্পর্ক হারাম-হালালের মাসলা-মাসায়েল নিয়া। রাজনৈতিক অর্থে গণতন্ত্র কেমনে জায়েজ হয়, ইসলামী ব্যাংকিং ইত্যাদি। লক্ষ্য করুন এইগুলো হাজির বাস্তবতার সাথে আপোষরফামূলক সিল-ছাপ্পর, ইসলামিক সনদ দেয়া না দেয়ার বিষয়। আমাদের ইসলামিক টিভি থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ার পিস টিভিতে সেই একই জিগির। ফারাক শুধু ভালো-মন্দের সিল ছাপ্পর যারা দিচ্ছে কার কি সনদপত্র আছে। সেটা। একইভাবে মডারেট মুসলমান বনে যাওয়া মুসলমান ঘরের ছাওয়ালরাও ভালো ইসলাম ও মন্দ ইসলামের ভালোই কারবার ফেদেছে। কিন্তু এই ভালো-মন্দের বাইনারী কারবারের দর্শনের বাইরে মানুষের কি মুক্তি নাই। ভালো বা মন্দ কি একাট্টা জিনিস কিনা সেই প্রশ্ন তোলা হয় না। এই প্রশ্নই থাক, ধর্ম কি এমন বাইনারী চয়েজ দেয়া জিনিস। যদি এই হয় ধর্মের তর্ক তাইলে আমাকে সেই প্রশ্ন তুলতেই হবে। ধর্মকেই প্রশ্ন করতে হবে। সমাজে কি বিশেষ ধর্মের উৎপত্তি থেকে বিশেষ নৈতিকতার জম্ম, না এই ধরনের বিশেষ নৈতিকতা অর্জনের সাথে ধর্ম নিজে যুক্ত করছে। অথবা এমন তো নয় ধর্ম নিজে কোন আলগা সমস্যা চিহ্নিত করছে, যেটা সেই সমাজে হাজির ছিলো না। তাইলে ধর্ম বায়বীয় কিছু হয়ে গেলো। এটা মানুষের অপোকৃত ভালোত্ব অর্জনের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা না মানব চৈতন্যের ধারাবাহিকতা। এটা করে মানুষ সভ্য হইছে- এই ধরণের কথা বলা হচ্ছে না। সভ্য হওয়া কথাটা আদতে বর্ণবাদী বিষয়।
নৈতিকতা গোপন জিনিস
এই সমাজে দিনে দিনে ধর্মীয় নৈতিকতা একটা গোপন জিনিস হয়ে যাইতেছে। আধুনিক শহুরে ধর্মের যে বয়ান, তাতে মনে হয় শুধুমাত্র ভালো-মন্দের বিএসটিআই মার্কা সনদ দেয়া ছাড়া এই ধর্মের কোন কাজ নাই। সেটা আগে বলা হয়েছে। আজকাল যখন বন্ধু বা ভাই-বেরাদার বা পাবলিক প্লেসে ধর্ম নিয়ে যা শুনা যায়, প্লিজ ধর্ম নিয়া কথা তুইলেন না। আমি মুসলমান এইটা মানি। নামাজ-রোজা কিছু করি। সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। অর্থ্যাৎ, ভালো মন্দের ছিল-ছাপ্পর সামাজিক হইতে পারে কিন্তু ধর্ম পরিচয়টা গোপন জিনিস। ঘটনা এমন যে, এই নৈতিকতা প্রাইভেসীর চেয়ে গভীরতর গোপন জিনিস। এইসব ধর্মের নৈতিকতাও গোপন ও প্রাইভেট হইছে। সামাজিক না। তখন আমি জানতেছি না যে মানুষ নৈতিক বলে দাবি করছে কার নৈতিকতার উৎস কোনটা। যেযহতু সেটা জানতেছি না, তার বিচার-বিবেচনা মতা আস্থা না হারায় না বলা যায়, সেই নৈতিকতা বানানেওয়ালা। কিন্তু ধর্মের সামাজিক পরিসরে এসে মনে হয় এই সব ব্যক্তিগত ধর্মের চেয়ে মাসলা-মাসায়েল নিয়া সামাজিক ওয়াজ-মাহফিলের স্থান দখল করা টেলিভিশন অনেক ভালো জিনিস। সেটা আসলে নীতি-নিয়মের প্রশ্নে নয়। বরং, সে কেন মুসলমান হবে কেনই বা হিন্দু হবে। অবশ্যই প্রশ্নহীন নন। কিন্তু যেহেতু প্রশ্নহীন নিয়মটুকুই টিকে আছে কে কি তাতে জোর না দিলেই চলে।
নামে কি আসে যায়
তাইলে এটাকে ধর্ম নাম দিয়া বাহুল্যের দরকার কি। এই একই কাজ তো যিনি ধর্ম করেন, তিনিও করতে পারেন। আলবত করেও। অন্য নামে অন্য ইশারায়। তাইলে আপনার আর তার পার্থক্য কি। এর আরেকটা কারণ হইতে পারে আপনার বেহেশত দরকার। আপনি ধরে নিছেন এই লোভটা জায়েজ আছে। কেমনে জায়েজ আছে? আপনি তো বলেন লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
এখন আপনি বলতে পারেন- এইসব কথা উপরে উপরে ভাসা ভাসা। ধর্ম আরো গভীর জায়গা থেকে নৈতিকতাকে দেখে। হয়তো দেখে। কিন্তু সেটা কি। সমাজে ক্রিয়াশীল নৈতিকতা শেষ বিচারে কিছু নিয়ম ছাড়া কিছু না। এমন অনেক নিয়ম দেখেন আপনি না জেনে চিন্তা করে করছেন, তারপরে দেখবেন ধর্মও একই কথা বলে। কেন বলে এই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। অথবা ধর্ম কেনই বা মানুষের আকেলের জোর দেয়। এই জোর মানে এই না যে, নিয়মের জন্য একটা ধর্ম বা এমন কিছু রাখা চলে। তা আরো গভীরের বিষয়। কিন্তু ভালো-মন্দের পপুলার ডিসকোর্সে ধর্ম শুধুমাত্র কিছু নীতি দিয়া খালাস।
এখন আপনি যখন এই নীতিকেই ধর্ম মনে করেন। এর বাইরে না। দুনিয়াতে আপনি যে অফুরন্ত সম্ভাবনার মধ্যে বসবাস করেন সেখানে অফুরন্ত ঘটনা ঘটে। নৈতিকতা যদি বাইনারী আকারে কাজ করে তাহলে একবার যদি সেই চয়েজ সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ে দেখবেন, আপনি অনেক কিছুকে থোড়াই কেয়ার করতেছেন। যেখানে ধর্ম আর কাজের জিনিস না।
ঐ যে অলিম্পাসে দেবরাজ জিউসের বাস করিত [হায় দেবতারাও বাস্তুহারা হন] । সেই দেবরাজ, তার জারজ পুত্র হারকিউলিসের সাথে আজকের অলিম্পিক খেলা যুক্ত। এটা হলো মিথ-বাস্তবতার সম্পর্ক। সেই হিসেব বা ইতিহাস মাথায় রাইখা আজকাল কেউ আর অলিম্পিক খেলতে যায় না। তার কাছে নামে কি আসে যাই। তাই আপনি যদি নৈতিকতা নাম দিয়া ভালো-মন্দের নিয়ম বানাইতে চান বা ভালো হইতে চান- নানা নামে হতে পারেন এরজন্য আলাদা কোন তরিকা বা ধর্মের দোহাই না দিলেও চলে। এখানে ধর্মের নাম নিলে জগত সংসারে নৈতিকতা ধর্মকে আড়াল করে। ধর্মের পাঠ হয় খন্ডিত। আর ধর্ম চিন্তা হয় বন্ধ্যা।
এইখানে কোনমতে বলা হচ্ছে না, ধর্মের মধ্যে ভালো-মন্দের চিনিইয়া দেয়ার ততপরতা নাই। বরঙ সেই থাকাকে মেনে নিই এটা বলার সপ্রাণ চেষ্টা ভালো-মন্দ ভাগ করা বা ভালো মুসলমান-খারাপ মুসলমান তকমা দেয়া ধর্মের একমাত্র কথা না। শুধু তাই না, নৈতিকতা ভাসা-ভাসাভাবে উপরে অনেক বড় কিছু নিয়ম আকারে দেখলেই সমস্যা। ধর্মের মতো নিজের স্বভাবের ভেতর থেকে আসছে কিনা সেটাই কথা। কিন্তু সেই সুযোগ আমাদের হাতে খুব একটা থাকে বলে মনে হয় না।
অগতির গতি
দুনিয়ার ক্ষতিকারক চীজসমূহের মধ্যে ইসলামের বদনাম রাষ্ট্র হয়ে গেছে। তারপরও কেন ইসলামের নাম নিলাম । ইসলামই এই অগতির গতি তাই ধর্ম বলতে সামনে এটাই ছিলো। অন্যান্য ধর্ম যতটুকু দেখেছি। তাতেও এই কায়দা-কানুন আছে। সেইটা দেখিয়া মনে হইল ধর্মেও বাহিরের জিনিস নিয়াই আমরা মেতে আছি। অথচ এই বাহিরের জিনিসটা ভেভরের জিনিস আমল হইলে এটা আপনা-আপনিই চলে আসে। সেই ভেতরের জিনিস কি। হতে পারে প্রতিটি বস্তুর হাকিকত উপলব্দি করা [এই জিনিস আপাতত মাথায় না রাখেন, যৎকালে তৎবিবেচনা]।
> ব্যবহৃতের কার্টুন: কার্টুন রিসোর্স সাইট থেকে নেয়া।
alap chalia jan
ধন্যবাদ।
দোয়া কইরেন।